এইদিন ওয়েবডেস্ক,নয়া দিল্লি,২৫ মার্চ : রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছে ভারত । তবে রাশিয়াকে আগ্রাসন বন্ধ করে কুটনৈতিক আলোচনার মধ্য দিয়ে সমাধানসূত্র বের করার পরামর্শও দিয়ে যাচ্ছে নয়া দিল্লি । আর এতে মাথা ব্যাথার অন্ত নেই আমেরিকার । ইতিমধ্য ভারতের অবস্থানকে ‘নড়বড়ে’ আখ্যা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন । উদ্দেশ্য ভারতকে কুটনৈতিকভাবে চাপে রাখা । এখন ভারত রাশিয়া সম্পর্কে ফাটল ধরাতে আসরে নেমে পড়ল ব্রিটেনও । একটি আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে,ব্রিটেনের হাউজ অফ কমন্সের স্পিকার লিন্ডসে হোয়েলের নেতৃত্বে ‘উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন’ ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল চলতি সপ্তাহে ভারত সফরে আসার কথা ছিল । প্রতিনিধি দলটির দিল্লি এবং রাজস্থান সফরের কথা বলা হলেও মূল উদ্দেশ্য ছিল ইউক্রেনের বিষয়ে পশ্চিম-পন্থী অবস্থান নেওয়ার জন্য ভারতকে প্রভাবিত করা । কিন্তু ব্রিটেনে ভারতীয় হাইকমিশন শেষ মুহূর্তে আপত্তি জানানোয় এই সফর বাতিল করতে হয় ব্রিটেনকে ।
প্রসঙ্গত,দশ সদস্যের ওই প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বিভিন্ন দলের আইন প্রণেতাদের কাজে যুক্ত । সফরের বিষয়ে জানুয়ারি থেকেই ভারতের সাথে আলোচনা চলছিল । তখন দিল্লি ও রাজস্থান সফরের কথা বলা হয়েছিল । প্রাথমিকভাবে যুক্তরাজ্য-ভারত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনার জন্য সফর করার কথা ছিল ওই ব্রিটিশ প্রতিনিধিদলটির । কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরু করার পর তাদের সফরের উদ্দেশ্য পরিবর্তিত হয়ে যায় । ভারতকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপে পশ্চিমা দেশগুলির সাথে যোগদানের জন্য রাজি করাতে এটা ছিল ব্রিটিশ সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার একটা অঙ্গ । যদিও শেষ পর্যন্ত এই সফরে সায় দেয়নি ভারত সরকার ।
এটিই প্রথম নয়, দেশীয় রাজনীতি এবং কৌশলগত স্বার্থকে প্রভাবিত করার জন্য ব্রিটিশ এমপিদের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বেও কড়া অবস্থান নিয়েছে ভারত সরকার । এর আগে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে লেবার পার্টির যুক্তরাজ্যের সংসদ সদস্য ডেবি আব্রাহামের (Debbie Abraham) ই-ভিসা বাতিল করার পরে ভারতে ঢুকতে দেয়নি নরেন্দ্র মোদী সরকার । ‘অলপার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ ফর কাশ্মীর’ (AAPGK)-এর সভাপতি ছিলেন আব্রাহামস । ২০১৯ সালের আগস্ট মাসে জম্মু কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বাতিলের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছিলেন তিনি । সেই কারনে তাঁকে দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকেই পত্রপাঠ দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয় । একইভাবে ২০১৮ সালে ব্রিটিশ এমপি এবং আইনজীবী আলেকজান্ডার কার্লাইলকে (Alexander Carlile) দেশে ঢুকতে দেওয়া হয়নি । কারন তিনি উপযুক্ত ভিসা ছাড়াই দিল্লি বিমানবন্দরে পৌঁছেছিলেন । পরে বিদেশ মন্ত্রকের তরফে জানানো হয় যে,ওই বৃটিশ আইনজীবীর উদ্দেশ্যে ছিল ভারত বাংলাদেশ সম্পর্কের মধ্যে জটিলতা সৃষ্টি করা ।
এদিকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারির পাশাপাশি পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার কাছ থেকে কোটি কোটি ডলারের তেল ও গ্যাস ক্রয় অব্যাহত রেখেছে । উলটে ভারতের দীর্ঘ দিনের বন্ধু,বিশ্বস্ত কৌশলগত অংশীদার এবং ভারতের অস্ত্রের প্রধান সরবরাহকারী দেশ রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কে ফাটল ধরানোর মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আমেরিকা ও ব্রিটেন ।।