প্রদীপ চট্টেপাধ্যায়,বর্ধমান,১৯ আগষ্ট : নির্দেশ জারির ক্ষেত্রে বর্ধমান আদালতও যেন এবার কলকাতা হাই কোর্টের মতো দৃষ্টান্ত তৈরি করছে।পৃথক দুটি মামলায় নজিরবিহীন নির্দেশ দিলেন বর্ধমান আদালতের বিচারক । জমি অধিগ্রহনের ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত একটি মামলায় বৃহস্পতিবার বর্ধমানের তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক বিশ্বরুপ শেঠ দিলেন পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসকের বাংলো নিলামের নির্দেশ। একই দিনে মাদক সংক্রান্ত একটি মামলায় তিনি এক পুলিশ অফিসারকে গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দিলেন। আদালতের এমন নির্দেশ জেলাপ্রশাসনিক মহলে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে ।
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৯৬ সালে বর্ধমানের ’অলিশা’ মৌজায় হাউসিং কমপ্লেক্স গড়ার জন্য বর্ধমান জেলা পরিষদ পরিকল্পনা গ্রহণ করে। সেইমতো জেলা কালেক্টর জমি অধিগ্রহণের নির্দেশিকা জারি করেন। এরপর নদিয়ার রাণাঘাট থানার বিষ্ণুবাবু লেনের বাসিন্দা কমল কুমার ঘোষের ০.৬৮ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। সরকার জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণ দেয়। সেই ক্ষতিপূরণ পছন্দ না হওয়ায় আরও বেশি দাম পেতে ওই জমির মালিক আদালতে মামলা করেন। ২০১৫ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক জমির মূল্য বাবদ ৭০ লক্ষ ৩ হাজার ৭৫৫ টাকা মেটানোর জন্য জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়।
কিন্তু, জেলা প্রশাসন আদালত নির্ধারিত মূল্য জমির মালিককে দেয়নি।আদালতের নির্দেশ কার্যকর করতে জমির মালিক ফের মামলা করেন। বর্তমানে জেলা শাসকের কাছে জমির মালিকের পাওনা ১ কোটি ২৭ লক্ষ ৪৩ হাজার ৮০৭ টাকা।সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার বিচারক বিশ্বরুপ শেঠ সাধনপুর মৌজায় জেলা শাসকের বাংলো ও তার লাগোয়া জমি ক্রোক করার নির্দেশ দেন বিচারক।জেলা শাসকের বাংলো নিলাম করে মামলাকারিকে জমির দাম মেটানোর নির্দেশ তিনি দিয়েছেন।এই ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আদালতের নাজির ও বর্ধমান থানার আইসিকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়েছে। আদালতের নির্দেশ কার্যকর করে আগামী ১২ সেপ্টেম্বর দু’জনকেই রিপোর্ট পেশ করতে বলেছেন বিচারক অন্যথায়,প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলেও বিচারক বিশ্বরুপ শেঠ তাঁর নির্দেশে জানিয়েছেন।এই প্রসঙ্গে বর্ধমানের গভর্ণমেন্ট প্লীডার মুমারিমোহন কুমারের বক্তব্য, আদালতের নির্দেশ পত্র এখনও তিনি হাতে পাননি। তাই এই নির্দেশের বিষয়ে এখনই কিছু বলা তাঁর পক্ষে সম্ভব হন ।
একই বর্ধমানের মাদক সংক্রান্ত বিশেষ আদালতের বিচারকের আসনে বসে বিশ্বরুপ শেঠ মাদক সংক্রান্ত একটি মামলাতেও নজিরবিহীন নির্দেশ জারি করেছেন। দুই মহিলার কাছ থেকে গাঁজা উদ্ধার হওয়ার মামলায় সাক্ষ্য দিতে আদালতে হাজির না হওয়ায় জেলার পূর্বস্থলী থানার তৎকালীন সাব-ইন্সপেক্টর অজয় কুমার গুপ্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক ।নির্দেশে বলা হয়েছে,আগামী ২৩ নভেম্বর মামলার পরবর্তী শুনানির দিন রয়েছে। সেদিন তাঁকে গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করতে হবে। তার আগে ওই পুলিশ অফিসারকে গ্রেপ্তার করা হলে তাঁকে ১০০ টাকার বন্ডে জামিন দেওয়ার জন্য নির্দেশে উল্লেখ করা হয়েছে।
কি সেই মামলা যা, নিয়ে বিচারক এমন নির্দেশ জারির সিদ্ধান্ত নিলেন ? আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৬ সালের ১৮ জুলাই পূর্বস্থলী থানার পুলিস ধনা বিবি ও বানোয়ারা শেখকে গ্রেপ্তার করে। পূর্বস্থলী থানার উখড়ায় তাদের বাড়ি।এই গ্রেপ্তিরির বিয়ে পুলির দাবি করেছিল, ঘটনার দিন রাতে এসটিকেকে রোডে বেনাকর মোড়ের কাছ থেকে তাদের ধরা হয়।তল্লাশিতে ধৃতদের কাছ থাকা দু’টি প্লাস্টিকের ব্যাগে ৫ কেজি ৫০০ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার হয় । সাব-ইন্সপেক্টর অজয় কুমার গুপ্তার অভিযোগের ভিত্তিতে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করে দুই মহিলাকে গ্রেপ্তার করা হয়।পরে তারা জামিনে ছাড়া পায়। অভিযুক্তদের আইনজীবী চয়ন মুখোপাধ্যায় বলেন,এই মানলায় সমন পেয়েও আদালতে সাক্ষ্য দিতে হাজির হচ্ছেন না ওই সাব-ইন্সপেক্টর। তিনি সাক্ষ্য না দেওয়ায় মামলাটি ঝুলে রয়েছে। সাক্ষ্যদান নিশ্চিত করতে বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে এক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন ।।