সাহস এবং তৃণমূল পর্যায়ের সেবার স্বীকৃতিস্বরূপ, কেরালার কান্নুর জেলার একজন প্রবীণ শিক্ষাবিদ এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) কর্মী সি. সদানন্দন মাস্টারকে (C Sadanandan Master) রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু রাজ্যসভায় মনোনীত করেছেন। যিনি ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) ভেতরে একজন “জীবন্ত শহীদ” হিসেবে পরিচিত, মাস্টারের জীবন সামাজিক উন্নয়ন এবং শিক্ষার প্রতি অটল প্রতিশ্রুতির প্রমাণ । তিনি ১৯৯৪ সালে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) বা সিপিআই(এম)-এর হার্মাদবাহিনীর দ্বারা একটি নৃশংস আক্রমণ থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন । মাত্র ৩০ বছর বয়সে, সদানন্দনকে ১৯৯৪ সালের ২৫ জানুয়ারী, সিপিআই(এম) কর্মীরা অতর্কিত আক্রমণ করে । এক ভয়াবহ নৃশংস আক্রমণে, তার উভয় পা হাঁটুর নিচে থেকে কেটে ফেলা হয় । তাঁকে রাজ্যসভার সাংসদ ঘোষণার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এক্স-এ পোস্ট করেছেন, ‘শ্রী সি. সদানন্দন মাস্টারের জীবন সাহস এবং অন্যায়ের কাছে মাথা নত করতে অস্বীকৃতির প্রতীক। সহিংসতা এবং ভয় দেখানো জাতীয় উন্নয়নের প্রতি তাঁর মনোবলকে দমন করতে পারেনি। একজন শিক্ষক এবং সমাজকর্মী হিসেবে তাঁর প্রচেষ্টাও প্রশংসনীয়। যুব ক্ষমতায়নের প্রতি তিনি অত্যন্ত আগ্রহী। রাষ্ট্রপতিজি কর্তৃক রাজ্যসভায় মনোনীত হওয়ার জন্য তাঁকে অভিনন্দন । সাংসদ হিসেবে তাঁর ভূমিকার জন্য শুভেচ্ছা ।’ সদানন্দন মাস্টারকে গত সপ্তাহে কেরালা বিজেপির রাজ্য সহ-সভাপতিদের একজন নিযুক্ত করা হয়েছে ।
কেরালার কান্নুর জেলার মাত্তান্নুরের কাছে একটা গ্রাম পেরিঞ্চেরিতে জন্ম সি. সদানন্দন মাস্টারের । তার গ্রাম পেরিঞ্চেরি ছিল সিপিআই(এম)-এর শক্ত ঘাঁটি। কমিউনিস্ট সমর্থক পরিবার থেকে উঠে আসা . সদানন্দন মাস্টার ছাত্র জীবনেই আরএসএস- এর ছাত্র শাখা অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি) এর মাধ্যমে সংঘে প্রবেশ করেন । ১৯৮৪ সালে, তিনি আরএসএস-এ যোগ দেন এবং কিছু সময়ের জন্য এর্নাকুলামে আরএসএস বৌদ্ধিক প্রধান হিসেবে কাজ করেন, সংঘের বৌদ্ধিক কার্যকলাপ এবং ক্যাডারদের আদর্শিক প্রশিক্ষণের কাজ করতেন তিনি ।
কিন্তু কমিউনিস্ট পরিবারের সদস্য হয়েও হিন্দুত্ববাদী একটা দলে যোগ দেওয়াকে স্বাভাবিক ভাবে নেয়নি গোঁড়া সিপিএম । ১৯৯৪ সালের ২৫শে জানুয়ারী রাত ৮.৩০ মিনিটে মাত্তান্নুরের কাছে উরুভাচলের একটি বাস থেকে নেমে সদানন্দন মাস্টার যখন তার বাড়ির দিকে হেঁটে যাচ্ছিলেন, তখন সিপিএমের হার্মাদ বাহিনো তার উপর আক্রমণ করে। সেই সময় তিনি কান্নুর জেলায় আরএসএসের সহকার্যবহ হিসেবে কর্মরত ছিলেন । সেই ঘটনার কথা স্মরণ করে সদানন্দন পরে বলেন, “একটি দল হঠাৎ করেই ভয় তৈরি করার জন্য বোমা ছুঁড়তে শুরু করে এবং লোকজন দৌড়ে তাদের দোকান বন্ধ করে দেয়। দলটি পেছন থেকে আমার কাছে এসে আমাকে ধরে ফেলে। তারা আমাকে রাস্তায় শুইয়ে দেয়, তারপর আমার দুই পা হাঁটুর নীচে কেটে ফেলে দেয়। পুলিশ এসে আমাকে হাসপাতালে না নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত কেউ আমাকে সাহায্য করতে সাহস করেনি।”
কয়েক মাস হাসপাতালে থাকার পর, সদানন্দন,উভয় পায়ের কৃত্রিম পা লাগিয়ে নিজের স্কুলে ফিরে আসেন । কিন্তু দেখেন সিপিএমের আতঙ্কে পড়ুয়ারা স্কুলে আসা বন্ধ করে দিয়েছে । এরপর বিজেপি তাকে পুনর্বাসনের দায়িত্ব নেয় এবং তাকে বিজেপির মুখপত্র জন্মভূমিতে উপ-সম্পাদক নিযুক্ত করা হয়। ১৯৯৯ সালে, সদানন্দন ত্রিশুরের সংঘ পরিচালিত একটি স্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।
সদানন্দন মাস্টারকে রাজ্যসভার সাংসদ মনোনিত করার পর পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি বিধায়ক ডঃ শঙ্কর ঘোষ একটি বড়সড় পোস্ট করেছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে৷ তিনি লিখেছেন,’কেরলে RSS – এ যুক্ত থাকার জন্য দুই পা কাটা হল .তারপর বালিতে ঘষে সকল শিরা উপশিরা গুলোকে অকেজো করে দেওয়া হলো.রক্ত পিপাসু কেরলের কমিউনিস্ট শাসনে.
আজ সেই সর্বজন শ্রদ্ধেয় সদানন্দ মাস্টার মশাই
রাজ্যসভার সাংসদ হিসেবে মনোনীত হলেন.
২০১৭ সালে ABVP’র ডাকে “কেরল চলো” অভিযানে সরাসরি সামনে থেকে এই মহান মানুষটির বক্তব্য শোনার সৌভাগ্য হয়েছিল ।
রাজ্যসভায় মনোনীত হলেন কেরলের সদানন্দ মাস্টার এবং অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। সদানন্দ মাস্টারের রাজ্যসভায় মনোনয়ন এক অনুপ্রেরণামূলক সিদ্ধান্ত।
আরএসএস করার কারণে, সিপিএম-এর দুষ্কৃতীদের এক ভয়ঙ্কর প্রাণঘাতী হামলায় তিনি দুই পা হারান। এরপরেও থেমে যাননি তিনি।রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের কাজে নিজেকে আরও বেশি নিবেদিত করেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংঘের কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাঁর এই সংগ্রামের সম্মান তিনি পেলেন রাজ্যসভার মনোনয়নের মাধ্যমে। ১৯৯৫ সালের ২৫ জানুয়ারি, সদানন্দ মাস্টারের বয়স তখন মাত্র ৩০ বছর। সেই সময়ে তিনি কমিউনিস্ট মতাদর্শ ত্যাগ করে যোগ দেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘে। ঠিক এই কারণেই সিপিএমের সন্ত্রাসীরা তাঁর উপর প্রাণঘাতী হামলা চালায়। ভয়াবহ সেই হামলায় তাঁর দুটি পা কেটে ফেলা হয়।
পরবর্তীকালে তিনি কৃত্রিম পায়ে হাঁটতে শেখেন। এই ঘটনার পর থেকে তিনি আরও দৃঢ়ভাবে যুক্ত হয়ে পড়েন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের সঙ্গে। ২০১৬ সালে, সিপিএমের প্রবল সন্ত্রাস উপেক্ষা করেই তিনি কেরালার কুথুপারাম্বা থেকে বিজেপির প্রতীকে প্রার্থী হন। চরম রাজনৈতিক হিংসার পরিবেশে তিনি সমগ্র নির্বাচনী এলাকা জুড়ে প্রচার চালান। কেরলে কমিউনিস্টদের রাজনৈতিক সন্ত্রাস নতুন কিছু নয়। প্রায়ই আরএসএস-এর কার্যকর্তাদের উপর হামলা হয়, চলে হত্যা ও হিংসার রাজনীতি। এই হিংসার শিকার হওয়া আরএসএস সদস্যদের পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন সদানন্দ মাস্টার। তাঁর ব্যক্তিগত জীবন আজ একটি প্রেরণার প্রতীক। তিনি প্রমাণ করেছেন, রাজনৈতিক হিংসার মুখেও আদর্শে অবিচল থাকা যায়।’
হামলার পরেও, সদানন্দন সংঘ পরিবারে সক্রিয় ছিলেন। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে, যখন বিজেপি “সিপিআইএম-স্পন্সরিত” হিংসাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু করে তোলে । তারা সদানন্দনকে কুথুপারাম্বা বিধানসভা কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করে, যেখানে ১৯৯০-এর দশকে কান্নুরে কিছু নৃশংস রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল। তিনি সিপিআই(এম) এর কে কে শৈলজা এবং জেডি(ইউ) প্রার্থী কেপি মোহননের পরে ২০,০০০ এরও বেশি ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থান অর্জন করেন । সদানন্দন ২০২০ সালে ত্রিশুরের পেরামঙ্গলমের একটি স্কুল থেকে শিক্ষক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন এবং সাম্প্রতিক বছরগুলিতে আরএসএসের একটি বুদ্ধিজীবী শাখা ভারতীয় চিন্তা কেন্দ্রমের সাথে সক্রিয় ছিলেন এবং মিডিয়াতে কলাম লেখেন।
রাজ্যসভায় সদানন্দনের নিয়োগ এমন এক সময়ে এলো যখন বিজেপি আগামী বছরের বিধানসভা নির্বাচনে সাফল্যের আশায় কেরালায় নতুন করে সংগঠন জোরদার করার চেষ্টা করছে। গত বছর, দলটি প্রথমবারের মতো কেরালায় একটি লোকসভা আসন জিতেছে – সুরেশ গোপী ত্রিশুর জিতেছেন – এবং নতুন রাজ্য সভাপতি, প্রাক্তন রাজীব চন্দ্রশেখরকে নিযুক্ত করেছে । দলের স্বল্পমেয়াদী লক্ষ্য হবে আসন্ন স্থানীয় সংস্থা নির্বাচনে ভালো ফলাফল করা, অন্যদিকে এর দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য হল কেরালার দ্বি-মুখী নির্বাচনী দৃশ্যপটে হিন্দু ও খ্রিস্টান ভোট একত্রিত করে এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষী, শিক্ষিত তরুণদের কাছে পৌঁছানোর মাধ্যমে একটি বিকল্প শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হওয়া ।।