প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১৯ সেপ্টেম্বর : ডিভিসি’র ছাড়া জলে পুজোর আগে বানভাসীবাংলার বিভিন্ন জেলা।আর তাতেই বেজায় ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি এই বন্যাকে ’ম্যান মেইড বন্যা’ বলে অবিহিত করেছেন।আর তাঁরই মন্ত্রী সভার মন্ত্রী অরুপ বিশ্বাস বঙ্গে হওয়া বন্যার জন্য সরাসরি কঠগড়ায় তুললেন কেন্দ্রের সরকারকে । তা নিয়ে এখন তুঙ্গে উঠেছে শাসক-বিরোধী চাপানউতোর ।
হুগলীর আরামবাগ, পুর্ব মেদিনীপুর ,হাওড়া’র পাশাপাশি পূর্ব বর্ধমান জেলার জামালপুর ও রায়না-২ ব্লকের কয়েকটি অঞ্চল এখন কার্যত বানভাসী। বৃহস্পতিবার জামালপুর ও রায়না-২ ব্লকে বন্য পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে আসেন মন্ত্রী অরুপ বিশ্বাস।অস্থায়ী ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নেওয়া দুর্গত এলাকার মানুষজনের সঙ্গে তিনি কথা বলেন। পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে অরুপ বিশ্বাস বলেন,চিরকালই বাংলাকে বঞ্চনা করাটা কেন্দ্রীয় সরকারের অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেছে।বাংলার মানুষের উৎসবে সামিল হবার প্রাক্কালে বাংলাকে এভাবে জলে ডুবিয়ে দেওয়া হল।এটা চক্রান্ত ছাড়া আর কিছুই নয় বলে মন্ত্রী অরুপ বিশ্বাস এদিন দাবি করেন।পাশাপাশি তিনি জামালপুরের জ্যোৎশ্রীরাম অঞ্চলের অমরপুর, শিয়ালী , কোরা ও মুইদিপুর এলাকায় দামোদর এবং মুণ্ডেশ্বরী নদীর ’ড্রোজিং’ কাজ ঠিকঠাক না হওয়া নিয়েও ক্ষোভ ব্যক্ত করেন । অরুপবাবুর পাশে দাড়িয়ে তাঁর সমস্ত বক্তব্যকে সমর্থন জানান রাজ্যের অপর মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ ,জেলাপরিষদ সভাধীপতি শ্যামাপ্রসন্ন লোহার,জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় সহ জামালপুর ও রায়নার বিধায়ক অলক মাঝি এবং শম্পা ধাড়া ।
কয়েকদিনের প্রবল বর্ষণ ও তার সাথে ডিভিসি’র ছাড়া জলে জলস্ফীতি বাড়ে দামোদর ও মুণ্ডেশ্বরী নদীতে। তারফলে জালালপুর ব্লকের জ্যোৎশ্রীরাম অঞ্চলের অমরপুর ,শিয়ালী, কোরা উজিরপুর ও মুইদিপুর এলাকার বন্যা পরিস্থিতি চরম আকার নিয়েয়। একই পরিস্থিতি তৈরি হয় রায়না-২ ব্লকের বড়বৈধান গ্রাম সহ গোতান অঞ্চলের কয়েকটি গ্রামের ।বন্যা দুর্গতদের জন্য এই দুই বিধানসভার বিভিন্ন জায়গায় ত্রাণ শিবির খোলা হয় । এদিন জামালপুরের শাহহুসেনপুরের ত্রাণ শিবির এবং রায়নার সুবলদহ গ্রামের ত্রান শিবিরে আশ্রয় নেওয়া মানুষজনের সাথে কথা বলেন। তাদের ক্ষয় ক্ষতির বিষয় ছাড়াও চাষে ক্ষতি নিয়েও মন্ত্রী অরুপ বিশ্বাস খোঁজ খবর নেন ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে রাজ্যের সরকার থাকবে বলে মন্ত্রী এদিন জানিয়ে যান।
তবে মন্ত্রীর আগমনের পরেও খাবার দাবার না মেলা নিয়ে এদিনও ক্ষোভ উপরে দিয়েছেন শিয়ালী ও কোরা গ্রামের অনেক মহিলা । লক্ষ্মী বাউরি,ফুলেশ্বরী বাউরি,পার্বতি সরেন ও ফুলমনি মাণ্ডি বলেন,বন্যার জল নদী ছাপিয়ে আমাদের বাড়িতে ঢুকে পড়ে ।তার কারণে ঘরবাড়ি ছেড়ে শিশু সন্তানদের নিয়ে বুধবার আমাদের এলাকার বাঁধের উপর আশ্রয় নিতে হয় ।খুব কষ্টের মধ্যে বুধবারা সারাটা দিন ও রাত কাটাতে হয়েছে। পার্টির লোকজন সন্ধ্যার মুখে শুকনো একটু মুড়ি আর জল দিয়ে গিয়েছিল । ব্যাস ওই টুকুই । আর কেউ ফিরেও তাকায় নি । বাচ্চাদের কোন খাবার কেউ দেয় নি। শুনছি মন্ত্রিতো নাকি এদিন বলে গিয়েছে সরকার আমাদের পাশে থাকবে।সেদিকেই আমরা এখন তাকিয়ে আছি। জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন,’খরা হোক বা বন্যা ,তৃণমূল সরকার সবেতেই কেন্দ্রকে দায়ী করে । এটা নতুন কোন ঘটনা নয় । আসলে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে তৃণমূল সরকার সব ব্যাপারে কেন্দ্রের ঘাড়ে দোষ চাপায়। জনগনের হাত থেকে বাচতে এখন এই কৌশলই নিয়েছে তৃণমূলের নেতা ও মন্ত্রীরা ।’।