এইদিন ওয়েবডেস্ক,ভাতার(পূর্ব বর্ধমান),১৭ মার্চ : পুকুর নিয়ে বিবাদের জেরে পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতার থানার সামনে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরালেন ব্যবসায়ী ৷ পুলিশের নজরে পড়লে ছুটে এসে আগুন নিভিয়ে সুশান্ত দত্ত নামে ওই ব্যবসায়ীকে তড়িঘড়ি বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে । তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে । ঘটনাকে ঘিরে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায় ।
প্রসঙ্গত,ভাতার ব্লকের কুলচন্ডা মৌজার (জেএল নম্বর ০৬৫) অন্তর্গত ৯৯৩ দাগে ১.৭৩ একর জলকর বিশিষ্ট সন্তোষসায়ের নামে একটা পুকুর নিয়ে ভাতার বাজারের বাসিন্দা জনৈক সুশান্ত দত্তর সঙ্গে একাংশের বাসিন্দাদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিবাদ চলছে । পুকুর পাড়ের বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের একাংশের দাবি যে পুকুরটি এক নম্বর খতিয়ানের অন্তর্ভুক্ত । যদিও সুশান্তবাবুর দাবি যে তিনি ওই পুকুরটি নিজের ও তার স্ত্রী সঙ্ঘমিত্রা দত্তর নামে বর্ধমান নিবাসী মৃত অমর তা-এর মৃত মা শিবসুন্দরী তায়ের কাছ থেকে তারা জীবিত থাকার সময় কিনেছেন । বিষয়টি কলকাতা হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়ায় ।
জানা গেছে, পুকুরটিতে মাছ চাষও করেন সুশান্ত দত্ত । কিন্তু তার কয়েক বছর পরেই পুকুরে মাছ ধরতে তাকে বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ । এদিকে দীর্ঘদিন ধরে পুকুরে জল কমে যাওয়ায় ও কচুরি পানা জমে অক্সিজেনের অভাবে একের পর এক ৫-৮ কেজি ওজনের মাছ মরতে থাকলে ফের আদালতের দ্বারস্থ হন সুশান্তবাবু । আদালত থেকে পুকুর সংস্কারের জন্য পূর্ব বর্ধমান জেলা শাসককে নির্দেশ দেওয়া হলেও অকারন বিলম্ব করা হয় বলে অভিযোগ করেছিলেন তিনি । তারই মাঝে পঞ্চায়েত সমিতি থেকে ২০২৪ সালের অক্টোবরে ওই বিতর্কিত পুকুরটি লিজ দেওয়ার জন্য দরপত্র আহ্বান করা হলে নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল । যদিও ভাতার বিডিও-এর স্বাক্ষরিত নোটিশে পুকুরের দাগ নম্বর ভুল করে ৯৯২ লেখা হয়েছিল । সুশান্ত দত্ত ভাতার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি রূপালি সাহার কাছে ২০ লক্ষ টাকার ক্ষতিপূরণ চেয়ে উকিলের চিঠি পাঠান । তিনি ভাতার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি রূপালি বাগ ও বিডিও-এর বিরুদ্ধে আদালত অবমানার অভিযোগও তোলেন । তিনি তখন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ও বিডিও-এর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করেন ।
জানা গেছে,সম্প্রতি জেলা শাসকের উদ্যোগে পুকুরটির সংস্কারের কাজ করা হয় । এমনকি পুকুরের উত্তর ও দক্ষিণ পাড়ে দুটি নোটিশও টাঙানো হয়েছে৷ যেখানে পুকুর পাড়ে ময়লা না ফেলার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । পাশাপাশি ড্রোন ক্যামেরার সাহায্যে ২ দিন জরিপও করা হয়েছিল বলে জানা গেছে ।

সূত্রের খবর,গত ২৭ ফেব্রুয়ারী উভয়পক্ষকে নিজের অফিসে নোটিশ করে ডাকেন জেলা শাসক । ফের ১১ মার্চ দু’পক্ষকে নিয়ে আলোচনায় বসেন তিনি । জেলা শাসক প্রথম অভিযোগকারী ভবানী প্রসাদ ভট্টাচার্যকে জরিমানা করেন এবং তার অভিযোগটি খারিজ করে দেন । আজ ভাতার বিএলআরও প্রদীপ মণ্ডল ফোনে জানান যে ওই পুকুরটি এক নম্বর খতিয়ানের অন্তর্গত । যদিও সুশান্তবাবুর পরিবারের দাবি যে তারা বিতর্ক চলাকালীন আরটিআই করেছিলেন এবং সেখানে পুকুরটিকে মালিকানাধীন বলে উল্লেখ আছে ।
জানা গেছে,ভাতার বাজারে বর্ধমান-কাটোয়া রাজ্য সড়কের পাশে বাড়ি সুশান্ত দত্তর । বাড়ি সংলগ্ন “দত্ত হোটেল” নামে তার একটি খাওয়ার হোটেল রয়েছে তার । প্রতিদিনের মত আজ সোমবার বিকেলে তিনি হোটেলের সামনে চেয়ারে বসেছিলেন তিনি । তারপর বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ হঠাৎ তিনি জামা পড়ে হন্তদন্ত হয়ে কোথাও বেড়িয়ে যান । তার কিছুক্ষণের মধ্যেই ভাতার থানা থেকে পরিবারকে ফোন করে জানানো হয় যে সুশান্তবাবু গায়ে কেরোসিন ঢেলে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন এবং তাকে বর্ধমান হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে,পুকুরের বিবাদ নিয়ে মামলা লড়তে গিয়ে কয়েক লক্ষ টাকা বেরিয়ে যায় সুশান্ত দত্তর । পাশাপাশি পুকুরের লক্ষাধিক টাকার মাছ তুলতে না পারায় তাকে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়তে হয় । ফলে বেশ কিছুদিন ধরে তিনি প্রচন্ড চাপের মধ্যে ছিলেন । সেই চাপ সহ্য করতে না পেরেই তিনি আজ এই প্রকার একটা ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছেন বলে দাবি করেছেন পরিবারের লোকজন ।।