প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১১ এপ্রিল : বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষকে নিয়ে কতই না গরম গরম কথা বলে চলেছেন তৃণমূল প্রার্থী কীর্তি আজাদ।অথচ সেই দিলীপ ঘোষই ঈদের দিন ভিড়ে গেলেন তৃণমূল শিবিরে।তাঁকে বুকে জড়িয়ে ধরে নিয়ে আলিঙ্গন করা থেকে শুরুকরে হাসিমুখে ’সেলফিও’ তুললেন তৃণমূলের শিবিরে থাকা নেতা ও কর্মীরা। একই ভাবে দিলীপ ঘোষও হাসিমুখে তৃণমূলের নেতা ও কর্মীদের বুকে জড়িয়ে নিয়ে শুভেচ্ছাও জানালেন।আর ভরা ভোটের বাজারে দিলীপ ঘোষের এমন কীর্তিতে তৃণমূল প্রার্থী কীর্তি আজাদের গোঁসা হওয়াটাই স্বাভাবিক।তবে সেসব কে পাত্তা না দিয়ে দিলীপ ঘোষ খুশির মেজাজেই তৃণমূলের নেতা ও কর্মীদের আতিথেয়তা উপভোগ করলেন।তার মধ্যেই তৃণমূল কর্মীরা ‘জয় বাংলা’ স্লোগান, মমতা এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে স্লোগান দিলেও দিলীপ ঘোষ কিন্তু মেজাজ হারাননি। এ নিয়ে কটাক্ষ করে সিপিএমের নেতারা আবার বলছেন ’সেটিংয়ের’ রাজনীতিতে কিছুই অসম্ভব নয় । বর্ধমান দুর্গাপুর লোকসভা আসনে বিজেপি এবার দিলীপ ঘোষকে প্রার্থী করেছে।তাঁর বিপক্ষে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হয়ে ভোটে লড়ছেন প্রাক্তন ক্রিকেটার কীর্তি আজাদ।এই আসনে সিপিএম প্রার্থী করেছে বর্ধমান মহিলা কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সুকৃতি ঘোষালকে। তবে বর্ধমান দুর্গাপুর লোকসভা আসনে লড়াইটা মূলত তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপি। ২০১৯ শের লোকসভা ভটে এই আসনে পদ্ম ফুটেছিল । তাই এবারও এই আসন ধরে রাখতে মরিয়া পদ্ম শিবির।অন্যদিক গত লোকসভা ভোটের কথা ভুলে এবার এই আসনে ২০১৪ মত ফের ঘাসফুল ফোটাতে ব্যাকুল তৃণমূল । তাই লড়াইয়ের ময়দানে তৃণমূল বা বিজেপি কেউই কাউকে এই ইঞ্চি জায়গা ছাড়তে নারাজ। আর সেই জাঁতকলে পড়ে সিপিএম এখনও যেন কিছুতেই সেভাবে ’লাইমলাইটে’ উঠে আসতে পারছে না ।
প্রচারেও তৃণমূল ও বিজেপি প্রার্থীর মধ্যে চলছে সমানে সমানে টক্কর । তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষ ও তৃণমূল প্রার্থী কীতি আজাদের বাক যুদ্ধের লড়াই। একে অপরের বিরুদ্ধে গরম গরম কথার লড়াইও এখন রোজকার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে নিয়ে অসাংবিধানিক কথা বলার জন্যে বিজেপি দল এবং নির্বাচন কমিশনও ইতিমধ্যেই দিলীপ ঘোষকে সতর্ক করে দিয়েছে। তবুও বির্তকিত মন্তব্য, আলগা কথা,এসব চলছেই । চর্চার শেষ নেই দিলীপ ঘোষকে নিয়েওয়। তবে তিনি দিলীপ ঘোষ। তাই বির্তক ও চর্চার মাঝেও ভোটের বাজারে চমক দিতে তিনি ছাড়ছেন না।
ঈদের দিনেও দিলীপ ঘোষ চমক দিলেন। শুধু চমক দেওয়াই নেয় ,শাসকদলকেও তিনিরযেন চমকে দিলেন।তবে অবশ্য কোন হালকা বা বিতর্কিত কথা বলে নয়। বর্ধমান দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষ অন্যান দিনের মতো বৃহস্পতিবারও প্রাতঃভ্রমণ কর্মসূচিতে বের হন। সেই কর্মসূচীয় শেষ করে তিনি ভোটের প্রচারে ভাতাড়ের ওড়গ্রামে যাচ্ছিলেন। যাওয়ার পথে হঠাৎতই তিনি তাঁর গাড়ি দাঁড় করিয়ে গাড়ি থেকে নেমে ঢুকে পড়েন তালিতের দিঘীরপাড়ে তৃণমূল কংগ্রেসের অনুষ্ঠানে। সেখানে বাঘাড় ২ নম্বর অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে দলীয় কার্যালয়ে ঈদ উপলক্ষে জলছত্র শিবিরের আয়োজন করা হয়েছিল।ওই সনয় সেখানে বর্ধমান উন্নয়ন সংস্থার চেয়ারম্যান তথা বর্ধমান ১ নম্বর ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি কাকলি তা উপস্থিত ছিলেন। দিলীপ ঘোষ জলছত্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ঢুকে মাইক হাতে সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানান। শিবিরে থাকা তৃণমূলের নেতা ও কর্মীদের অনেকে পাল্টা শুভেচ্ছা জানাতে দিলীপ ঘোষকে বুকে জড়িয়ে ধরেন । ওই শিবিরে থাকা তৃণমূলের অনেকে আবার দিলীপ ঘোষের সঙ্গে সেলফিও তুললেন। একই কায়দাও দিলীপ ঘোষও শিবিরে থাকা সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে ভাল থাকার কথা বলেন। মিনিট পাঁচেক সেখানে সবার সঙ্গে হাসি মুখে কাটিয়ে দিলীপ ঘোষ পুণরায় ভাতাড়ের উদ্দেশ্যে রওনা দেন।
এবিষয়ে দিলীপ ঘোষ বলেন ,“ভালবাসার ঈদের দিনে হওয়া ওই জলছত্রে টিএমসির ঝাণ্ডা ছিল ঠিকই । তবে ওরাও আমায় ডাকলে । আমিও ওডের শিবিরে গিয়ে সরবৎ খেলাম, মুসলিম ভাইয়েদের সঙ্গে কোলাকুলি করে সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়েছি। সামনেই চড়ক , রামনবমী, নীল পুজোতেও যাতে এই সম্প্রতি বজায় থাকে সেই আবেদন শিবিরে থাকা সবাইকে জানিয়েছি । এ নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যের মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস বলেন,“মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূলের সবাইকে সৌজন্যতা বোধ শিখিয়েছেন।
সেই সৌজন্যতা বোধের প্রকাশ আমাদের বর্ধমানের তৃণমূলের নেতা কর্মীরাও এদিন দিলীপ ঘোষের সঙ্গে দেখিয়েছে । এটা তৃণমূলই পারে বলে প্রসেনজিৎ দাস মন্তব্য করেন“ । সিপিএমের নেতারা অবশ্য এইসব কে কোন গুরুত্ব দিতে চান নি ।উল্টে কটাক্ষের সুরে তারা বলেন, সেটিং থাকলে এমন অনেক কিছেই হওয়া সম্ভব ।।