এইদিন ওয়েবডেস্ক,লন্ডন,২৪ ডিসেম্বর : ইউরোপে ‘শরিয়া আদালতের রাজধানী’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে ব্রিটেনকে । কারন বিগত চার দশক ধরে ব্রিটেনে শরিয়া আদালতের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই আদালতগুলো ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার মুসলমানদের ওপর গভীর প্রভাব ফেলছে। ব্রিটেনের ন্যাশনাল সেকুলার সোসাইটি এই সমান্তরাল আইনি ব্যবস্থার ক্রমবর্ধমান আধিপত্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে । উল্লেখ্য,১৯৮২ সালে ব্রিটেনে প্রথম শরিয়া আদালত প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু এখন এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৫। ব্রিটিশ সংবাদপত্র ‘দ্য টাইমস’-এর প্রতিবেদন অনুসারে, এই আদালতগুলিকে অভিযুক্ত করা হয়েছে যে তারা পারিবারিক সমস্যা থেকে শুরু করে বিয়ে পর্যন্ত তাদের সিদ্ধান্ত দিচ্ছে এবং নারীবিরোধী ধারণার প্রচারও করছে ।
শুধু তাই নয়, শরিয়া আইন সংক্রান্ত একটি মোবাইল অ্যাপও রয়েছে যার ভিত্তিতে ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে বসবাসকারী মুসলিমরা তাদের এলাকার জন্য ইসলামিক আইন প্রণয়ন করতে পারবে । আদপে এটি শরিয়া আদালত প্রতিষ্ঠার সবুজ সংকেত । প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অ্যাপের মাধ্যমে পুরুষরা বেছে নিতে পারবে যে তাদের কতজন স্ত্রী থাকবে । এক লাখেরও বেশি ইসলামী বিয়ে নিবন্ধনহীন ব্রিটেনে এর প্রয়োগকে নিশ্চিত করে ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে এই আদালতগুলিতে ইসলামিক পণ্ডিতদের প্যানেল রয়েছে, যাদের বেশিরভাগই পুরুষ। এগুলি এক ধরণের অনানুষ্ঠানিক সংস্থা হিসাবে কাজ করে যেখানে বিবাহবিচ্ছেদ এবং বিবাহ সম্পর্কিত বিষয়ে ধর্মীয় সিদ্ধান্ত জারি করা হয়। এক তথ্য অনুযায়ী, ব্রিটেনে প্রায় এক লাখ বিয়ে অনিবন্ধিত। তার মানে তারা বেসামরিক কর্তৃপক্ষ দ্বারা স্বীকৃত হয়নি। ন্যাশনাল সেকুলার সোসাইটি, ধর্মনিরপেক্ষতার প্রচারকারী একটি সংগঠন, এই ‘সমান্তরাল আইনি ব্যবস্থা’ সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যা ব্রিটেনে প্রবেশ করছে। সোসাইটির প্রধান নির্বাহী স্টিফেন ইভান্স এই ধরনের আদালতের বিরুদ্ধে সতর্কতা জারি করেছেন। তিনি বলেন,’এই আদালত প্রতিটি নাগরিকের জন্য একটি আইনের শাসনের নীতিকে দুর্বল করে এবং এটি বিশেষ করে নারী ও শিশুদের অধিকারকে প্রভাবিত করে।’ তিনি আরও বলেন,’মনে রাখবেন যে শরিয়া আদালতের অস্তিত্ব শুধুমাত্র মুসলিম মহিলাদের ধর্মীয় বিবাহবিচ্ছেদের জন্য প্রয়োজন। যদিও মুসলিম পুরুষদের এর কোন প্রয়োজন নেই কারণ তারা এই আদালতের অনুমতি ছাড়াই তাদের স্ত্রীদের তালাক দিতে পারে।’
শরিয়া ইসলামের আইনী ব্যবস্থা কি ?
ইসলামি বই কোরান, হাদিস ও ইসলামিক স্কলারদের ফতোয়া একত্রিত করে এটি তৈরি করা হয়েছে। শরিয়া মুসলমানদের আইনগত জীবন ব্যবস্থা হিসাবে চিত্রিত করা হয়েছে । অধ্যাপক মোনা সিদ্দিকীর মতে, শরিয়া হল একটি ‘আইনশাস্ত্র’ যা নবী মহম্মদের সময় থেকে ১৩ শতক থেকে ১৩০০ শতাব্দী পর্যন্ত ইসলামিক পণ্ডিতদের মতামতের উপর ভিত্তি করে গঠিত ।
ব্রিটিশ পত্রিকা দ্য মিররের সাংবাদিক ডেভিড আর্থারটন এক্স-এ লিখেছেন,’৮৫ টি আদালত সহ ব্রিটেন বিশ্বের শরিয়া আদালতের রাজধানী হয়ে উঠেছে। বেশিরভাগই বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ এবং আর্থিক বিরোধ নিয়ে কাজ করে এই আদালত । কিন্তু তারা চরম ইসলামিক আইন ও শ্লীলতাহানির জন্য কঠোরভাবে সমালোচিত। যেমন অনেক স্ত্রীকে বিবাহবিচ্ছেদের পরিবর্তে তাদের স্বামীর সাথে মধ্যস্থতা করতে বলা হয় । অনেকের বিরুদ্ধে লিঙ্গ বিচ্ছিন্নতা এবং হোমোফোবিয়ার অভিযোগ রয়েছে।’।