এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২২ এপ্রিল : এসএসসি এর যোগ্য-অযোগ্য বাছাই নিয়ে ধোঁয়াশা অব্যাহত রেখেছে শাসকদল । গতকাল সোমবার বিকেল ৬ টায় যোগ্য ও অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করার কথা রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু ঘোষণা করলেও করা হয়নি । তারপর থেকেই এসএসসি ভবনের সামনে অবস্থানে বসেন চাকরিহারা শিক্ষকরা। রাতভর আচার্য সদনে আটকে রাখা হয় এসএসসি-এর কর্তাদের । এখনো এসএসসি ভবনের সামনে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন চাকরিহারা শিক্ষকরা । ‘ব্রাত্য-মমতার প্রতারণা ফাঁস’ করলেন বিজেপির যুবনেতা ও কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী তরুনজ্যোতি তিওয়ারি৷
তিনি এক্স-এ লিখেছেন,২৬ হাজার চাকরি বাতিলের পর ব্রাত্য-মমতার প্রতারণা ফাঁস! – আসল সত্য জেনে নিন।
সুপ্রিম কোর্টের রায়:
কলকাতা হাইকোর্ট যে ২৬ হাজার শিক্ষক নিয়োগকে বেআইনি ও দুর্নীতিগ্রস্ত বলে বাতিল করেছিল, সুপ্রিম কোর্ট সেই রায় বহাল রাখে। অর্থাৎ, এই চাকরিগুলি বাতিল বলে সর্বোচ্চ আদালত স্বীকৃতি দিয়েছে।
SSC ও রাজ্যের আর্জি:
রায়ের পর SSC ও রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করে, জানায়—যাঁরা এখনও পর্যন্ত “অযোগ্য” বলে নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত হননি, তাঁদের যেন কিছু সময় কাজ চালিয়ে যেতে দেওয়া হয়। নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের যেন ছাঁটাই না করা হয়।
সুপ্রিম কোর্টের স্পষ্ট Consent Order:
এই আবেদনের পর কোর্ট একটি সম্মতিমূলক আদেশ (Consent Order) জারি করে, যার মূল নির্দেশগুলি ছিল : আপাতত অযোগ্য না এমন প্রার্থীরা ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত চাকরি করতে পারবেন এবং বেতন পাবেন। রাজ্য ও SSC মে ২০২৫-এর মধ্যে নতুন নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে এবং সেই তথ্য এফিডেভিট আকারে কোর্টে দাখিল করতে হবে।
ডিসেম্বর ২০২৫-এর মধ্যে সম্পূর্ণ নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। যদি মে মাসে বিজ্ঞপ্তি না দেওয়া হয়, এই সাময়িক রিলিফও উঠে যাবে। এই আদেশের সাথে সব পক্ষ, রাজ্য সরকার, SSC—সকলেই একমত হয়েছিল। কোনো জোরজবরদস্তি, প্রতারণা, বা ফাঁকি ছিল না।
রাজ্যের নিজস্ব চিঠি:
এই Consent Order-এর পরেই রাজ্যের শিক্ষা দপ্তর কমিশনকে চিঠি পাঠায়, যেখানে তারা স্পষ্ট করে জানায়—নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনেই শুরু করা হবে। এখন আবার ‘Review’ নাটক কেন? এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ব্রাত্য বসু বলছেন তারা Supreme Court-এর রায় রিভিউ করবেন!
প্রশ্ন হল:
যেখানে তারা নিজেরাই কোর্টে গিয়ে আবেদন করেছিল,যেখানে তারা সম্মত হয়েছিল Consent Order-এ,যেখানে তারা ইতিমধ্যেই নতুন নিয়োগের কথা লিখিতভাবে জানিয়েছে—তাহলে এখন হঠাৎ করে রিভিউ চাওয়ার অর্থ কী? Supreme Court নিজেই বলেছে—”Fraud” ছাড়া Consent Order-এর রিভিউ চলে না। এখানে কোনো Fraud ছিল না—সব পক্ষের সম্মতিতে আদেশ হয়েছে।
“যোগ্য/অযোগ্য আলাদা করব”—এই নতুন প্রতারণা:
ব্রাত্য-মমতা বলছেন, তারা নাকি যোগ্য ও অযোগ্য প্রার্থীদের আলাদা করবে।
প্রশ্ন হচ্ছে:
এতদিন হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে বারবার সুযোগ পেয়েও সেটা করতে পারল না কেন? এখন করলে তার নিরপেক্ষতা, গ্রহণযোগ্যতা কোথায়? চাকরি হারানো শিক্ষকদের আন্দোলনকে স্তব্ধ করতে এখন একের পর এক মিথ্যাচার। এসবই একটা রাজনৈতিক চক্রান্ত, যাতে চাকরি হারানো মানুষজন আন্দোলন না করে।
আরো কতগুলো বিষয় আপনাদের জানা উচিত:
১. ২১/০৪/২৫ তারিখে যোগ্য-অযোগ্যদের লিস্ট পাবলিশ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কমিশন, তাহলে কেন করল না?
উ: প্রতিশ্রুতি মানেই প্রতারণা – কথাটা ভুলে গেছেন নাকি?
২. নিয়োগ দুর্নীতির জাল কতটা গভীর?
উ: কালীঘাটের টালির চালা পর্যন্ত পৌঁছে গেছে এই দুর্নীতির শিকড়।
৩. বারবার কাউন্সেলিং কেন করা হলো প্যানেলের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরেও?
উ: তৃণমূল সরকার যেন চাকরির বাজারে বসে ছিল। দাম বেড়েছে, কাউন্সেলিং ডেকেছে—চাকরি বিক্রি করেছে। তাই বারবার কাউন্সেলিং।
৪. বিজেপি এবং সিপিএম বারবার হাইকোর্টে গিয়ে প্যানেল ক্যানসেল করিয়ে দিচ্ছে। কেন করাচ্ছে?
উ: হাইকোর্টে গেলেই প্যানেল বাতিল হয় না। বাতিল হচ্ছে কারণ দুর্নীতি হয়েছে। তৃণমূলের তৈরি করা নিয়োগ মানেই দুর্নীতি—এই ধারণা থেকেই এর ফল।
সত্যিটা বুঝুন—
যারা নিজেদের ‘যোগ্য চাকরিপ্রার্থী’ বলছেন, তারা WBSSC অফিসের সামনে নয়, মমতা ব্যানার্জির বাড়ির সামনে বিক্ষোভ করুন।
যারা টাকা খেয়ে চাকরি বিক্রি করেছে, তৃণমূলের সেই নেতাদের বাড়ির সামনে প্রশ্ন তুলুন—“কেন চাকরি বিক্রি হলো?”
যোগ্য আর অযোগ্যদের আলাদা করলো না কেন?
কারণ জানতো, করলে অনেকে টাকা ফেরত চাইবে। তাদের হাতে ছিল দুটো রাস্তা:
১. পুরো প্যানেল বাতিল
২. পুরো প্যানেল বাঁচিয়ে রাখা
কিন্তু তারা কী করল?
চাল আর ডাল মিশিয়ে একদম খিচুড়ি বানাল।
এবং সেই খিচুড়ি সুপ্রিম কোর্টে পরিবেশন করে বলল—“এইটাই স্বাস্থ্যকর।”
সুপ্রিম কোর্টও বুঝে গেল খেলা, তাই ডিভিশন বেঞ্চের মতোই পুরো প্যানেল বাতিল করল। এখন আবার বলছে, রিভিউ করবে?
যে CONSENT ORDER হয়েছে, তাতে স্পষ্ট বলা আছে—মে মাসে বিজ্ঞপ্তি, ডিসেম্বরের মধ্যে পরীক্ষা শেষ। এরপরও যদি কেউ রিভিউর স্বপ্ন দেখে, তবে বলতে হয়— ভগবান তাদের সুবুদ্ধি দিন।
এদিকে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু চাকরিহারাদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন,’এমন কিছু করবেন না, যাতে পুনর্নির্বিবেচনার আর্জি জানাতে কোনও অসুবিধা হয়৷’ এসএসসি দফতরে কেন আধিকারিকদের আটকে রাখা হল, সেই প্রশ্নও তুলেছেন তিনি । পাশাপাশি আন্দোলন প্রত্যাহারের আবেদন জানান তিনি । তিনি বলেছেন,১৭,২০৬ জন যে যোগ্য তা মধ্যশিক্ষা পর্ষদ হলফনামা দিয়ে জানিয়েছে। আমাদের সেই ক্ল্যারিফিকেশন অনুযায়ী, যোগ্য শিক্ষকরা কাজে ফিরুন। চাকরি বহাল রাখা বা বেতন দেওয়ার জন্য সবরকমভাবে চেষ্টা করছে শিক্ষা দফতর। এদিকে জানা গেছে যে যোগ্য-অযোগ্য বাছাই সমস্যা নিরসনে আলোচনার জন্য ১৩ জনের প্রতিনিধি দল আচার্য সদনে পৌঁছে গেছেন ।।