এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১৮ আগস্ট : কলকাতার আরজি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তরুনী চিকিৎসকের গনধর্ষণ ও নৃশংস বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে সন্তুষ্ট মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি কলকাতা পুলিশকে দরাজ সার্টিফিকেট দিয়েছিলেন । কলকাতা পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলও একাধিক বার সাংবাদিক সম্মেলনে নিজের ‘সততা’ প্রমাণ করতে মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন । কিন্তু সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে কলকাতা হাইকোর্ট পর্যন্ত বিনীত গোয়েলের এই কথার উপর আস্থা রাখতে পারছেন না । কলকাতা পুলিশের বিরুদ্ধে বারবার উঠছে প্রমান লোপাটের অভিযোগ । এবারে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী তোলপাড় ফেলে দেওয়া অভিযোগ তুললেন কলকাতা পুলিশের বিরুদ্ধে । তার অভিযোগ যে মৃত মহিলা চিকিৎসকের ভিসেরা ও রক্তের দাগযুক্ত নমুনার পরিবর্তন করেছে কলকাতা পুলিশ ।
শনিবার সন্ধ্যা ৭:৩০ নাগাদ তিনি টুইট করেছেন,আমার বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে যে তথ্যগুলো আমি সংগ্রহ করেছি তা সিবিআই সদর দফতরের তদন্তের উদ্দেশ্যে যুক্তিযুক্ত হতে পারে:-
১. কলকাতা পুলিশ তদন্তের নামে মৃত ডাক্তারের ভিসেরা পরিবর্তন করেছে ।
২. এই জঘন্য অপরাধে এবং সংঘটনের জায়গায় বেশ কিছু সংখ্যক ব্যক্তির জড়িত থাকার বিষয়টি উড়িয়ে দেওয়া যায় না ।
৩. রক্তের দাগযুক্ত আইটেম/বস্তুগুলি পরবর্তীকালে পরিবর্তন করা হয়েছে এবং কলকাতা পুলিশের বাজেয়াপ্ত করা ওই বস্তুগুলি প্রকৃত আইটেম/বস্তু নয় যা ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে ভালভাবে নিশ্চিত করা যায় ।
৪ ওয়াশ বেসিন একটি নতুন বেসিন দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছে ।
৫. প্রাঙ্গণের অন্য কোনায় ভিকটিম ডাক্তারকে খুন করার পর লাশ আরজি কর মেডিকেল কলেজের সেমিনার হলে স্থানান্তর করা হয় ।
আমি আশা করি এবং বিশ্বাস করি যে তদন্তের সময় সিবিআই এই কোণগুলিও অন্বেষণ করবে কারণ এই সমস্যাটি বন্ধ করার জন্য বেপরোয়া তদন্ত সরাসরি পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল এবং কলকাতার পুলিশ কমিশনারের নির্দেশে পরিচালিত হয়েছিল ।
এদিকে জানা যাচ্ছে যে খুন হওয়ার রাতেও ৩৬ ঘণ্টা টানা রোগীদের পরিষেবা দিয়েছিলেন ওই মহিলা চিকিৎসক। নিহত ছাত্রীর বাবা-মা তাদের মেয়ের ওপর অতিরিক্ত কাজের চাপের অভিযোগ তুলেছেন। সেই সাথে শুভেন্দু অধিকারীর মতই মৃতার বাবাও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন,যে ঘর থেকে তার মেয়ের দেহ উদ্ধার হয়েছে সেইখানে হয়তো তাকে মারাই হয়নি, অন্য কোনও ঘরে মেরে তারপর ওই ঘরে তার মেয়ের মৃতদেহ ফেলে রাখা হয়েছিল । তার সন্দেহ, পুরো ডিপার্টমেন্ট এর জন্য দায়ী। অনেক বড় চক্র এর সঙ্গে জড়িত। নির্যাতিতার বাবা আরও গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন, ‘মেয়ে সিনিয়র ডাক্তারদের থেকে পর্যাপ্ত সহযোগিতা পেত না, যা তার পেশাগত জীবনে সমস্যা সৃষ্টি করেছিল। পাঁচজনের ডিউটিতে চারজন পুরুষের সঙ্গে তার মেয়েকে একা রাখা হত, যা তার জন্য অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
এর আগে মৃতা চিকিৎসকের মা জানিয়েছিলেন,ঘটনার দিন প্রথমে তাঁদের কাছে ফোন আসে মেয়ে অসুস্থ বলে। বারবার তিনি জানতে চান, কী হয়েছে তার মেয়ের । উল্টোদিকের কণ্ঠ বলে ওঠে, আমি কী করে জানব, আমি কি ডাক্তার নাকি! তড়ঘড়ি উৎকণ্ঠা নিয়ে গাড়ি নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা দেন তাঁরা। তারই মাঝে আবার ফোন। এবার রাত্রি ১০ টা ৫৩ নাগাদ অ্যাসিসট্যান্ট সুপার ফোন করে বলেন ‘আপনাদের মেয়ে সুইসাইড করেছে’। হাসপাতালে পৌঁছে আকুল হয়ে বসেছিলেন, মেয়েটার মুখ দেখার জন্য। কিন্তু সেখানে বসেই কেটে যায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। বলা হয়, বসুন তদন্ত চলছে। মেয়ে আর নেই, জেনেও বুকে পাথর রেখে অপেক্ষাই করে যেতে হয় তাঁদের । কিন্তু হাসপাতালের কোনো আধিকারিক তাদের সাথে দেখা করতে আসেনি ।।