শ্যামসুন্দর ঘোষ,পূর্বস্থলী(পূর্ব বর্ধমান),১৫ নভেম্বর : পবিত্র ভ্রাতৃদ্বিতীয়াকেও রাজনীতির ময়দানে টেনে আনল শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব । আজ বুধবার বিশ্বের সমস্ত হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে ভাই-বোনের পবিত্র সম্পর্ককে উদযাপন করল । সেখানে মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজনদের নিয়ে রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের ভ্রাতৃদ্বিতীয়া উদযাপন ঘিরে বিভিন্নজন বিভিন্ন প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে । অনুষ্ঠানটির নাম দেওয়া হয়েছে, ‘সম্প্রীতির ভ্রাতৃদ্বিতীয়া উৎসব’ । এখন মন্ত্রীর এই প্রকার সম্প্রতির বার্তায় অনেকের অভিযোগ যে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে মুসলিম ভোটব্যাঙ্ক ধরে রাখতে ‘তোষামদের নোংরা রাজনীতি’ শুরু করে দিয়েছে স্বপন দেবনাথের মত তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা । বিশেষ করে বিজেপি এনিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ।
আসলে পূর্বস্থলীর তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের উদ্যোগে আজ মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজনদের নিয়ে ভ্রাতৃদ্বিতীয়ার আয়োজন করা হয়েছিল । সেই ভ্রাতৃদ্বিতীয়া উদযাপনের মুহুর্তের দৃশ্য ফেসবুকে লাইভও করা হয় । জানা গেছে,অনুষ্ঠানটি হয় পূর্ব বর্ধমান জেলার পূর্বস্থলী-১ ব্লকের শ্রীরামপুরে বিডিও অফিসের খাদি ভবনে ।
ভিডিওতে সারিবদ্ধ বসে থাকা মুসলিম ব্যক্তিদের কপালে ভাইফোঁটা দিতে দেখা গেছে হিন্দু মহিলাদের । মন্ত্রী স্বপন দেবনাথকে ভাইফোঁটা দিয়ে দেখা যায় ইসলামি পোশাক পরিহিত এক মুসলিম মহিলাকে । অনেকের অভিযোগ, ভ্রাতৃদ্বিতীয়া হিন্দুদের উৎসব হলেও, স্বপন দেবনাথের এদিনের অনুষ্ঠানে ভাইফোঁটা নেওয়ার সৌভাগ্য খুব কম হিন্দুভাইদের হয়েছিল । যা ঘিরে প্রশ্ন তুলেছেন পূর্ব বর্ধমানে বিজেপির সাংগঠনিক কাটোয়া জেলার সভাপতি গোপাল চট্টোপাধ্যায় ।
তিনি এদিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, ‘পূর্বস্থলী দক্ষিণ বিধানসভার বিধায়ক স্বপন দেবনাথের সম্প্রীতির উৎসব ভাইফোঁটা দেখলাম । আমি শুধু এটুকুই বলবো,হিন্দুদের সমস্ত উৎসবই অনন্ত কাল থেকে সম্প্রতির বার্তা বহন করে চলেছে । কিন্তু এখন স্বপনবাবুরা যেটা করতে চাইছেন, হিন্দু মেয়েদের নিয়ে মুসলিম ভাইদের ফোঁটা দেওয়ালেন, কিন্তু সম্প্রতি একতরফা হয় না । তৃণমূল হিন্দুদের সম্প্রতির উৎসবকে তোষণের উৎসবে পরিনত করছে । আগেও দেখেছি যে দুর্গাপূজো প্যান্ডেলে আজান বাজিয়ে সম্প্রতির উদাহরণ দেওয়া হয়েছে । স্বপনবাবুদের মত মেকি সম্প্রতির ধ্বজাধারীদের বলব, তখনই সম্প্রতি সার্থক হবে যখন ইদের সময় মসজিদে গিয়ে স্বপনবাবু নামাজে অংশগ্রহণ করবেন । বা ইদের মসজিদ থেকে হরিনাম সংকীর্তন হবে ।’ তিনি আরও বলেন,’আমি স্বপনবাবুকে চ্যালেঞ্জ করেছি, আপনি কি পারবেন ইদের সময় মসজিদে ঢুকে সম্প্রতির বার্তা দিতে? আর তখনই আপনাদের সম্প্রতির উদ্যোগ স্বার্থক হবে । আমরাও চাই উনি এমন করে দেখান । তা না হলে ওটা ভোটব্যাঙ্কের জন্য তোষামোদ বলেই মনে করবেন মানুষ ।’
প্রসঙ্গত,২০১৯ সালে শারদোৎসবের সময় কলকাতার বেলেঘাটার ৩৩ পল্লীর পুজো মন্ডপে চন্ডীপাঠের সঙ্গে আজান, চার্চের ঘন্টাধ্বনি শোনা গিয়েছিল । পূজো উদ্যোক্তাদের এই প্রকার সম্প্রতির বার্তাকে অনেকেই সহজভাবে নেননি । হিন্দুদের পাশাপাশি মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজনও পূজো উদ্যোক্তাদের ওই প্রকার আচরণের প্রতিবাদে সরব হতে দেখা গিয়েছিল । চলতি বছরে হুগলি জেলার উত্তরপাড়ার মৌসুমি ক্লাবের প্যান্ডেলে আজান বাজানো ঘিরে অশান্ত হয়ে উঠেছিল গোটা এলাকা । শেষ পর্যন্ত পুলিশকেও হস্তক্ষেপ করতে হয় । যদিও স্থানীয় হিন্দুরা উত্তরপাড়া পুলিশের ভূমিকা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে । আর ওই সমস্ত ঘটনায় কোনো না কোনো ভাবে তৃণমূল কংগ্রেসের যোগসূত্র ছিল । ফের একবার রাজনীতিতে হিন্দুদের অন্যতম পবিত্র উৎসবকে টেনে আনায় বিতর্কে জড়ালেন রাজ্য সরকারের ক্যাবিনেটের মন্ত্রী তথা পূর্বস্থলীর তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা স্বপন দেবনাথ ।।