প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০২ আগষ্ট : সচিত্র অ্যাডমিট কার্ড ছাড়া এমফিলের প্রথম সিমেস্টারের পরীক্ষা নেওয়া ও স্নাতকোত্তর স্তরের মার্কশিট বিলি না করা নিয়ে এবার নড়েচড়ে বসলো বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।পরীক্ষা নিয়ামক দফতরের কর্তাদের ভৎসনা করার পাশাপাশি গোটা ঘটনার তদন্ত করে দ্রুত রিপোর্ট পেশের নির্দেশ দিয়েছেন উপাচার্য নিমাইচন্দ্র সাহা।পরীক্ষা নিয়ামক অনিন্দজ্যোতি পাল যদিও এই বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন।তবে স্নাতকোত্তর স্তরের মার্কশিট মঙ্গলবার থেকে কলেজে কলেজে পৌছে দেওয়ার সিদ্ধান্ত কর্তৃপক্ষ নিয়েছে।
শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত আর্থিক দুর্নীতি মামলায় ’ইডি’ রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেপ্তার করেছে।ঠিক এমনই সময়ে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে ’ইডি’ দফতরে বিস্ফোরক অভিযোগ জানান শহর বর্ধমানের বোরহাটের বাসিন্দা সত্রাজিৎ গোস্বামী।সেই সংক্রান্ত খবর প্রকাশ হতেই সোমবার জরুরি বৈঠকে বসে বিশ্ববিদ্যালয়ের এগজ়িকিউটিভ কাউন্সিল (ইসি)।বৈঠকে পরীক্ষা নিয়ামক অনিন্দজ্যোতি পাল, সহ-পরীক্ষা নিয়ামক রামবিলাস মহাপাত্রসহ চারজনকে ডেকে পাঠান উপাচার্য । পিএইচডি কোর্সওয়ার্ক বা এমফিলের প্রথম সিমেস্টারের পরীক্ষা অ্যাডমিট কার্ড ছাড়া হওয়া এবং একদিনও হাজির না থেকে পিএইডির রেজিস্ট্রেশন পাওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গুলি বৈঠকে উঠে আসে।এছাড়াও দু’বছর আগে স্নাতকোত্তর স্তরের পরীক্ষা হয়ে যাবার পরেও পরীক্ষার্থীদের মার্কশিট হাতে না পাওয়ার বিষয়টিও বৈঠকে উঠে আসে । শুধু প্রথম নয়,স্নাতকোত্তর স্তরের দ্বিতীয় ও তৃতীয় সিমেস্টারের পরীক্ষা নিয়েও একই ছবি বৈঠকে উঠে আসে।এই গাফিলতি নিয়ে বৈঠকে উপস্থিত থাকা পরীক্ষা নিয়ামক অনিন্দজ্যোতি পালসহ চার আধিকারিককে ভর্ৎসনা করেন উপাচার্য নিমাইচন্দ্র সাহা।
বৈঠক শেষে উপাচার্য জানিয়ে দেন,’পরীক্ষা নিয়ামক দফতরের কয়েকটি গাফিলতির বিষয় আমাদের নজরে এসেছে। কেন এই গাফিলতি ও সমন্বয়ের অভাব হয়েছে, তা দেখার জন্যে সহ-উপাচার্য আশিস পাণিগ্রাহীর নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।তাঁদের যত দ্রুত সম্ভব রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে।’
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর বৈঠক চলাকালীন উপাচার্য পরীক্ষা নিয়ামকদের বলেন,এখন স্নাতকোত্তর স্তরের চতুর্থ সিমেস্টারের পরীক্ষা চলছে। অথচ এখনও পরীক্ষার্থীদের হাতে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় সেমিস্টারের মার্কশিট দেওয়া গেল না। কেন এমনটা হল তাও তিনি জানতে চান। উত্তরে পরীক্ষা নিয়ামক ভাবলেশহীন ভাবে জানান, “তাঁদের কাছেই আড়াই হাজারের মতো পরীক্ষার্থীর তিনটে সেমিস্টারের মার্কশিট পড়ে রয়েছে। তাঁরা ভেবেছিলেন বিভাগীয় প্রধানরা মার্কশিট নিয়ে গিয়ে পরীক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেবেন“। এমনটা উত্তর শোনার পরে উপাচার্য পরীক্ষা নিয়ামককে চরম ভর্ৎসনা করেন। পরে তিনি পরীক্ষা নিয়ামককে বলেন, ‘আপনার কাজ প্রতিটি বিভাগে মার্কশিট পৌঁছে দেওয়া’। এরপরে উপাচার্য মার্কশিট ছেড়ে পরীক্ষা নিয়ামকের কাছে জানতে চান, সচিত্র অ্যাডমিট কার্ড ছাড়া পরীক্ষা কী ভাবে নেওয়া হল ? বৈঠকে থাকা সহ- পরীক্ষা নিয়ামক রামবিলাস মহাপাত্র এর কোনও সদুত্তর দিতে পারেন না বলে বৈঠক সূত্রে জানা যায় । এর পরেই মঙ্গলবার থেকে বাংলা বিভাগের পিএইচডি কোর্সওয়ার্ক পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় পরীক্ষা নিয়ামক দফতর ।
স্নাতকোত্তর স্তরের মার্কশিট তৈরি ও ছাপানো নিয়ে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য । বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, একটি সংস্থা ই-মার্কশিট তৈরি করে। আর সেই মার্কশিট ছাপনো হয় সরকারি প্রেসে।ই-মার্কশিট তৈরি হয়ে যাবার পরে তা অনলাইনে নির্দিষ্ট সময়ে প্রকাশ করা হয়েছিল।কিন্তু সরকারি প্রেসের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের চুক্তি নিয়ে টালবাহানা চলছে। তাই জানুয়ারী থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত প্রথম, তৃতীয় ও পঞ্চম সিমেস্টারের যে পরীক্ষা হয়েছে তার মার্কশিট হাতে পেতে সময় লেগেছে।এরই মধ্যে গত শুক্রবার ষষ্ঠ সিমেস্টারের ৩৬,২৪৭ জন পরীক্ষার্থীর ফল বেরিয়েছে।জানা গিয়েছে পরীক্ষার্থীদের এই মার্কশিট মঙ্গলবার থেকে কলেজে পৌঁছে যাবে।।