প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২০ এপ্রিল : ‘শিল্প বাণিজ্য বিষয়ক কোন প্রয়াস সফল করতে গেলে সততার দরকার। সেটা এই রাজ্যের সরকারের নেই ।’ বুধবার বর্ধমানে এসে রাজ্য সরকার আয়োজিত ’বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন ’ নিয়ে এমনটাই কটাক্ষ করলেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার।একই ভাবে বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পলও ’বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন’ নিয়ে তীব্র কটাক্ষ করেছেন । অন্যদিকে রাজ্য বিজেপি সভাপতি ও বিধায়কের এমন কটাক্ষের কড়া জবাবও দিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব ।
দলীয় কাজে এদিন বেলায় পূর্ব বর্ধমান জেলা
বিজেপি কার্যালয় রাসবিহারী বসু ভবনে আসেন সুকান্ত মজুমদার। পরে তিনি সেখানেই সাংবাদিক বৈঠক করেন।রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার সাংবাদিকদের জানান ,রাজ্য সরকার যে বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের য়োজন করেছে তাকে আমরা স্বাগত জানিয়েছি।কিন্তু এই ধরণের প্রয়াস সফল করতে হলে সততার দরকার। সেই সততা রাজ্য সরকারের নেই।এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাজ্যপালকে পূর্বতন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র হিসাব দিয়েছিলেন,’২০১৫ থেকে ১৯ সাল এর মধ্যে ১২ লক্ষ ৩২ হাজার কোটি টাকার মউ সাক্ষর হয়েছে’।সুকান্তবাবু প্রশ্ন তোলেন,পূর্বতন অর্থ মন্ত্রীর দেওয়া এই তথ্য কি স্বপ্ন, নাকি বাস্তব?কারণ রাজ্য সরকারের হিসাব বলছে, ৮ বছরে ২ লক্ষ ২৫ হাজার কোটি টাকার মত শিল্প উৎপাদন বেড়েছে।তাহলে রাজ্য সরকারের দেওয়া আগের পরিসংখ্যানে তথ্যে ধরা পড়ছে না কেন ?
বিশ্ববঙ্গ বানিজ্য সম্মেলন নিয়ে কটাক্ষ করতে গিয়ে সুকান্ত মজুমদার আরও বলেন,রাজ্য সরকার দাবি করে থাকে গত আট বছরে ২৮ লক্ষ কর্মসংস্থান হয়েছে। আবার তাদের দেওয়া হিসেবেই দেখা যাচ্ছে রাজ্যের ১৯ লক্ষ মানুষ ’ই-এস-আই’ তে যুক্ত।এর মধ্যে সরকারি কর্মীদের একাংশও আছেন।এই পরিসংখান তুলে ধরে সুকান্তবাবু বলেন, এত পরিমাণ বিনিয়োগ হয়ে থাকলে তো রাজ্যে ’করের ভান্ডার’ উপচে পড়ার কথা। তাহলে রাজ্য সরকার কোনোক্রমে চলছে কেনো? কেনই বা রাজ্য সরকারের ভাঁড়ে মা ভবানী অবস্থা ? তাহলে কি এসবই গাঁজাখুরি হিসেব দেওয়া হয়েছিল?এই প্রশ্নও তোলেন সুকান্ত মজুমদার । এমনকি কাটোয়ায় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি না হওয়ার জন্যেও বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্ত মজুমদার এদিন রাজ্য সরকারকে দায়ী করেন ।
পাশাপাশি সুকান্ত মজুমদার এও বলেন, আমরা নীতিগত ভাবে শিল্পের পক্ষে। দেউচা পাঁচামিতে বাইরের লোকেদের বাসে ভাড়া করে নিয়ে গিয়ে ওখানকার আদিবাসীদের ভয় দেখাতে চেয়েছিল শাসকদল। স্থানীয় মানুষের তাড়া খেয়ে তৃণমূলের নেতারা বাসে চেপে সেখান থেকে দ্রুতগতিতে পালিয়েছে ।কিন্তু বিজেপি সেই পথের পথিক নয় ।তাই সেখানকার মানুষের মতামত শুনতে বিরোধী দলনেতার নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল দেউচা পাঁচামিতে গিয়েছে।
‘বেঙ্গল সামিট‘ নিয়ে রাজ্য বিজেপি সভাপতির
মতোই কটাক্ষ করেছেন বিজেপি বিধায়ক তথা বিজেপি রাজ্য মহিলা নেত্রী অগ্নিমিত্রা পল । বীরভূমের দেউচা পাঁচামী যাওয়ার পথে তিনি এদিন বর্ধমানের বিজেপি পার্টি অফিসে এসে ’বেঙ্গল সামিট‘ নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবী করেন। অগ্নিমিত্রা পল বলেন,’২০১৬ সাল থেকে এসব নাটক হচ্ছে। ক’টা ছেলে চাকরী পেয়েছে? বলা হচ্ছে, সাড়ে ১২ বারো হাজার কোটি টাকার লগ্নি হয়েছে । তাহলে তাতে কটা কারখানা হয়েছে তা নিয়ে রাজ্য সরকার শ্বেতপত্র প্রকাশ করুক।একই সঙ্গে অগ্নিমিত্রা পল বলেন,“সিঙ্গুর নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন ,জোর করে কারুর কাছ থেকে জমি অধিগ্রহণ করা যাবে না।আর এখন কি সরকারে আসার পর তিনি সেই কথা ভুলে গিয়েছেন“। বিজেপির আট সদস্যের বিধায়ক প্রতিনিধি দল এদিন দেউচা পাঁচামীর উদ্দেশ্যে রওনা দেন ।তার নেতৃত্বে থাকবেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।তারা ওখানে জমি জোরপূর্ব অধিগ্রহণে বাধা দেবেন। পাশাপাশি সঠিক ক্ষতিপূরণ ও পুর্নবাসনেরও দাবী জানাবেন বলে বিজেপি নেতৃত্ব এদিন জানিয়েছেন ।
বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন নিয়ে বিজেপি নেতা নেত্রীদের করা এইসব কটাক্ষের কড়া জবাব দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যের মুখপত্র দেবু টুডু। তিনি বলেন,’বিধানসভা নির্বাচন ও তারপর থেকে রাজ্যে যতগুলি নির্বাচন হয়েছে সবেই রাজ্যের মানুষ বিজেপিকে প্রত্যাক্ষান করেছে ।তার কারণে বিজেপির নেতানেত্রীরা এখন এমন উন্মাদন সুলভ কথাবার্তা বলছেন । পশ্চিমবঙ্গ সরকার আয়োজিত বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে দেশ বিদেশের নামজাদা এত শিল্পপতিদের উপস্থিতি দেখে বিজেপি নেতাদেরও চোখ কপালে উঠে গিয়েছেন । কারণ বিজেপি পরিচালিত কেন্দ্রের সরকার দেশটাকে পুঁজিপতিদের হাতে বিক্রী করে দিচ্ছে । আর সেই পথে না হেঁটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উল্টে বড় শিল্পপতিরা বাংলায় এনে বিনিয়োগ কারার আহ্বান জানাচ্ছেন । তাঁরা যাতে বাংলায় শিল্প গড়ে তোলেন তার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন । কারণ বাংলায় নতুন নতুন শিল্প হলে বহু যুবক যুবতীর কর্মসংস্থান হবে । আর এটাই মন থেকে মেনে নিতে পারেননি বলেই বিজেপির নেতা নেত্রীরা বশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন নিয়ে কটাক্ষ করছেন ।’ এর জবাবও বাংলার যুবক যুবতীরা আগামী দিনে বিজেপিকে দিয়ে দেবে বলে দেবু টুডু দাবী করেছেন ।।