এইদিন ওয়েবডেস্ক,দামেস্ক,২৮ জুলাই : সিরিয়ার দামেস্কের (Damascus) দক্ষিণে শিয়া সম্প্রদায়ের জনপ্রিয় মসজিদ সায়েদা জেইনাব(Sayeda Zeinab) মাজারের কাছে বৃহস্পতিবার বোমা বিস্ফোরণে ৬ জন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে । নবী মোহাম্মদের নাতনি এবং শিয়া ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম আলীর কন্যা সাইদা জিনাবের মাজার থেকে প্রায় ৬০০ মিটার দূরে একটি নিরাপত্তা ভবনের কাছে এই বিস্ফোরণ হয়।
বিস্ফোরণটি আশুরার (Ashura) বার্ষিক স্মরণের আগে ঘটেছিল । সপ্তম শতাব্দীর যুদ্ধে নবী মোহাম্মদের নাতি ইমাম হুসেনের মৃত্যু আশুরার মধ্য দিয়ে স্মরণ করে শিয়া সম্প্রদায়ের মানুষ ।
সিরিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হতাহতের সংখ্যা নিশ্চিত করে জানিয়েছে,বিস্ফোরণে অন্তত ৬ জনের মৃত্যু এবং ২০ জনেরও বেশি লোক আহত হয়েছে । বিস্ফোরণটিকে সুন্নি সন্ত্রাসবাদীদের দ্বারা সংগঠিত হয়েছে এবং একটি চারচাকা গাড়ির কাছে একটি মোটরসাইকেল এই বিস্ফোরণটি ঘটে বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় । আহতদের নিকটবর্তী আল-সদর হাসপাতালে (Al-Sadr hospital) চিকিৎসা চলছে । স্বাস্থ্যমন্ত্রী হাসান আল-ঘোবাশ ( Hassan al- Ghobash) হাসপাতালে আহতদের দেখতে যান । সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সানা (SANA) জানিয়েছে,অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের দ্বারা একটি ট্যাক্সিতে রাখা বোমা” দ্বারা বিস্ফোরণ ঘটে ।
উল্লেখ্য, আশুরা ইসলামিক মহররম মাসের দশম দিনে পালিত হয় । আধুনিক ইরাকের কারবালার যুদ্ধে ইমাম হুসাইনকে হত্যার স্মরণে এটি পালন করে শিয়ারা । বিশ্বের শিয়া মুসলমানরা হোসেনের মৃত্যুকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রামের প্রতীক হিসেবে দেখে । সিরিয়া কর্তৃপক্ষ শিয়া ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ১০ দিনের আশুরা স্মরণের জন্য সমাধির চারপাশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোর করেছিল । যে কারনে সমাধিস্থলের অভ্যন্তরে বিস্ফোরণ ঘটাতে পারেনি সন্ত্রাসীরা । এর আগে মঙ্গলবার একই এলাকায় একটি গাড়িতে একটি বিস্ফোরণে ২ জন নাগরিক আহত হয় । শুধুমাত্র সিরিয়ায় নয়, প্রতিবেশী ইরাকেও ইসলামিক স্টেট গ্রুপ (আইএস) এর সুন্নি মুসলিম চরমপন্থীদের আক্রমণের প্রায়ই লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে শিয়া মাজারগুলি৷ বৃহস্পতিবার দামেস্কে হামলার দায় স্বীকার করেনি কেউ ।
প্রসঙ্গত,সিরিয়ায় ২০১১ সালে গৃহযুদ্ধের সময় সৈয়দা জিনাবের মাজারটি বেশ কয়েকটি মারাত্মক বোমা হামলার শিকার হয়েছিল । তারপর ইরানী শৈলীতে ফিরোজা সিরামিক এবং সোনার গম্বুজ সহ মসজিদের নবনির্মান হয় । কমপ্লেক্সটি শিয়া মিলিশিয়ান, বেশিরভাগ লেবানিজ এবং ইরাকি এবং সেইসাথে সেনাবাহিনী দ্বারা সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে । যেকারণে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে সন্ত্রাসী আক্রমণ কিছুটা হলেও হ্রাস পেয়েছে ।
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সমাধি থেকে ৪০০ মিটার দূরে একটি জোড়া আত্মঘাতী হামলা হয় । যাতে ৯০ জনেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক সহ ১৩৪ জন নিহত হয়েছিল । ইসলামি স্টেট ওই বিস্ফোরণটি ঘটিয়েছিল । গোষ্ঠীটি কয়েক সপ্তাহ আগে অভয়ারণ্যের কাছে একটি ট্রিপল বিস্ফোরণ ঘটায়,যাতে কমপক্ষে ৭০ জনের প্রাণহানী হয় । সিরিয়ার যুদ্ধে অর্ধ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ মারা গেছে এবং লক্ষ লক্ষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এটি প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের (Bashar al-Assad)শাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীদের নিষ্ঠুর দমন-পীড়নের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল । পরে এটি জিহাদি এবং বিদেশী সন্ত্রাসী সংগঠনগুলির সাথে জড়িত একটি জটিল সংঘাতে পরিণত হয় ।।