এইদিন ওয়েবডেস্ক,বরিশাল,,২৫ নভেম্বর : প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পলায়নের পর বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর সংখ্যাগুরু মুসলিমদের নিপিড়নের মাত্রা প্রচুর বেড়ে গেছে । ডাক উঠছে জাতপাতের বিভেদ ভুলে হিন্দুদের একত্রিত হওয়ার । কিন্তু একত্রিত হওয়া তো দুরের কথা, সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের দ্বারা প্রতিনিয়ত অত্যাচারিত হয়েও নিম্নবর্ণের হিন্দুদের প্রতি পূর্বের ন্যায় ঘৃণার মানসিকতা বজায় রেখেছে বাংলাদেশের উচ্চবর্গের হিন্দুরা ।
বরিশাল জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলায় ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের এক যুবক নমঃশূদ্র সম্প্রদায়ের মেয়েকে বিয়ে করার অপরাধে মৃত মায়ের সৎকারে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের লোকজনের বিরুদ্ধে । মৃত্যুর ২৪ ঘণ্টা পরেও মায়ের দেহ দাহ সম্পন্ন করতে পারেননি ওই যুবক । এই ঘটনায় ফের একবার ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের কদর্য মানসিকতা প্রকাশ্যে এল ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আগৈলঝাড়া উপজেলার বাকাল ইউনিয়নের বাকাল গ্রামের ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের দুলাল চক্রবর্তীর ছেলে সাগর চক্রবর্তী প্রায় ১০ বছর আগে ভালোবেসে বিয়ে করেন একই উপজেলার কোদালধোয়া গ্রামের নমঃশূদ্র সম্প্রদায়ের বিমল হালদারের মেয়ে টুম্পা হালদারকে। কথিত উচ্চবংশ ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের ছেলে হয়ে নমঃশূদ্র সম্প্রদায়ের এক মেয়েকে বিয়ে করার অপরাধে সাগর চক্রবর্তীর পরিবারকে কার্যত একঘরে করে রাখে স্থানীয় ব্রাহ্মণ পরিবারগুলি ।
জানা গেছে,বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে সাগর চক্রবর্তীর মা অলোকা চক্রবর্তী রোগে ভুগে মারা যান। কিন্তু স্থানীয় ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের লোকজন মৃতদেহ সৎকারে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি । এমনকি সাগরের নিজের কাকা-জ্যাঠারা পর্যন্ত এগিয়ে আসেনি । এদিকে এই ঘটনার কথা জানতে পেয়ে নমঃশূদ্র সম্প্রদায়ের লোকজন মৃতদেহের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করতে এগিয়ে গেলেও তাদের অনুমতি দেয়নি ব্রাহ্মণরা । ফলে বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত ওই মহিলার মৃতদেহ আগলে বসে থাকে পরিবার ।
এই বিষয়ে মৃতার মেয়ে দীপাঞ্জলী চক্রবতী, পর্না চক্রবর্তী ও ছেলে সাগর চক্রবতী বলেন, ‘আমার মায়ের মৃত্যুর পর বাড়ির প্রতিটি ঘরে গিয়ে মায়ের মৃত সংবাদ জানিয়েছি। বাড়ির দুই-একজন দেখতে এলেও চলে যাওয়ার পর আর কেউ আসেনি।’ স্থানীয় বাসিন্দা অশোক বল্লভ, আকাশ রায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘বর্তমান যুগে বর্ণাপ্রথা একটি কুসংস্কার হলেও সাগরের মায়ের মৃত্যর সংবাদ শুনে মৃতদেহ সৎকারের জন্য এগিয়ে এলেও নমঃশূদ্র সম্প্রদায়ের লোক হওয়ায় আমাদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করতে অনুমতি দেয়নি ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের লোকজন।’
অন্যদিকে স্থানীয় ব্রাহ্মণ পরিবারের সদস্য পংকজ চক্রবর্তীর স্ত্রী শুক্লা চক্রবর্তী বলেন, ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের ছেলে হয়ে একই ধর্মের নিম্নবংশ নমঃশূদ্র সম্প্রদায়ের এক মেয়েকে বিয়ে করায় ধর্মীয় রীতিনীতির কারণে আমাদের কেউ সৎকারে যাইনি।’ যদিও
ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের কোনো পুরোহিত কথা বলতে রাজি না হওয়ায় কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। ব্রাহ্মণ সম্প্রদায় সমিতির সভাপতি পরিমল চক্রবর্তী দেশের বাইরে থাকায় তার ছেলে মুঠোফোনে বলেন,’ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের ছেলে হয়ে একই ধর্মের নিম্নবংশ নমঃশূদ্র সম্প্রদায়ের এক মেয়েকে বিয়ে করায় ধর্মীয় রীতিনীতির কারণে আমরা মৃতদেহ সৎকারে যাইনি ।’ এদিকে বরিশাল জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার কোদালধোয়া গ্রামের বাসিন্দা ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের এই প্রকার কদর্য ও বিভেদকামী মানসিকতার তীব্র সমালোচনা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ।।