এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,৩১ আগস্ট : আরজি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তরুনী চিকিৎসকের ধর্ষণ বা গনধর্ষণের পর নৃশংস বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রাইকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মামলার ইতি টানতে চেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ও তার অধীন কলকাতা পুলিশ ! কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির কথায় এবং কলকাতা পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের নেতৃত্বে তদন্ত প্রক্রিয়ায় ভরসা রাখতে পারেননি নিহত তরুনী চিকিৎসকের পরিবার ও সাধারণ মানুষ । মামলা গড়ায় হাইকোর্টে । শেষ পর্যন্ত কলকাতা পুলিশের পরিকল্পনায় জল ঢেলে দিয়ে আদালতের পর্যবেক্ষণে মামলার তদন্তের ভার তুলে দেওয়া হয় সিবিআইয়ের হাতে । গত ৮ আগস্ট ওই বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের পর সঞ্জয় রাই ছাড়া এখনো কেউ গ্রেফতার হয়নি । ইতিমধ্যে বেশ কিছু অডিও বা ভিডিও রেকর্ড এবং ছবি ভাইরাল হয়েছে যাতে পুলিশের বিরুদ্ধে প্রমান লোপাট ও তদন্তে গাফেলতির অভিযোগ আরও জোরালো হচ্ছে । ফলে চরম অস্বস্তিতে পড়তে হচ্ছে কলকাতা পুলিশকে । আর তার সাফাই দিতে গিয়ে নাকানিচুবানি খেতে হচ্ছে কলকাতা পুলিশকে । এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির পদত্যাগ ও তার পলিগ্রাফ টেস্টের দাবি তুললেন বিজেপি নেতা অমিত মালব্য ।
আরজি করের ওই বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের পরের দিন অর্থাৎ ৯ আগস্ট অকুস্থল হাসপাতালের সেমিনার হলে এমন কিছু মানুষের উপস্থিতির কথা বলা হচ্ছে যে যাদের সেখানে উপস্থিত থাকার কথা নয় । একটা বাংলা খবরের চ্যানেলে এমনই একটা ভিডিও দেখানো হয় যেখানে রহস্যজনক ব্যক্তিদের উপস্থিতি নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে । যার সাফাই দিতে শুক্রবার সাংবাদিক সম্মেলন করে ডিসিপি সেন্ট্রাল ইন্দিরা মুখার্জি বলেছিলেন,’আমরা দেখেছি যে একটি নির্দিষ্ট নিউজ চ্যানেল রয়েছে যা সেমিনার হলের একটি ভিডিও এবং কিছু ছবি দেখিয়েছে যা এই ঘটনার স্থান। সেখানে দেখা গেছে, কর্ডন করা জায়গার ভেতরে অনেক লোক দাঁড়িয়ে কথা বলছে, এবং এই লোকগুলো কারা তা স্পষ্ট নয়, এমন কিছু লোক আছে যাদের সেখানে থাকার কথা ছিল না প্রমাণের কিছু টেম্পারিং হয়েছে আমরা সেই ভিডিও থেকে একটি স্থিরচিত্র নিয়েছি ৷’ তিনি বলেন,’এই ছবিতে যারা ছিলেন তাদের প্রত্যেককে আমরা শনাক্ত করতে পেরেছি… কর্ডনের ঠিক পেছনেই মৃতদেহ… আমাদের কাছে গোয়েন্দা বিভাগের একজন ভিডিওগ্রাফার, পুলিশ কমিশনার, অতিরিক্ত সিপি-১, লেডি পুলিশ এবং ফরেনসিক কর্মকর্তারা এখানে। সবাই আমাদের পরিচিত এবং চিহ্নিত। এছাড়াও আরও একটি ছবি এবং নতুন সেটের লোক রয়েছে। আমাদের সাক্ষী ডাক্তার, এফএসএল, ফিঙ্গারপ্রিন্ট বিশেষজ্ঞ, গোয়েন্দা বিভাগের এসিপি, ভিডিওগ্রাফার, অতিরিক্ত সিপি -১ এবং ফরেনসিক কর্মকর্তারা রয়েছেন। এই ছবি বা ভিডিওটি সেই সময়ের, যখন তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ হয়ে গিয়েছিল… কোন সময়েই এই এলাকায় কেউ প্রবেশ করতে পারবে না যারা অনুমোদিত নয়। তদন্ত প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত নয় এমন কেউ প্রবেশ করেনি ।’
সেমিনার হলের পালটা স্থির চিত্রে পর্দা দিয়ে ঢাকা মৃতদেহের পাশে একজন অজ্ঞাত ব্যক্তির উপস্থিত থাকার কথা দাবি করা হচ্ছে । অমিত মালব্য ওই ছবি পোস্ট করে টুইট করেছেন,’মমতা ব্যানার্জির কলকাতা পুলিশের সেন্ট্রাল ডিসি ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়কে ব্যবহার করে সবচেয়ে জঘন্য মিথ্যাচার করছেন । অনেক কিছু আপোস করে তাকে চাকরিতে নিয়োগ দেওয়া হয় ।
গতকাল, তিনি দাবি করেছিলেন যে অপরাধের দৃশ্য বা পিওসি-এর সঙ্গে আপোস করা হয়নি। কয়েক ঘন্টা পরে, ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের পশ্চিমবঙ্গ শাখা, কলকাতা পুলিশ সত্য-তদন্ত করেছে। বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক চ্যানেলও মমতা সরকারের দাবিকে অস্বীকার করেছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উপর প্রমাণ লোপাট এবং ম্যানিপুলেশনের অভিযোগের কারণে প্রেসকে ডাকা হয়েছিল। কলকাতা পুলিশের মুখপাত্র পরামর্শ দিয়েছেন যে লাল টি-শার্ট পরা লোকটি একজন ‘আঙ্গুলের ছাপ’ বিশেষজ্ঞ। সত্য, তবে, তিনি হলেন ডক্টর আভিক দে, ভবানীপুরের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনী এলাকার একটি পশ্চিমবঙ্গ সরকারি হাসপাতাল, এসএসকেএম-এর সার্জারি বিভাগে প্রথম বর্ষের স্নাতকোত্তর প্রশিক্ষণার্থী।
এমএস প্রোগ্রামে তার ভর্তি নিয়ে সংশয়ের মেঘ দেখা দিয়েছে। ডাঃ দে, ডব্লিউবি চিকিৎসা সম্প্রদায়ের অনেকেই বিশ্বাস করেন, প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি এবং রাজনৈতিক স্বজনপ্রীতির প্রতীক, যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে পশ্চিমবঙ্গের বিপর্যস্ত স্বাস্থ্যসেবা খাতের গভীরে প্রবেশ করেছে ।’ এরপর তিনি লিখেছেন,এখন প্রশ্নগুলো হল: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও কলকাতা পুলিশ কী আড়াল করতে চাইছে? তারা কাকে রক্ষা করতে চাইছে? যদি না করে, তাহলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পদত্যাগ করুন এবং নিজের পলিগ্রাফ টেস্টের অনুমতি দিন । তা না হলে, আরজি কর এমসিএইচ-এর তরুণী মহিলা ডাক্তারকে যারা ধর্ষণ ও হত্যা করেছিল সেই অপরাধী সিন্ডিকেটের সত্যতা বেরিয়ে আসবে না।’।