প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৪ ফেব্রুয়ারী : শাস্ত্র মতে বিদ্যার দেবী হলেন সরস্বতী। কিন্তু কালের নিয়মে সেই দেবী যেন প্রেমের দেবী বনে গিয়েছেন। সরস্বতী পুজোর দিনকটা অনেকাংশেই বাঙালি তরুণ তরুণীদের কাছে ’ভ্যালেন্টাইন্স ডে’ হিসাবে পরিচিতি পেয়ে গিয়েছে।যার প্রতিচ্ছবি পূর্বের বছর গুলির মতো এই বছরও সরস্বতী পুজোর পরদিন দেখাগেল বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলাপবাগ ক্যাম্পাসে।বসন্তের এই দিনটাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ছাত্র-ছাত্রীরা এক অন্য প্রেমের দিনের রুপ দিলেন।তত্ত্বের ডালি আদান প্রদানের মধ্য দিয়েই তার প্রকাশ প্রস্ফুটিত হল ।
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলাপবাগ চত্বরে রয়েছে একগুচ্ছ ছাত্রাবাস এবং ছাত্রীনিবাস। প্রতিবছর সরস্বতী পুজোয় আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা।তার মধ্যে নজকাড়া থাকে,কয়েক দশক ধরে হয়ে চলা ঐতিহ্য মেনে
ছাত্র ও ছাত্রীদের মধ্যে তত্ত্ব আদান প্রদান। তার মধ্যদিয়েই এক ফাঁকে সেরে ফেলা হয়ে যায় একে অপরের হাত ধরে মন দেওয়া নেওয়ার পর্ব।বিষয়টা অনেকটা যেন চকোলেট, মিষ্টি, ফুল ইত্যাদি উপহার দেওয়ার মোড়কে আসলে মনের কথা ও ভালবাসার সম্পর্ক তৈরির বীজ বপনের পথ তৈরি করা।
গোলাপবাগ ক্যাম্পাসে রয়েছে গার্গী, নিবেদিতা, সরোজিনী এবং মীরাবাঈ প্রভৃতি নামের ছাত্রীবাস (হোস্টেল)।আর রয়েছে চিত্তরঞ্জন, অরবিন্দ, নেতাজি, বিবেকানন্দ এবং রবীন্দ্র নামের ছাত্রাবাস।এমনিতে সারাবছর ছেলেদের হোস্টেলে মেয়েদের আর মেয়েদের হোস্টেলে ছেলেদের ঢোকার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি থাকে।ব্যতিক্রম থাকে শুধুমাত্র সরস্বতী পুজোর কটাদিন। সত্তরের দশক থেকে রীতিমেনে সরস্বতী পুজোর পরের দিনটায় ছাত্র ছাত্রীদের একে অপরের আবাসে যাবার বিধি নিষেধের বাঁধন ছিন্ন থাকে তত্ত্ব আদান প্রদানের জন্য। পরস্পরের আবাসে পৌছে যাবার এই দিনটিকে ঐতিহ্যের উৎসবের মতন করে পালন করেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা।
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলাপবাগ ক্যাম্পাস এদিন অর্থৎ মঙ্গলবার সকাল থেকেই প্রেম মূর্ছনায় ভাসতে শুরু করে। বেলা গড়াতেই সুন্দর সাজে সজ্জিত হয়ে ছাত্রীরা হাতে ফুল,মিষ্টি ও উপহারের দিয়ে সাজানো তত্ত্ব নিয়ে ছাত্রাবাসের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় । তত্ত্ব নিয়েই সটান ছাত্রাবাসে পৌছে যায় ছাত্রীরা।এরপর একই কায়দায় ছাত্ররাও তত্ত্ব হাতে নিয়ে ছাত্রীবাসে ঢোকে। রীতিমত ঢাক, কাঁসর ঘন্টা বাজিয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা তত্ত্ব আদান প্রদান সারেন।যাকে অনেকে আবার বলেন,’এটা হল ঐতিহ্যের মোড়কে ক্যাম্পাসে ’বসন্তের দ্যুতি’ ছড়ানো’।
এই রীতি কবে, কেন চালু হয়েছিল তা স্পষ্ট করে কেউ বলতে পারেন নি।তবে অনেকেই মনে করেন,’সত্তরের দশকে এই রীতি রেওয়াজের সূচনা হয়েছিল’ । এর কারণ হিসাবে মনে করা হয়,বছরের অন্য সময় ছাত্রী আবাসনে ছাত্রদের প্রবেশের খুব একটা সুযোগ থাকে না।শুধুমাত্র সরস্বতী পুজোর সময় এক আবাসন থেকে অন্য আবসনে যাওয়ার ’রুদ্ধদ্বার’ খোলা হয়। তার দৌলতেই সরস্বতী পুজোর পরের দিনটা তত্ত্ব আদান প্রদানের মাধ্যমে মনের মানুষের একটু কাছাকাছি আসার সুযোগ তৈরি হয়ে যায়। যদিও ছাত্র-ছাত্রীদের মতে,’এদিনের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বন্ধুত্বের সুসম্পর্ক আরও নিবিড় হয় ।’ তবে যে যাই বলুক, বসন্তের এই দিনতো প্রেমেরই দিন । তাই প্রেম নিবেদনের সুবর্ণ সুযোগ এদিন পড়ুয়াদের কেউই হাতছাড়া করতে চাইলেন না৷
তত্ত্ব আদান প্রদানে অংশ নেওয়া জ্যোতি ঘোষ, প্রিয়াঙ্কা কুণ্ডু ,সায়ন্তন দাসগুপ্তরা বলেন,’সরস্বতী পুজোকে সামনে রেখে এবছর তত্ত্ব আদান প্রদান খুব ভালো ভাবে করা গেছে’।মনের মানুষের সঙ্গে মনের ভাব বিনিময় সার্থক ভাবে হওয়ায় এদিন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে আনন্দে উছাসের প্রকাশ ছিল বাঁধভাঙা।’।