তথাকথিত সেকুলার বা উদারপন্থীদের অস্তিত্ব মূলত অমুসলিম দেশগুলিতেই সীমাবদ্ধ । বিশ্বের একমাত্র ইসলামি দেশ বাংলাদেশে বামপন্থীদের কাগজে-কলমে অস্তিত্ব থাকলেও কট্টর মৌলবাদী দলগুলি শাসন ক্ষমতায় আসার পরে আজ তাদের খুঁজে পাওয়া যায় না ৷ এটা বলা অত্যুক্তি হবে না যে বাংলাদেশের বামপন্থীরা আজ কবরে চলে গেছে ! কিন্তু অমুসলিম দেশগুলির কথিত উদারপন্থীরা ভোটব্যাংকের রাজনীতির জন্য নিজের দেশের ঠিক কি প্রকার সর্বনাশ করে চলেছে তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে ব্রিটেন, ফ্রান্স, আমেরিকা,জার্মানি ও ভারতের মত দেশগুলি । সবচেয়ে বেশি নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছে সেদেশের অল্প বয়সী মেয়েরা । উদারপন্থীদের তোষণের রাজনীতি কিভাবে নিজের দেশের মেয়েদের নিরাপত্তা ধ্বংস করছে তার জ্বলন্ত নজির হল ব্রিটেন ।
লেবার পার্টি, টোরি এবং ব্রিটেনের গ্রুমিং গ্যাং একসূত্রে বাঁধা । সেকুলার দলের কয়েক দশকের তোষামোদি রাজনীতি ও অপরাধীদের প্রতি সহানুভূতিশীল মানসিকতার কারনে ব্রিটেনের গ্রুমিং গ্যাং এখন মহামারীর আকার নিয়েছে । উদারপন্থীরা তাদের তোষণের রাজনীতির মাধ্যমে কীভাবে তরুণীদের সামাজিক নিরাপত্তা ধ্বংস করেছে, তা থেকে বিশ্বের সকলেরই এই শিক্ষা নেওয়া উচিত! ব্রিটেনে কথিত “গ্রুমিং গ্যাং কেলেঙ্কারি” নিয়ে নতুন তদন্তের জন্য টোরি নেতৃত্বাধীন একটি প্রস্তাব আটকে দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী স্টারমারের লেবার পার্টি, এই বিষয়ে একটি বিল ৩৬৪-১১১ ভোটে পরাজিত হয়েছে।
গ্রুমিং গ্যাং কি? রাষ্ট্র কেন তাদের গুরুত্ব লুকানোর বা খাটো করে দেখানোর চেষ্টা করছে? কী ঝুঁকিতে আছে ? এটা সকলের জানা উচিত ।
আসলে, “গ্রুমিং গ্যাং”-এর মধ্যে ব্রিটিশদের একটি দল জড়িত, যাদের বেশিরভাগই পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত মুসলিম, যারা ব্রিটেন জুড়ে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের শিশুদের, বেশিরভাগই মেয়েদের, পরিকল্পিতভাবে যৌন নির্যাতন করে। এর মধ্যে রয়েছে এই ঘৃণ্য মানুষদের দ্বারা লালিত পাকিস্তানি অভিবাসীরা। ২০১২ সালে, দ্য টাইমস ইংল্যান্ডের রদারহ্যামে গ্রুমিং গ্যাং কার্যকলাপ উন্মোচন করে একটি বিস্ফোরক প্রতিবেদন প্রকাশ করে । যেখানে এমন একটি কেলেঙ্কারির কথা প্রকাশ করা হয় যা বহু বছর ধরে ভুক্তভোগীদের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে । যেকারণে ব্রিটেনের অভিবাসন এবং ইন্টিগ্রেশন নীতি সম্পর্কে অনেককে অস্বস্তিতে ফেলেছে। অপ্রীতিকর প্রশ্ন এড়াতে এটি দীর্ঘ সময় ধরে চাপা দেওয়া হয়েছিল।
২০১৪ সালে একাডেমিক ডঃ অ্যালেক্সিস জে-এর একটি ফলো-আপ গবেষণায় দেখা গেছে যে ১৯৯৭ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে শুধুমাত্র রদারহ্যামে ১,৪০০ জনেরও বেশি খ্রিস্টান শিশুকে ‘গ্রুম’ বা যৌন নির্যাতন করা হয়েছিল।এই প্রকাশের ফলে জাতীয়ভাবে হতবাক হয়ে স্থানীয় তদন্ত শুরু হয়, যা ইংল্যান্ডের বিভিন্ন শহর ও শহরতলি এলাকা,যেমন অক্সফোর্ড এবং রচডেল থেকে ওল্ডহ্যাম এবং টেলফোর্ড পর্যন্ত একই রকম নির্যাতনের প্রমাণ প্রকাশ্যে আসে । ২০১৫ সালে, ডঃ অ্যালেক্সিসকে একটি জাতীয় তদন্তের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য নির্বাচিত করা হয়েছিল, যা তিনি ২০২২ সালে সম্পন্ন করেছিলেন। যাতে নির্যাতনের একটি ‘গ্রুমিং’ “মহামারী” প্রকাশ করেছিল । দল গঠনের পাশাপাশি, তদন্তে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এবং গির্জা কর্তৃক যৌন শোষণের বিষয়টিও পরীক্ষা করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে “জরুরি” পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে শিশুর যৌন অপরাধের বাধ্যতামূলক প্রতিবেদন থেকে শুরু করে শিশুদের সাথে কাজ করা ব্যক্তিদের জন্য আরও কঠোর মানদণ্ড, শিশু মন্ত্রীর মাধ্যমে সমস্যার উপর পূর্ণকালীন মনোযোগ দেওয়া ইত্যাদি। অ্যালেক্সিস বলেছিলেন যে প্রতিবেদনের সুপারিশগুলি মূলত উপেক্ষা করা হয়েছে।
এদিকে ব্রিটেনে ‘গ্রুমিং গ্যাং’-এর ভয়াবহ চিত্র প্রকাশ্যে আসার পর ইলন মাস্ক একটি বিস্ফোরক এক্স- পোস্টের মাধ্যমে এই বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন, যেখানে স্টারমার এবং লেবার দলকে গ্যাং তৈরিতে সহায়তা করার এবং সন্দেহভাজন অপরাধের তদন্তে বাধা দেওয়ার অভিযোগ আনেন । প্রকৃতপক্ষে, পরবর্তী রক্ষণশীল সরকার তাদের ১৪ বছরের ক্ষমতায় থাকাকালীন অপরাধ দমনে খুব কম পদক্ষেপই নিয়েছে । ফলে পাকিস্তানি ‘গ্রুমিং গ্যাং’ আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল ।
ব্রিটিশ পত্রিকা মেট্রোর গত ২২ জানুয়ারীর একটা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ম্যানচেস্টার মিনশুল স্ট্রিট কোর্টের বিচারকদের বলা হয়েছে, রচডেলের একদল এশীয় পুরুষের জন্য দুই মেয়েকে ‘যৌন দাসী’ হওয়ার জন্য তৈরি করা হয়েছিল,যারা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিল,তারা চেয়েছিল ১৩ বছর বয়সী ওই মেয়েরা তাদের সাথে ‘যখন এবং যেখানে খুশি’ যৌন সম্পর্ক করবে । প্রসিকিউটর রোসানো স্কামার্ডেলা কেসি বলেছেন, বিচারাধীন আটজন ২০০১ সাল থেকে দুটি মেয়েকে ধর্ষণ ও যৌন শোষণের জন্য দায়ী।
তিনি বলেছেন,’তাদের নিজেদের কোনো দোষ ছাড়াই, মেয়েদের সমস্যাযুক্ত ব্যাকগ্রাউন্ড তাদের এই পুরুষদের অগ্রগতির জন্য সংবেদনশীল করে তুলেছিল, এবং অন্যরা যারা তাদের মতো আচরণ করেছিল। এই শিকারীদের হাতে তাদের ভয়ঙ্কর নির্যাতনের মুখোমুখি হতে হয় । তারা শিশুদের সঙ্গে ছিল যৌনতার জন্য ঘুরে বেড়ায় । নির্যাতিত, অপমানিত করে পরে ফেলে দেওয়া হয়। এই দুই মেয়েকেও এভাবে শোষিত করা হয়েছিল তা দৈবক্রমে নয়। স্ক্যামার্ডেলা বলেন, তাদেরকে বিভিন্ন ফ্ল্যাট ও বাড়িতে তুলে নিয়ে যেত ওই পুরুষরা ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কথিত যৌন অপরাধ, যা ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে সংঘটিত হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে ধর্ষণ, অশ্লীল আক্রমণ এবং শিশুর সাথে অশ্লীলতা। আসামিরা নিজেদের সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে । আসামির হল : ম্যানচেস্টারের ক্রাম্পসলের স্টেশন রোডের মোহাম্মদ জাহিদ(৬৪), রচডেলের ম্যানলি, রোডের নাহিম আকরাম(৪৮), রচডেলের বেসউইক রয়ডস স্ট্রিটের মোহাম্মদ শাজাদ(৪৩), রচডেলের নিউফিল্ড ক্লোজের নিসার হোসেন(৪৩), অ্যাথোল স্ট্রিটের রোহিজ খান(৩৯), গ্রাউস স্ট্রিটের আরফান খান(৪০), ওল্ডহ্যামের করোনা অ্যাভিনিউ এলাকার মোশতাক আহমেদ(৬৬) এবং ওল্ডহামের নেপিয়ার স্ট্রিট ইস্টের বাসিন্দা কাসির বশির(৫০) ।।