এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২০ আগস্ট : কলকাতার আরজি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তরুনী চিকিৎসককে গনধর্ষণ-খুনের ঘটনায় চরম বিপাকে পড়ে গেছে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস । হত্যাকাণ্ডের তথ্য গোপন করার অভিযোগ তো উঠছিলই, তার মাঝে হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের আমলে মাদক র্যাকেট,সেক্স র্যাকেট চালানো ও আর্থিক অনিয়মের বিস্তর অভিযোগ তোলা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে । সন্দীপ ঘোষের আমলে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম(SIT) গঠন করেছে মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের প্রশাসন । রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের তরফে সোমবার জারি করা চার পুলিশ কর্তার সমন্বয়ে সিট গঠন নিয়ে ইতিমধ্যেই সন্দীপ ঘোষকে বাঁচানোর জন্য মমতা ব্যানার্জির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে সরব হয়েছে বিজেপি ও সিপিএম । কিন্তু রাজ্যের শাসকদলের এই প্রচেষ্টায় কার্যত জল ঢেলে দিল সিবিআই ! সিবিআই আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ট্রান্সফার পোস্ট এবং একটি বেআইনি মেডিকেল সিন্ডিকেট জড়িত একটি বিশাল চক্রের হদিশ পেয়েছে বলে জানিয়েছে সংবাদপত্র কানাডা প্রভা । ফলে আরজি করে দুর্নীতি মামলায় রাজ্যের তরফ থেকে নতুন করে তদন্তের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে ।
ওই সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিবিআই আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ট্রান্সফার পোস্ট এবং একটি বেআইনি মেডিকেল সিন্ডিকেট জড়িত একটি বিশাল চক্রের উদঘাটন করেছে যেখানে ৩১ বছর বয়সী জুনিয়র ডাক্তারকে ৯ আগস্ট ধর্ষণ ও খুন করা হয়েছিল। তদন্তে জানা যায়, কেলেঙ্কারি বহু বছর ধরে চলছিল এবং তা ছড়িয়ে পড়েছিল রাজ্যের অন্যান্য সরকারি মেডিকেল কলেজেও। সিবিআই জানতে পেরেছে যে রাজ্য সরকারের কেনা কোটি টাকার ওষুধ এই অবৈধ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বেসরকারি মেডিক্যাল স্টোরগুলিতে পাঠানো হয়েছিল।
সিবিআই-এর অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলি বলছে যে নিহত নির্যাতিতা চিকিৎসক, যারা বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন, ফলস্বরূপ তাকে ধর্ষণ এবং হত্যা করা হতে পারে। তদন্তে এই কেলেঙ্কারিতে রাজ্য সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার ইঙ্গিতও মিলেছে বলেও দাবি করা হয়েছে ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,সিবিআই আরজি কর হাসপাতালের কেলেঙ্কারিতে জড়িত অন্যান্য ডাক্তার এবং ব্যক্তিদের সক্রিয়ভাবে খুঁজছে।সিবিআইয়ের এক ঊর্ধ্বতন আধিকারিক বলেছেন যে আমরা জানতে পেরেছি যে অর্থের বিনিময়ে ডাক্তারদের বদলির ব্যবস্থায় ডাক্তার এবং প্রশাসন জড়িত। গ্যাংস্টারদের এজন্য প্রায় ২০ থেকে ৩০ লক্ষ টাকা দিতে হত যাতে তারা তাদের সেই কলেজগুলিতে নিয়োগ দেয়।
এরই মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে কেন সিবিআই এই ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় এখনও কাউকে গ্রেফতার করেনি ?
আরজি কর-এর প্রাক্তন অধ্যক্ষ ডঃ সন্দীপ ঘোষকে টানা চতুর্থ দিন জেরা করল সিবিআই। জুনিয়র ডাক্তারকে ধর্ষণ ও হত্যার ন্যায়বিচারের দাবিতে চিকিৎসকদের বিক্ষোভের পর ডাক্তার ঘোষকে মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ পদ থেকে অপসারণ করা হয়। কিন্তু তার ঠিক কয়েক ঘন্টার মধ্যেই সম মর্যাদার পোস্টে নিয়োগও করা হয় । এনিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ।
সন্দীপ ঘোষকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল :
এই মৃত্যুকে আত্মহত্যা ঘোষণা করার এত তাড়া কেন?
আপনি নিজে একজন ডাক্তার। ক্রাইম সিন নিরাপদ রাখা গুরুত্বপূর্ণ মনে করেননি?
কার পরামর্শে পরিবারকে খবর দেওয়া হয়েছিল এবং কেন তথ্য লুকিয়ে যাওয়া হয়েছিল পরিবারের কাছ থেকে?
আপনি জানেন যে ক্রাইম সিনে প্রমাণ ট্যাম্পারিং অপরাধ। তা সত্ত্বেও তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কেন তা নিরাপদে রাখলেন না?
কেন কয়েক ঘণ্টা পর মৃত চিকিৎসকের পরিবারকে জানানো হল?
কেন তিনি বাবা-মাকে প্রায় তিন ঘন্টা অপেক্ষা করতে বাধ্য করেছিলেন ?
হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কী?
ঘটনার পরপরই পদত্যাগ করলেন কেন? এর পেছনের কারণ কী?
এছাড়া তরুনী ডাক্তারের মৃত্যুর খবর শুনে তিনি কার সাথে যোগাযোগ করেছিলেন ? ঘটনার পর হাসপাতালের জরুরি ভবনের সেমিনার হলের পাশের কক্ষগুলো সংস্কারের নির্দেশ কে দিয়েছিলেন, তা নিয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় সাবেক অধ্যক্ষকে।
গত তিনদিন ধরে ঘোষকে কয়েক ঘণ্টা জেরা করেছেন সিবিআই আধিকারিকরা। সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন আধিকারিকরা তার মোবাইল ফোন কল এবং তার হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট তালিকাও পরীক্ষা করে দেখছিলেন।
মামলা নিয়ে ক্রমবর্ধমান ক্ষোভের মধ্যে, সুপ্রিম কোর্ট নিজের উদ্যোগে বিষয়টি গ্রহণ করেছে এবং আজ শুনানি শুরু হয়েছে । শুনানিতে প্রধান বিচারপতি দেশ জুড়ে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন । সংবাদ সংস্থা এএনআই বলেছে,’প্রধান বিচারপতি কলকাতার ঘটনা সারাদেশে চিকিৎসকদের নিরাপত্তার প্রশ্ন তুলেছে। তিনি বলেছেন,আমরা চিকিৎসকদের নিয়ে উদ্বিগ্ন। আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন যে কলকাতার ধর্ষণের শিকারের নাম, ছবি এবং ভিডিও ক্লিপ সর্বত্র প্রকাশিত হয়েছিল। আইনে ভিকটিমদের নাম প্রকাশ করা নিষিদ্ধ। এইভাবে কি আমরা হারানো তরুণ ডাক্তারকে মর্যাদা দিতে পারি? তার জীবন?’ আরজি করের তরুনী চিকিৎসককে ধর্ষণ হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করায় কলেজের অধ্যক্ষের ভূমিকা এবং বাবা-মাকে মেয়ের লাশ দেখতে বিলম্ব করার জন্য প্রশ্ন তুলেছে সুপ্রিম কোর্ট ।।