প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৭ জুন : নার্সের সরকারী চাকরি পাওয়া বধূর ডান হাত কেটে নেওয়ায় ঘটনায় গ্রেপ্তার হল শ্বশুর ও শাশুড়ি।ধৃতদের নাম সিরাজ শেখ ও মেহেরনিকা বিবি।তাঁদের বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রামের কোজলসা গ্রামে।কেতুগ্রাম থানার পুলিশ সোমবার রাতে চাকতা বাসস্ট্যান্ড থেকে ওই দম্পতিকে গ্রেপ্তার করে । পাশাপাশি মঙ্গলবার রাতের দিকে মূল অভিযুক্ত বধূ রেণু খাতুনের স্বামী শের মহম্মদ শেখ ওরফে সরিফুলকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় কেতুগ্রাম থানার পুলিশ ।
পুলিশ জানিয়েছে,কেতুগ্রামের চিনিসপুর গ্রামে বধূ রেণু খাতুনের বাবার বাড়ি। আজিজুল হকের পাঁচ মেয়ের মধ্যে রেণু সবার ছোট । কেতুগ্রামের আনখোনা হাইস্কুলে পড়ার সময়েই স্থানীয় কোজলসা গ্রাম নিবাসী দম্পতি সিরাজ শেখ ও মেহেরনিকা বিবির ছেলে সরিফুলের সঙ্গে রেণুর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।বাড়ির লোকজনের অমতেই ২০১৭ সালে প্রেমিক সরিফুলকে বিয়ে করেন রেণু। ওই বছরেই শেষ হয় রেণুর নার্সিং প্রশিক্ষণ । তার পর তিনি দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নার্সের চাকরিতে যোগ দেন । পাশাপাশি নার্সের সরকারী চাকরি পাওয়ার জন্যেও রেণু প্রচেষ্টা চালিয়ে যান । ভাগ্য সহায়
হওয়ায় তিনি সরকারি হাসপাতালে নার্সের চাকরিও পেয়ে যান । দু’চার দিনের মধ্যেই তাঁর ওই চাকরিতে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। আর বেকার স্বামীর স্ত্রী রেণুর সরকারী চাকরি পাওয়াটাই তাঁর জীবনে বিপদ ডেকে আনে ।
সরিফুল ও তাঁর বাবা-মায়ের মনে আশঙ্কা তৈরি হয় বাড়ির বউ রেণু সরকারি চাকরিতে যোগ দিলে আর ‘বেকার’ স্বামীর ঘর করবে না ।তাই তারা চাকরি না করার জন্য রেণুর উপর চাপ সৃষ্টি করে যাচ্ছিল।কিন্তু রেণু তাঁর স্বামী ও শ্বশুর শাশুড়ির চাপের কাছে নতিস্বীকার করে না।তাই রেণুর সরকারী চাকরি করা আটকাতে নিষ্ঠুরতার পথই বেঁচে নেয় তাঁর স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন ।
শনিবার রাতে রেণু যখন শ্বশুর বাড়ির ঘরে
অঘোরে ঘুমাচ্ছিল তখন তাঁর ডানহাতের কব্জিতে ধারালো অস্ত্রের কোপ বসিয়ে দিয়ে হাত কেটে নেয় স্বামী সরিফুল ।অভিযোগ এই নৃশংস কাজে সরিফুকে সঙ্গ দেয় তার বাবা মা ও দুই বন্ধু ।
বধূর বাবা আজিজুল হক এদিন বলেন,’সরিফুল আমাদের বলেছিল সে মেকানিক্যাল বিভাগে ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপ্লোমা করেছে। কিন্তু সে কোনো শংসাপত্র দেখাতে পারেনি । ওই ছেলেকে বিয়ে না করার জন্য মেয়েকে বহুবার নিষেধ করেছিলাম । কিন্তু মেয়ের জিদের কারনে আমরা সরিফুলের সঙ্গে তার বিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছি । এখন মেয়ে বুঝতে পারছে সে কি ভুল করেছে । আমরা সরিফুলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই ।’
বধূর শ্বশুর সিরাজ শেখ ও শাশুড়ি মেহেরনিকা বিবি এদিন আদালত চত্ত্বরে দাবি করেন,তাঁরা নির্দোষ । ঘটনার দিন রাতে তাঁরা আলাদা ঘরে ঘুমাচ্ছিলেন । ঘরে বৈদ্যুতিক পাখা চলছিল । তাই বউমার চিৎকার তাঁদের কানে আসেনি ।পুলিশ কর্তারা যদিও ধৃতদের এইসব বক্তব্যকে কোন গুরুত্ব দিতে চাননি । সুনির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে পুলিশ মঙ্গলবার দুই ধৃতকেই পেশ করে কাটোয়া মহকুমা আদালতে ।তদন্তের প্রয়োজনে ও মূল অভিযুক্তদের খোঁজ পেতে তদন্তকারী অফিসার ধৃতদের ১০দিন পুলিশি হেপাজতে নিতে চেয়ে এদিন আদালতে আবেদন জানান। বিচারক দুই ধৃতকে ৬ দিনের পুলিশি হেপাজতের নির্দেশ দিয়েছেন ।
ধৃতদের হেপাজতে নিয়ে পুলিশ মূল অভিযুক্ত সরিফুল শেখ ও তার দুই বন্ধুর সন্ধানে নামে।
রেণু খাতুনের শ্বশুর ও শাশুড়িকে জেরা করে পুলিশ মূল অভিযুক্ত শের মহম্মদ শেখ ওরফে সরিফুল কোথায় আত্মগোপন করে আছে তা জানতে পারে । এদিন রাতেই মুর্শিদাবাদের বর্ডার সংলগ্ন এলাকার একটি ডেরার হানা দিয়ে কেতুগ্রাম থানার পুলিশ রেণুর স্বামী সরিফুল কে গ্রেপ্তার করে। জানা গিয়েছে, সরিফুল পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে,সে তাঁর স্ত্রী রেণুর ডান হাত কেটে নেওয়ার জন্যে মুশিদাবাদের দুই সুপারি কিলারকে কাজে লাগিয়ে ছিল । সুপারি কিলারদের খোঁজ পেতে বুধবার ধৃত সরিফুলকে আদালতে পেশ করে পুলিশ নিজেদের হেপাজতে নেবে বলে জানা গেছে ।।