এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২৬ জানুয়ারী : মুসলিম অধ্যুষিত পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলা হিংসার কারনে প্রায়ই সংবাদের শিরোনামে থাকে । গত বছর লোকসভা ভোটের সময় উত্তপ্ত হয়েছিল মুর্শিদাবাদের শক্তিপুর এলাকা। পার্শ্ববর্তী বেলডাঙ্গা এলাকাতেই ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের সন্ন্যাসী স্বামী প্রদীপ্তানন্দ বা কার্তিক মহারাজের আশ্রম । হিংসার কারনে সরাসরি তাকে অভিযুক্ত করেছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি । তিনি ওই সন্ন্যাসীর বিরুদ্ধে বিজেপির হয়ে প্রচার চালানোর অভিযোগ এনেছিলেন । একারণে মুখ্যমন্ত্রীকে মানহানির আইনি চিঠি পাঠিয়েছিলেন কার্তিক মহারাজ । সন্ন্যাসীকে আক্রমণের ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গে প্রচারে এসে মুখ খুলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও । যা ঘিরে সরগরম হয়ে উঠেছিল রাজ্য রাজনীতি । সেই কার্তিক মহারাজকেই ২০২৫ সালের দেশের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান পদ্মশ্রী পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করতে চলেছে কেন্দ্র সরকার । আধ্যাত্মিকতার পাশাপাশি সমাজে তার বিশেষ অবদানের জন্য তাকে এই সম্মান দেওয়া হচ্ছে ।
কার্তিক মহারাজের জীবন কেটেছে অনেক কষ্টে । খুব অল্প বয়সেই ভারত সেবাশ্রমে যুক্ত হয়েছিলেন । ঔরঙ্গাবাদে স্বামী প্রজ্ঞানন্দ মহারাজ তার দীক্ষাগুরু । অবভাবের মাঝেও আধ্যাত্মিকতা ও পড়াশোনা সমান্তরালে চালিয়ে গেছেন কার্ত্তিক মহারাজ । পরে মুর্শিবাবাদের বেলডাঙায় চলে এসে সমাজসেবামূলক কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেন । অর্থ সংগ্রহ করে মন্দির,স্কুল থেকে শুরু করে আদিবাসীসহ দুঃস্থ মানুষদের সাহায্যার্থে একের পর এক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন । এলাকার সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের দ্বারা সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর নির্যাতনের বিরুদ্ধে কার্ত্তিক মহারাজ বারবার ঢাল হিসাবে সামনে এগিয়ে এসেছেন । এটাও অস্বীকার্য শাসকদলের যে ‘তোষামোদি নীতি’র কারনে হিন্দুদের বিজেপিকে ভোট দিতে অনুপ্রাণিত করে গেছেন তিনি ।
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর একাধিক সভাতেও দেখা গেছে তাকে । এছাড়া বাংলাদেশের হিন্দু নির্যাতনের বিরুদ্ধে রাজ্যে সবচেয়ে সরব সন্ন্যাসীর তালিকার প্রথমেই রয়েছে কার্তিক মহারাজের নাম । একারনে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের ‘বিষ নজরে’ পড়েন তিনি ।
২০২৪ সালের ১৮ মে আরামবাগে সভায় সরাসরি কার্তিক মহারাজকে সরাসরি নিশানা করেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জি । তিনি বলেছিলেন, ‘আমি ভারত সেবাশ্রমকে সম্মান করি। কিন্তু এক ব্যক্তি সন্ন্যাসী হিসেবে তৃণমূল এজেন্টদের বসতে দিচ্ছে না। তাঁর নাম কার্তিক মহারাজ। আমি এটা বরদাস্ত করব না। উনি সরাসরি বিজেপি রাজনীতি করছেন করুন, কিন্তু লুকিয়ে লুকিয়ে কেন? এলাকায় এলাকায় গিয়ে আপনি ধর্মের নামে বিজেপি করে বেড়ান।’ তার জেরে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মানহানীর মামলা করেছিলেন কার্তিক মহারাজ । এমই এক ব্যক্তিত্বকে পদ্ম পুরস্কার ২০২৫ হিসাবে বেছে নেওয়ায় রাজ্য বিধানসভার ২০২৬ সালের ভোটে বিজেপির আগাম রনকৌশল হিসাবে দেখছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস ।
উল্লেখ্য,পদ্ম পুরস্কার ২০২৫-এর প্রাপকের তালিকায় নাম রয়েছে ১১৩ জনের । তার মধ্যে ৯ জন রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ থেকে। আর তারা হলেন শিল্পকলায় অরিজিৎ সিং, মমতা শঙ্কর, গোকুলচন্দ্র দাস ও পণ্ডিত তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার । সাহিত্য ও শিক্ষায় নগেন্দ্রনাথ রায় । বাণিজ্য ও শিল্পে পবন গোয়েঙ্কা ও সজ্জন ভজঙ্ক । আধ্যাত্মিকতা ও সমাজসেবামূলক কাজে স্বামী প্রদীপ্তানন্দ (কার্তিক মহারাজ) । সামাজিক কাজে বিনায়ক লোহানি । এবারে পদ্মভূষণ পাচ্ছেন ১৯ জন,পদ্মবিভূষণ পাচ্ছেন ৭ জন ।।