এইদিন ওয়েবডেস্ক,মণিপুর,০১ মে : গত বছরের ৪ মে মণিপুরের ঘটনার প্রায় দুই মাস পরে জুলাই মাসে, একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছিল । যেখানে দেখা গিয়েছিল দুই মহিলাকে পুরুষদের ভিড় ঘিরে রাখা হয়েছে এবং তাদের নগ্ন হয়ে প্যারেড করা হচ্ছে। উত্তেজিত জনতা তাদের ওপর যৌন নির্যাতনও চালায়। কুকি-জোমি সম্প্রদায়ের দুই মহিলাকে পুলিশ সদস্যরা উন্মত্ত জনতার হাতে তুলে দিয়েছিল বলে সিবিআইয়ের চার্জশিটে এই তথ্য দেওয়া হয়েছে ।
সিবিআই চার্জশিটে বলা হয়েছে যে মহিলারা মনিপুরের কাংপোকপি জেলায় পুলিশ সদস্যদের একটি সরকারী গাড়িতে (জিপসি) আশ্রয় চেয়েছিল, কিন্তু তারা উভয় মহিলাকে প্রায় ১,০০০ মেইতেই দাঙ্গাবাজের কাছে হস্তান্তর করে দেয় । এর পরে উভয় মহিলাকে বিবস্ত্র করে চারপাশে ঘোরানো হয়। রাজ্যে জাতিগত সহিংসতার মধ্যে এই ঘটনাটি ঘটে ।
সিবিআইয়ের চার্জশিটে বিশদ বিবরণ দিয়ে বলা হয়েছে,নির্যাতিত নারীদের মধ্যে একজন কার্গিল যুদ্ধে জড়িত একজন সৈনিকের স্ত্রী। কর্মকর্তারা বলেছেন যে মহিলারা পুলিশ সদস্যদের গাড়িতে করে তাদের একটি নিরাপদ স্থানে নিয়ে যেতে বলেছিল, কিন্তু পুলিশ সদস্যরা তাদের বলেছিল যে তাদের কাছে গাড়ির চাবি নেই এবং তারা কোনও সাহায্যও করেনি।
গত বছর মণিপুরে ৪ মে ঘটনার প্রায় দুই মাস পর জুলাই মাসে একটি ভিডিও ভাইরাল হয় । যেখানে দুই মহিলাকে পুরুষদের একটি ভিড় দ্বারা ঘিরে রাখা এবং নগ্ন করে প্যারেড করাতে দেখা যায়। সিবিআই গত বছরের ১৬ অক্টোবর গুয়াহাটির একটি বিশেষ সিবিআই আদালতে ছয় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে যে দুই মহিলা রাইফেল, এসএলআর, ইনসাস এবং ৩০৩ রাইফেলের মতো অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত প্রায় ৯০০-১০০০ জন লোকের ভিড় থেকে পালিয়ে যাচ্ছিল। এতে বলা হয় যে, সাইকুল থানার প্রায় ৬৮ কিলোমিটার দক্ষিণে কাংপোকপি জেলায় একদল জনতা জোরপূর্বক গ্রামে প্রবেশ করে। চার্জশিটে বলা হয়েছে, মেইতেই সম্প্রদায়ের জনতা গ্রামের বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে আক্রমণ শুরু করেছিল এবং পার্শ্ববর্তী গ্রামের কয়েকটি বাসস্থানকেও লক্ষ্যবস্তু করেছিল। তখন গ্রামের মহিলারা ভিড়ের হাত থেকে বাঁচতে জঙ্গলে দৌড়ে গেলেও দাঙ্গাকারীরা তাদের ওই দু’জনকে দেখে ফেলে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভিড়ের মধ্যে কয়েকজন দুই নারীকে সাহায্য চাইতে রাস্তার পাশে দাঁড়ানো পুলিশের সাহায্য নেওয়াএ পরামর্শ দেয় । আতঙ্কিত দুই মহিলা ছুটে গিয়ে পুলিশের গাড়িতে প্রবেশ করতে সক্ষম হন । যেখানে তখন দুজন পুলিশ সদস্য এবং চালক ইতিমধ্যেই গাড়িতে বসে ছিল। তিন-চারজন পুলিশ গাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল ।একজন ভুক্তভোগী, একজন পুরুষও গাড়ির ভিতরে ঢুকতে পেরেছিলেন এবং চালককে তাদের নিরাপদে জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন । কিন্তু বলা হয়েছিল যে গাড়ির চাবি নেই । নিপিড়িত মহিলাদের মধ্যে একজনের স্বামী ভারতীয় সেনাবাহিনীতে আসাম রেজিমেন্টের সুবেদার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সিবিআইয়ের অভিযোগ, গাড়িতে বসা ব্যক্তির বাবাকেও পুলিশ ভিড়ের আক্রমণ থেকে বাঁচাতে সাহায্য করেনি।
সিবিআই তদন্তে ছয় ব্যক্তি এবং একজন কিশোরের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযোগের মধ্যে রয়েছে গণধর্ষণ, হত্যা এবং অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র। অভিযুক্তরা হল, হুইরেম হেরোদশ মেইতেই (৩২), যাকে মণিপুর পুলিশ ২০ জুলাই গ্রেপ্তার করেছিল, অরুণ খুন্দংবাম ওরফে নানাও (৩১), মণিপুর পুলিশ তাকে ২১ জুলাই গ্রেপ্তার করেছিল, নিঙ্গোম্বাম তোম্বা সিং ওরফে টমথিন (১৮) , ২০ জুলাই মণিপুর পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে, পুখরিহংবাম সুরঞ্জয় মেইতি (২৪), মণিপুর পুলিশ ২২ জুলাই গ্রেপ্তার করেছে, ২৪ জুলাই মণিপুর পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে নামিরাকপাম কিরাম মেইতি (৩০) এবং একজন কিশোরকে ২০ জুলাই মণিপুর পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে বলে উল্লেখ করেছে সিবিআই।।