প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১৬ নভেম্বর : মাতৃ গর্ভে থাকা জমজ সন্তানের একটি গর্ভেই মারা যায়।সেই মৃত সন্তানকে প্রসব করিয়ে টানা ১২৫ দিন প্রসূতি মায়ের চিকিৎসা চালিয়ে সফল ভাবে দ্বিতীয় শিশুর জন্ম দিলেন চিকিৎসক।চিকিৎসায় এমন নজির বিহীন দৃষ্টান্ত তৈরি করে ’গিনেস বুকে’ নথিভুক্ত হয়ে থাকা সাফল্যকে ছাপিয়ে গেল এই রাজ্যেরই বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। হাসপাতাল সুপার চিকিৎসক তাপস ঘোষের দাবি,’শিশু ও প্রসূতি মা দু’জনেই সুস্থ রয়েছে।দেশে এমন ধরণের ঘটনা কমই হয়েছে।’
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে,প্রসূতি পম্পা প্রামাণিকের বাড়ি পূর্ব বর্ধমান জেলার জামালপুর থানার কুলীনগ্রামে। প্রথম থেকেই তাঁর সন্তান প্রসবে সমস্যা ছিল। তাঁর প্রথম টেস্ট টিউব বেবি নেওয়ার প্রচেষ্টা ২০১৬ সালে ব্যর্থ হয়।তারপর তিনি কলকাতার বিভিন্ন নার্সিংহোম ও একাধিক ঠাকুরের মন্দিরে হত্যে দিলে কোনও ফল হয়নি। চলতি বছরের জুলাই মাসে একইভাবে টেস্ট টিউবে মা হওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। এবারে শিশু তিনি গর্ভে যমজ ধারণ করেন।
কিন্তু,অন্তঃস্বত্তা হবার পরে জুলাই মাসের ১১ তারিখ ১৭ সপ্তাহের মাথায় রক্তক্ষরণ শুরু হলে তিনি বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। পরদিন ১২ জুলাই প্রসূতি বিভাগে একটি মৃত সন্তান প্রসব করেন তিনি। এরপর পরস্থিতি আরও জটিল হয়ে যায়। অনাগত দ্বিতীয় সন্তান গর্ভে থেকেই যায়। এই দ্বিতীয় সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় পড়েন চিকিৎসকরা।তবুও সাধারণ পরিকাঠামো নিয়েই বর্ধমান হাসপাতালের চিকিৎসকরা লড়ে যান ।তাঁরা কোন ঝুঁকি না নিয়ে প্রসূতিকে পর্যবেক্ষণে রাখার সিদ্ধান্ত নেন। কঠোর নিয়মের মধ্যে টানা ১২৫ দিন হাসপাতালেই ভর্তি ছিলেন প্রসূতি।দু’দিন আগে অর্থাৎ মঙ্গলবার শিশু দিবসে দিন ১২৬ দিনের মাথায়,প্রসূতি যমজ শিশুর দ্বিতীয়টির জন্ম দেন। চিকিৎসকদের দাবি শিশুটির ওজন হয়েছে ২ কেজি ৯০৬ গ্রাম ।
বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রসূতি বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মলয় সরকার বৃহস্পতিবার বলেন,’প্রসূতির বয়স ৪১ বছর । জরায়ুতে তাঁর একটি শিশুর মৃত্যু হয়েছিল। তারপর অন্য একটির জন্ম দেওয়াটা খুবই ঝুঁকির হয়ে যায়। কারণ, এই সময়ে সংক্রমণের ব্যাপক ভয় থাকে।পরিণত হওয়ার জন্য শিশুর প্রয়োজনীয় সময়ও লাগে। এক্ষেত্রে সময়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ।আমাদের বিশেষ কিছু স্টেপ নিতে হয়েছে । সর্বপরি আমরা বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা অসাধ্যসাধন করতে সক্ষম হয়েছি। শিশু দিবসে দিনেই সিজার করে শিশুটিকে পৃথিবীর আলো দেখাতে পারা গিয়েছে। শিশু ও প্রসূতি দু’জনেই সুস্থ রয়েছেন ।’
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কথা অনুযায়ী,এই গোটা প্রক্রিয়ায় ছিলেনচিকিৎসকদের নিয়ে গঠিত একটি দল।প্রসূতি বিভাগের মলয় সরকার ছাড়াও এস পি রায়চৌধুরী, দেবব্রত রায়, কৃষ্ণপদ দাস, অর্পিতা প্রামাণিক, শিশু বিভাগের চিকিৎসক মুকুট বন্দ্যোপাধ্যায়, এ্যানাস্থেশিয়া বিভাগের সুমন্ত ঘোষ মৌলিকদের নিয়ে গঠিত মেডিকেল টিম এই বড় কাজটি করেন। এই বোর্ডের দাবি, ১৯৬৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোর শহরে এই ধরণের একটি ঘটনায় ৯০ দিন পর দ্বিতীয় শিশুটিকে সফলভাবে প্রসব করানো হয়। এই ঘটনা গিনেস বুকে রেকর্ড আছে। মেডিকেলে চিকিৎসকদের দাবি, তাঁরা ১২৫ দিনের পর প্রসব করিয়ে গিনেস বুকের রেকর্ড রেকর্ডকে ছাপিয়ে গিয়েছেন। বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সুপার তাপস ঘোষ এদিন বলেন,’আমাদের হাসপাতালের চিকিৎসকরা অসাধ্যসাধন করেছেন ।’
শিশুর পিতা অনুপ প্রামাণিক বলেন,’বর্ধমান হাসপাতালের ডাক্তার বাবুদের জন্যই শিশু দিবসের দিন ছেলেকে পেলাম।ডাক্তার বাবুরা আমার ছেলের যে নাম রাখবেন আমি সেই নামই রাখবো,যাতে সারাজীবন এইভাবে সন্তান পাওয়াটা স্মরণে থাকে।’।