এইদিন ওয়েবডেস্ক,ঢাকা,০৫ ডিসেম্বর : বিগত ১১ মাসে ২৮ বাংলাদেশি পাচারকারীকে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী(বিএসএফ) খতম করেছে বলে বাংলাদেশের একটি পোর্টালে জানানো হয়েছে । শুধু তাইই নয়,বিএসএফ-এর এই কঠোর মনোভাবের কারনেই নাকি বাংলাদেশিদের মধ্যে ভারত বিদ্বেষী মনোভাব বেড়েছে বলেও দাবি করা হয়েছে । বিএসএফ সীমান্তে হত্যা বন্ধ করলে ভারত বিদ্বেষ কমবে বলেও মন্তব্য করা হয়েছে । কিন্তু হত্যা বন্ধ হলে পাচারকারী ও বাংলাদেশি নাগরিকদের অবৈধ অনুপ্রবেশ বন্ধ হবে কিনা সেটা স্পষ্ট করা হয়নি।
গতকাল প্রকাশিত সাউথ ইস্ট এশিয়া জার্নাল নামে ওই বাংলাদেশি পোর্টালে বলা হয়েছে, বাংলাদেশি নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, দীর্ঘ দিনের এ সমস্যা সমাধানে দেশটির রাজনৈতিক সদিচ্ছার ঘাটতি রয়েছে। সীমান্তে মারণাস্ত্র ব্যবহার বন্ধে দিল্লির ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে তারা ।
পোর্টালটি দাবি করেছে,ভারতের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে ৭দেশের। এর মধ্যে বিএসএফের গুলিতে সর্বোচ্চ হত্যার ঘটনা ঘটে বাংলাদেশ সীমান্তে। গত ১১ মাসে বিএসএফের গুলিতে ২৮ বাংলাদেশি নিহতের তথ্য দিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র। তাদের হিসাবে, গত ১১ বছরে নিহত হয়েছে ৩৪৫ জন। আওয়ামী লীগ আমলেও বছরে অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছে । এই ঘটনায় অনুপ্রবেশকে বৈধতা দিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে ওই সংবাদমাধ্যমটি । পাশাপাশি প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে প্রতিশ্রুতিও ভঙ্গের অভিযোগেও অভিযুক্ত করা হয়েছে ভারতকে ৷
যদিও ভারতের তরফে অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছেন বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্রি । তিনি বলেছেন,’সীমান্ত হত্যা নিয়ে বাংলাদেশের মতো ভারতও উদ্বিগ্ন। তবে ভারতীয় সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশ, মানবপাচার, চোরাকারবার ও অস্ত্র পাচার হয়। এগুলো বন্ধ হলে সীমান্তে হত্যাও বন্ধ হয়ে যাবে। নিজের ভূখণ্ডের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে থাকে বিএসএফ। চার হাজার কিলোমিটারের বেশি সীমান্তের অধিকাংশ ভারতীয় অংশে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হয়েছে।’ বাকি অংশে বেড়া দেওয়া শেষ হলে সীমান্তে অপরাধ কমবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন ।
অন্যদিকে বাংলাদেশের পক্ষে বিদেশ উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের উদ্ধৃতি দিয়ে পোর্টালটি বলেছে, ‘বাংলাদেশ-ভারত পৃথিবীর একমাত্র সীমান্ত, যেখানে মানুষকে গুলি করে মারা হয়। এটাকে জাস্টিফাই করার চেষ্টা করেছেন দিল্লি। অপরাধ হয়েছে বলে ইত্যাদি ইত্যাদি… অপরাধ হলে কোর্টে সোপর্দ হবে। কোর্ট তাকে শাস্তি দেবে। আমি স্পষ্টভাবেই বলেছি, এটার কোনো সমাধান আমি আপাতত দেখছি না।’
প্রতিবেদন অনুযায়ী,গত বছরের সেপ্টেম্বরে, ৯ দিনের মধ্যে ঠাকুরগাঁও সীমান্তে দুই বাংলাদেশি পাচারকারীকে গুলি করে মারে বিএসএফ । সম্প্রতি পরপর দু’দিন নদীয়া ও কোচবিহারে বাংলাদেশ সীমান্তে খতম করা হয় দুই পাচারকারীকে৷ তারা হামলা চালালে আত্মরক্ষার জন্য গুলি চালায় বিএসএফ । আর তাতেই মৃত্যু হয় দুই পাচারকারীর ।
এই সমস্ত উদাহরণগুলো সামনে এনে পোর্টালটির বক্তব্য, অনুপ্রবেশের শাস্তি বিচারবহির্ভূত হত্যা হতে পারে না।বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের (বিআইপিএসএস) সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) আনম মুনীরুজ্জামান বলেন, ‘যদি কোনো চোরাকারবারি বা অন্য কোনো তৎপরতা সেখানে থেকে থাকে, যেকোনো কারণে মানুষকে হত্যা করা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। ভারতের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের যে একটা বিরূপ ধারণা জন্মায়, তার একটা প্রধান কারণ হচ্ছে সীমান্ত হত্যা। এর থেকে আমাদের মধ্যে যে ধরনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকার কিছু অন্তরায় আছে, তার মধ্যে একটা প্রধান অন্তরায় এটা।’
নিরাপত্তা বিশ্লেষক অবসরপ্রাপ্ত মেজর এমদাদুল ইসলাম বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মানবাধিকারে যারা আছেন তাদের কাছে আমরা বিভিন্ন সময় চিঠি দিয়ে একটা কূটনৈতিক পর্যায়ে ভারতের ওপর এক ধরনের একটা চাপ আনা যায়।’ তবে তারা ভারতের বিরুদ্ধে এতকিছু অভিযোগ আনলেও বাংলাদেশি দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম ও অনুপ্রবেশ বন্ধের বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতা নিয়ে কোনো আলোচনা করেনি । অর্থাৎ, বর্তমান বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ ভারতে অনুপ্রবেশকে চিরস্থায়ী টিকিয়ে রাখতে আগ্রহী বলে মনে করা হচ্ছে ।।

