প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২২ এপ্রিল : ’আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না, বাংলায় শান্তি বজায় রাখুন।’ মুর্শিদাবাদে হিংসাত্বক ঘটনার পর এই বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরেও বেপরোয়া শাসক দলের নেতারা।তারই ভয়ঙ্করতা এবার দেখলো বাংলার পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষের বাসিন্দারা।গভীর রাতে পাঁচিল টপকে বাড়িতে ঢুকে এক ব্যবসায়ীকে ব্যাপক মারধর করে জখম করার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল নেতা ও তাঁর দলবলের বিরুদ্ধে। রেহাই পায়নি ব্যবসায়ীর স্ত্রী । ঘটনার বিহিত চেয়ে জেলার পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ হয়েছেন আক্রান্ত ব্যবসায়ী। পরে তিনি খণ্ডঘোষ থানাতেও এফআইআর রুজু করেছেন।এহেন ঘটনা জানতে পেরেই তৃণমূলকে বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছে বিরোধীরা রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব।
আক্রান্ত ব্যবসায়ীর নাম সুবীর মণ্ডল। খণ্ডঘোষের
বেরুগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত সুলতানপুর গ্রামে তাঁর বাড়ি। তিনি পেশায় ব্যবসায়ী।গত ১৭ এপ্রিল সুবীর মণ্ডল জেলার পুলিশ সুপারের দফতরে লিখিত অভিযোগ পত্র জমা করেছেন। তাঁর আনা অভিযোগ বেশ ভয়ংকর।পুলিশ সুপারকে সুবীর মণ্ডল জানিয়েছেন,’গত ১১এপ্রিল রাত ১০টা নাগাদ সেখ সাহাদ আলি ওরফে লকাই এর নেতৃত্বে ১২-১৩ জন তাঁর বাড়ির সামনে জড়ো হয় । তাদের মধ্যে মিলন মালিক ও সাবির মিদ্দে পাঁচিল টপকে প্রথমে তাঁর বাড়ির ভিতরে ঢুকে বাড়ির মূল দরজা খুলে দেয়।এর পর লকাই এর নেতৃত্বে সাবির মিদ্দে,মিলন মালিক, অরুপ সিং, সেখ আনিসুল,আসগর মিদ্দে সহ আরো ৫-৭ জন লাঠি হাতে তাঁর বাড়িতে ঢুকে পড়ে।
সুবীর মণ্ডলের অভিযোগ,’বাঁশ ও লাঠি হাতে নিয়ে
তাঁর বাড়িতে ঢুকে পড়ার পর লকাই ও তার দলবল সোজা তাঁর ঘরে ঢুকে পড়ে।নির্মম ভাবে মারতে মারতে তারা তাঁকে ঘর থেকে বাইরে বের করে আনে ।তার পর প্রাণে মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে তারা বাঁশ ও লাঠি দিয়ে তাঁর মাথা সহ গোটা শরীরের বিভিন্ন অংশে এলোপাথাড়ি মারতে থাকে। সেই মারধোরে রক্তাত হয়ে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে জ্ঞান হারান।ওই অবস্থার মধ্যেই তাঁর হাতের আঙুলে থাকা ২ টি সোনার আংটি হামলাকারী মিলন মালিক খুলে নেয় ।’ সুবীর মণ্ডলের আরও অভিযোগ,’মারধোরে জখম হয়ে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেললে তাঁকে বাঁচানোর জন্য তাঁর স্ত্রী ছুটে আসেন। হামলাকারীরা তাঁর স্ত্রীকেও রেহাই দেয় না।।জঘন্য ভাষায় গালিগালাজ করার পাশাপাশি তাঁর স্ত্রীকে বাড়ি থেকে ফাঁকা মাঠে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করার হূমকি সেখ সাহাদ আলি ওরফে লকাই দেয় ।’
আক্রান্ত সুবীর মণ্ডলের অভিযোগ অনুযায়ী,’জ্ঞান ফিরলে পরদিন অর্থাৎ ১২ এপ্রিল তিনি বর্ধমান হাসপাতালে চাকিৎসা করিয়ে খণ্ডঘোষ থানায় অভিযোগ জানাতে যান।তখন থানা তাঁর অভিযোগ নিতে অস্বীকার করে। সেই কারণে বাধ্য হয়ে তিনি জেলার পুলিশ সুপারের দফতরে অভিযোগ দায়ের
করেন।এরপরে খণ্ডঘোষ থানা তাঁর অভিযোগ নিতে চাইলে ১৮ এপ্রিল তিনি খণ্ডঘোষ থানায় এফআইআর রুজু করেন । পাঁচিল টপকে বাড়িতে ঢুকে হামলা মারধোরের সবিস্তার তাঁর বাড়ির সিসি ক্যামেরার ধরা পড়েছে বলে ব্যবসায়ী সুবীর মণ্ডল দাবি করেছেন।অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তি ও ন্যায় বিচারের দাবি করেছেন সুবীর মণ্ডলের স্ত্রী।
এমন ঘটনা নিয়ে কোন এফআইআর রুজু হয়েছে কি না তা খোঁজ জানতে হবে বলে এসডিপিও (বর্ধমান দক্ষিণ) অভিষেক মণ্ডল জানিয়েছেন। তবে এ নিয়ে কোন “রাখঢাক’ না রেখে খণ্ডঘোষ থানার এক পুলিশ কর্তা জানান,’সুবির মণ্ডলের দায়ের করা অভিযোগে ভিত্তিতে এফআইআর রুজু হয়েছে।তদন্ত চলছে।’ তবে এখনও গ্রেপ্তারির কোনও খবর নেই বলে জানা গিয়েছে।
এফআইআরে সুবীর মণ্ডল যাঁকে মূল অভিযুক্ত করেছেন সেই সেখ সাহাদ আলি ওরফে লকাই হলেন খণ্ডঘোষের বেরুগ্রাম অঞ্চল তৃণমূলের প্রধান নেতা। ১১ তারিখ রাতের ঘটনার জন্য তিনি অনুতাপ প্রকাশ করেছেন। তবে সুবীর মণ্ডলেড় বিরুদ্ধেও তিনি বিস্ফোরক অভিযোগ এনেছেন। লকাই জানিয়েছেন, এক মহিলার সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল সুবীর।ওই মহিলা সেই সম্পর্ক ছিন্ন করলে সুবীর বদলা নেওয়ার জন্য মহিলার লগ্ন ছবি ভাইরাল করে দেয়। এর প্রতিবাদ করা হলে সুবীর নোংরা ভাষায় তাঁকে গালিগালাজ করে।এমন কি তৃণমূল কংগ্রেস দলের পতাকা ছিঁড়ে ফেলে তার উপর প্রস্রাব পর্যন্ত করে দেয় । এসবের কারণেই সুবীর মণ্ডলের বিরুদ্ধে ক্ষোভের পারদ চড়েছিল বলে লকাই জানিয়েছেন। খণ্ডঘোষ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি অপার্থিব ইসলাম বলেন,’আইন হাতে তুলে না নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে রেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সে কথা মাথায় রেখে নানা অপকর্ম ঘটনো সুবীর মণ্ডলের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়ে ব্যবস্থা গ্রহনের পথে হাঁটলেই ভাল হতো ।’
বিরোধীরা নেতৃত্ব অবশ্য এই ঘটনাকে এত হালকা ভাবে দেখতে নারাজ।রাতের অন্ধকারে পাঁচিল টপকে বাড়িতে ঢুকে ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে জখম করার ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ তাঁরা জানিয়েছেন। জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র এ নিয়ে বলেন,’বাংলায় আইনের শাসন এখন আর নেই ।বাংলায় এখন তৃণমূলী শাসন চলছে। খণ্ডঘোষের সুলতানপুরের ঘটনা তারই প্রমান । খণ্ডঘোষ নিবাসী জেলা সিপিএম নেতা বিনোদ ঘোষ বলেন,’তৃণমূলের রাজত্বে বাড়িতেও কারুর নিরাপ্তা নেই ।আর বাড়ির ভিতরেও কারুর নিরাপ্তা নেই। বঙ্গে আইনের শাসন,নিরাপত্তা এ সবই বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে ।’।