মহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ইসলামি চরমপন্থী দলগুলি অনৈতিকভাবে ক্ষমতা দখলের পর থেকে পাকিস্তানের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র শুরু করেছে বাংলাদেশ ৷ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলি পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের বেশ কিছু প্রদেশ নিয়ে “গ্রেটার বাংলাদেশ” বা বৃহত্তর বাংলাদেশ গঠন করে একটি ইসলামি রাষ্ট্র গড়ার স্বপ্ন দেখে । পশ্চিমবঙ্গেও শাসকদল তৃণমূলের আশ্রিত একটি গোষ্ঠী, “বাংলা পক্ষ”, ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বৃহত্তর বাংলা নামে একটি পৃথক দেশ গঠনের কথা বলে । কিন্তু বাংলাদেশি সন্ত্রাসীদের চিন্তাভাবনা থেকে তাদের চিন্তাভাবনা আলাদা । যেখানে কলকাতা ভিত্তিক ওই গোষ্ঠীটি বাংলাভাষীদের জন্য একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ গঠনের কথা বলে, সেখানে বাংলাদেশি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলি ইসলামি রাষ্ট্র গড়ে শরিয়া শাসন লাগু করার স্বপ্ন দেখে৷
এমতবস্থায় ভারতের সংবেদনশীল ও সঙ্কীর্ণ অঞ্চল চিকেন নেক বাংলাদেশি সন্ত্রাসীদের নিশানায় রয়েছে । আসলে “চিকেন নেক” হলো পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি করিডোরের একটি প্রচলিত নাম। এর আকৃতি মুরগির গলার মতো সরু হওয়ায় এই নাম দেওয়া হয়েছে। এই করিডোরটি ভারতের মূল ভূখণ্ডকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সাথে সংযুক্ত করে এবং এর একদিকে নেপাল এবং অন্যদিকে বাংলাদেশ রয়েছে । এর আয়তন ১৭০ বাই ৬০ কিমি এবং সবচেয়ে সরু অংশটি মাত্র ২০-২২ কিমি৷ এমতবস্থায় যদি “চিকেন নেক”-এর নিয়ন্ত্রণ যদি বাংলাদেশি সন্ত্রাসীদের হাতে আসে তাহলে পশ্চিমবঙ্গসহ উত্তর-পূর্ব ভারতের অরুণাচল প্রদেশ, আসাম, ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মিজোরাম, মেঘালয় ও সিকিম—এই আট রাজ্য নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে । তাই “গ্রেটার বাংলাদেশ” গড়তে এই “চিকেন নেক”-এর নিয়ন্ত্রণ নেওয়া বাংলাদেশি সন্ত্রাসীদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।
ইংরাজি সাপ্তাহিক পত্রিকা ব্লিটজের সম্পাদক সালহা উদ্দিন শোয়েব চৌধুরী জানিয়েছেন যে বাংলাদেশের মহম্মদ ইউনূস সরকার ও পাকিস্তান মিলে “চিকেন নেক”-এর নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে আনতে নতুন ষড়যন্ত্র শুরু করেছে । এই বিষয়ে তিনি এক্স-এ লিখেছেন,’পাকিস্তানের শীর্ষ সামরিক প্রতিনিধিদলের বাংলাদেশে সন্দেহজনক ভ্রমণ! জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফ কমিটির চেয়ারম্যান জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জা ২৪ অক্টোবর এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট নম্বর EK-584-এ ছয় সদস্যের একটি দলের নেতৃত্ব দিয়ে দুবাই হয়ে ঢাকায় পৌঁছান। দলের অন্য সদস্যরা হলেন, মির্জার স্ত্রী শাজিয়া সাহির, ব্রিগেডিয়ার মুহাম্মদ রশিদ খান, কমোডর খান মুহাম্মদ আসিফ এবং দুই মেজর। তারা ঢাকার র্যাডিসন হোটেলে অবস্থান করছেন।
তারা “চিকেন নেক” সহ কয়েকটি সীমান্ত এলাকা সফর করবেন। এর আগে জয়েন্ট স্টাফ সদর দপ্তরের মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল তাবাসসুম হাবিব বাংলাদেশ সফর করেছিলেন।জেনারেল মির্জা মুহাম্মদ ইউনূস এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানের সাথে দেখা করেছিলেন, যা ঢাকা ও ইসলামাবাদের মধ্যে উচ্চ-স্তরের সম্পর্কের ইঙ্গিত দেয়।
২৭ অক্টোবর, জেনারেল মির্জা সিলেট সেনানিবাস পরিদর্শন করবেন। জেনারেল মির্জা আসিম মুনিরের পরে দ্বিতীয় সবচেয়ে ক্ষমতাশালী ব্যক্তি হিসেবে দেখা হয়।’
কিন্তু “চিকেন নেক” হল বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী একটি ভারতীয় এলাকা । এই ভূখন্ড নিয়ে পাকিস্তানের আগ্রহ কেন ? আসলে পাকিস্তান জন্মলগ্ন থেকেই ভারতকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত । মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী যখন পাকিস্তানকে টাকা পাইয়ে দেওয়ার জন্য অনশনের নামে ব্লাকমেলের রাজনীতি করছিলেন, তখন থেকেই মহম্মদ আলি জিন্নাহ গোপনে এই ষড়যন্ত্র চালিয়ে আসছিল । ক্রমে তা প্রকাশ্যে আসে। আজ খোলাখুলি ভারত বিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত পাকিস্তান ।
অন্যদিক বাংলাদেশের বর্তমান জোট সরকারে রয়েছে জামাত ইসলামি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল পার্টি (বিএনপি) ও হিযবুত তাহরীতের মত কুখ্যাত ইসলামি মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলি৷ তারা পাকিস্তানপন্থী বলে পরিচিত । শেখ হাসিনার পতনের পর এই গোষ্ঠীসহ আনসারুল্লাহ বাংলা, আল কায়দা, ইসলামি স্টেটের মত কুখ্যাত সন্ত্রাসী সংগঠনগুলির অবাধ বিচরণভূমি হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ ।
চলতি বছরের জুলাই-আগস্ট মাসে ভারতের ভূখণ্ড নিয়ে ‘গ্রেটার বাংলাদেশ’ নামের একটি মানচিত্র প্রকাশ করে বাংলাদেশের ইসলামি চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলি। তখন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর জানান যে বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের ওপর নিবিড়ভাবে নজর রাখা হচ্ছে।
লোকসভার এক অধিবেশনে তিনি বলেছিলেন,এই ‘গ্রেটার বাংলাদেশ’ মানচিত্রটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রদর্শিত হয়েছিল। ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার ওপর প্রভাব ফেলে এমন ঘটনাগুলো নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। দেশের স্বার্থ রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে সরকার।’
তিনি আরও বলেছিলেন, ‘আমরা এ ইস্যুতে বাংলাদেশের সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। সরকারি ফ্যাক্টচেকার প্ল্যাটফর্ম বাংলাফ্যাক্টের উদ্ধৃতি দিয়ে বাংলাদেশের সরকার আমাদের জানিয়েছে যে ২০২৫ সালের ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একটি ইতিহাস সম্পর্কিত প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে মধ্যযুগের বাংলার একটি মানচিত্র প্রদর্শন করা হয়েছিল। ওই প্রদর্শনীর যারা আয়োজক ছিলেন, তারা বাংলাদেশের সরকারকে বলেছেন যে কোনো বিদেশি সংস্থা বা গোষ্ঠীর সঙ্গে তাদের সম্পর্ক নেই। বাংলাদেশের সরকারের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে ‘সালতানাত-ই-বাংলা’ নামের কোনো সংগঠন বা গোষ্ঠীর অস্তিত্ব বাংলাদেশে নেই।’
কিন্তু বাংলাদেশের মহম্মদ ইউনূস যতই অস্বীকার করুন না কেন এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সন্ত্রাসীসের এপিসেন্টারে পরিনত হয়েছে । এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকেই শেখ হাসিনার পতনের ষড়যন্ত্রের বীজ বপন হয়েছিল । এখন হিন্দু ধর্মীয় আন্তর্জাতিক সংগঠন “ইসকন”কে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলির ছাত্র সংগঠনগুলি ষড়যন্ত্র শুরু করেছে । সুতরাং বর্তমান পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের শীর্ষ সামরিক প্রতিনিধিদলের বাংলাদেশ ভ্রমণ বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়,বরঞ্চ এটা ভারতের জন্য একটা অশনি সঙ্কেত বলে মনে করা হচ্ছে ।।

