প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১৪ আগষ্ট : পানসি নৌকায় চড়ে দামোদর পার হবার সময় আচমকা নৌকা উল্টে যাওয়ায় গভীর জলে তলিয়ে যায় চার যুবক। দুই যুবক সৌরভ ধারা ও সমরেশ বাগ সাঁতরে কোনরকমে পাড়ে উঠতে পারলেও কোন হদিশ মেলেনি সৌগত বেরা (১৯)ও সৈকত মান্না (২৪) নামে অপর দুই যুবকের । শেষে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ দামোদরে পাইকপাড়া রিভার পাম্প সংলগ্ন এলাকা থেকে উদ্ধার হল সৈকত মান্নার মৃতদেহ। সৌগত বেরার খোঁজ জারি রেখেছে পুলিশ ও বিপর্যয় মোকাবেলা বাহিনী । এই ঘটনা জানাজানি হতেই শনিবার রাত থেকে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার জ্যোৎচাঁদ পাইকপাড়া এলাকায়। উৎকন্ঠায় দিন কাটাচ্ছে নিখোঁজ যুবকের পরিবার ।
সপ্তাহ খানেক আগেই জেলার পূর্বস্থলীর ছাড়িগঙ্গায় নৌকা ডুবির কারণে দুই পর্যটকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে । তার রেশ কাটতে না কাটতে ফের জামালপুরে একই ধরণের ঘটনা ঘটায় নড়ে চড়ে বসে প্রশাসন। রাতেই জামালপুর থানার পুলিশ ও ব্লক প্রশাসনের অধিকারিকরা জ্যোৎচাঁদ এলাকায় পৌছান।শুরু হয় তলিয়ে যাওয়া দুই যুবকের খোঁজ চালানো।রবিবার সকাল থেকে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ডুবুরি দল দামোদরের বিস্তির্ণ এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে যাচ্ছে।কিন্তু ঘটনার পর থেকে একটা গোটা দিন পেরিয়ে যাওয়ার পরেও দুই যুবকদের কোন হদিশ উদ্ধার না হওয়ায় উদ্বিগ্ন পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তারাও ।
জামালপুরের জ্যোৎশ্রীরাম গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার প্রত্যন্ত গ্রাম জ্যোৎচাদ পাইকপাড়া । নৌকা ডুবির কবলে পড়া চার সৌরভ ধারা,সমরেশ বাগ ,সৌগত বেরা ও সৈকত মান্না এই এলাকারই বাসিন্দা। তাঁরা চারজনই ঘনিষ্ট বন্ধু ।এঁদের মধ্যে সৈকত মান্না হায়দ্রাবাদে নার্সিং বিষয় নিয়ে পড়াশুনা করছিল।বাবা সুভাষ মান্না শারীরিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ায় কয়েক মাস আগে সৈকত গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসে।তারপর থেকে সৈকতই তাঁর বাবাকে দেখভাল করছিল।সৈকতের সঙ্গে থাকা অপর তিন বন্ধুরা উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর লেখাপড়ায় ইতি টেনেছে ।
নৌকাডুবির পর বরাত জোরে প্রাণে বেঁচে যাওয়া সৌরভ ধারা ও সমরেশ বাগ এদিন একবুক উৎকণ্ঠা নিয়ে অত্যন্ত মনমরা হয়ে বাড়িতে বসেছিল । তাঁরা জানায়, পানসি নৌকায় চড়ে বসার সময়েও তাঁরা চার বন্ধুর কেউই কল্পনা করতে পারেনি এমন অঘটন ঘটে যাবে। ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে সৌরভ ও সমরেশ জানায় , শনিবার বিকালে তাঁরা চার বন্ধু জ্যোৎচাঁদ গ্রামের মাঠে একসঙ্গে বসে আড্ডা মারছিলেন। তখনই পানসি নৌকায় চড়ে দামোদর পেরিরে অপর পাড়ে যাবার হুজুক হয় তাঁদের ।সেই মতো তাঁরা মাঠ থেকে উঠে এসে কাছের দামোদরের পাড়ে পৌছায় । কোন এক মৎসজীবীর পানসি নৌকাটি এলাকায় দামোদরের পাড়ে বেঁধে রাখা ছিল । সেই পানসি নৌকায় চড়ে তাঁরা চার বন্ধু মিলে
দামোদর পেরিয়ে অপর পাড়ে যায়। সেখানে ঘুরে সন্ধ্যা আনুমানিক পৌনে সাতটা নাগাদ তাঁরা ফের পানসি নৌকাতে চড়েই ফিরছিল । পাড়ের কাছে কাছাকাছি পৌছানোর খানিকটা আগে হঠাৎই পানসি নৌকা দুলে গিয়ে উল্টে গেলে তাঁরা চারজন দামোদরের গভীর জলে পড়ে যায়।সৌরভ ও সমরেশ জানায় জলে পড়ে যাবার পর তাঁরা সবাই সাঁতরাতে শুরু করে । তাঁরা দু’জন সাঁতরে পাড়ে উঠতে পারলেও সৈকত ও সৌগত কখন যে গভীর জলে গভীর জলে তলিয়ে যায় তা তাঁরা কেউ টের পাননি ।
সৈকত ও সৌগতর বাড়িতে গিয়ে এদিন দেখা যায় শোকে মুহ্যমান তাঁদের পরিবার সদস্যরা।তলিয়ে যাওয়া দুই যুবকের বাড়ি জুড়ে শুধুই শোনা যাচ্ছে বুকফাটা কান্না। সৌগতর জ্যাঠামশাই কাশিনাথ বেরা বলেন,’পানসির মালিকের নিষেধ উপেক্ষা করে চার বন্ধু মিলে পানসিতে চড়ে দামোদর পার হতে যায় । তার পরেই এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে যায়। পানসির মালিকের নিষেধ শুনলে আজ এই অবস্থা তৈরি হত না ।’
এসডিপিও(বর্ধমান দক্ষিন) সুপ্রভাত চক্রবর্তী
বলেন ,“ঘটনার খবর পাওয়া মাত্রই পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে যায়।এলাকার লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে রাতেই পুলিশ দামোদরের জলে যুবকদের খোঁজ চালানো শুরু করে। যুবকদের উদ্ধারে জন্য রবিবারও পুলিশ প্রচেষ্টা জারি রেখেছে ।’ বিডিও (জামালপুর) শুভঙ্কর মজুমদার জানিয়েছেন,’গভীর জলে তলিয়ে যাওয়া দুই যুবককে উদ্ধারের জন্য সর্বতভাবে প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।শনিবার রাত থেকেই খোঁজ চলছে ।রবিবার সকাল থেকে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী ও ডুবুরি দল দামোদরের বিস্তির্ন এলাকায় ঘুরে তলিয়ে যাওয়া যুবকদের সন্ধান চালাচ্ছে।এদিন বিকাল পর্যন্ত যুবকদের হদিশ পাওয়া যায় নি। তল্লাশি জারি রয়েছে ।’।