এইদিন ওয়েবডেস্ক,মালদা,২৫ আগস্ট : মালদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্তব্যরত অবস্থায় ময়ূরাক্ষী ঘোষ নামে মহিলা ইন্টার্নকে শারিরীক ভাবে নিগ্রহ করার অভিযোগ উঠেছে মহম্মদ মিজানুর রহমান নামে অন্য এক ইন্টার্নের বিরুদ্ধে । গত ২১ শে আগস্ট রাতে ঘটনার পর শুক্র ও শনিবার দফায় দফায় কলেজের অধ্যক্ষ ডঃ পার্থপ্রতীম মুখার্জিকে ঘিরে তুমুল বিক্ষোভ দেখায় বেশ কিছু ইন্টার্ন । তারপরে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় আজ সোমবার মালদা মেডিকেল কলেজে বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি । উপস্থিত ছিলেন বিজেপি নেতা শ্যামচাঁদ ঘোষ, বিশ্বজিৎ রায়, যুব মোর্চার নেতা শুভঙ্কর চম্পটি সহ অনান্যরা । তারা স্লোগান দিতে দিতে মালদা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ এবং সহকারী অধ্যক্ষের ঘরে যান । মহিলা ইন্টার্নকে শারিরীক হেনস্থাকারী ইন্টার্ন সহ যুক্ত বাকিদের শাস্তির দাবিতে তারা একটি স্মারকলিপিও জমা দেন ৷ বিজেপি কলেজ কর্তৃপক্ষকে হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে শাস্তি মূলক ব্যবস্থা না নিলে তারা বৃহত্তর আন্দোলনে নামবেন । অধ্যক্ষ জানিয়েছেন যে একটা তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে৷ তারা ঘটনা তদন্ত করে দেখছে । রিপোর্ট পাওয়ার পর কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শ্যামচাঁদ ঘোষ বলেন,’আমরা আরজিকর দেখেছি, কসবা দেখেছি৷ গত ২১ শে আগস্ট ঘটনার পর ৭২ ঘন্টা হয়ে গেছে । এখনো মিজানুর রহমান ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে এফআইআর পর্যন্ত হয়নি । একান্ত মহিলা চিকিৎসক নিজেকে সুরক্ষিত মনে করতে পারছেন না বলে কাজে যোগ দিতে পারছেন না । আমরা ধিক্কার জানাই ।’এদিকে মালদা জেলার তৃণমূলের সভাপতি আব্দুল রহিম বক্সি বলেন, ‘যেভাবে মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষকে ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে তা উচিত হয়নি । যে ঘটনা ঘটেছে তার জন্য প্রশাসন আছে এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আছে ।’ পাশাপাশি কলেজের বামপন্থী ইন্টার্নরা বিজেপির বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করার অভিযোগ তুলেছেন ।
এদিকে আজ বিজেপি নেত্রী লকেট চ্যাটার্জি আক্রান্ত ইন্টার্ন ময়ূরাক্ষী ঘোষের আতঙ্কিত অবস্থায় রেকর্ড করা একটি ভিডিওকে সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছেন । সেই ভিডিওতে মালদা মেডিকেল কলেজের ওই ইন্টার্নকে বলতে শোনা গেছে, নমস্কার, আমি ময়ূরাক্ষী ঘোষ, মালদা মেডিকেল কলেজের ইন্টার্ন ডাক্তার । আমার সাথে অত্যন্ত নিন্দনীয় একটা ঘটনা ঘটেছে তাই আমি ভিডিও করতে বাধ্য হয়েছি । গত একুশে আগস্ট আমার সার্জিক্যাল বিভাগে নাইট ডিউটি ছিল । আমার সঙ্গে আরও এক ইন্টার্ন মোহাম্মদ মিজানুর রহমান ছিল । সার্জিক্যালে প্রচুর ভিড় ছিল । আমি পেশেন্ট দেখছিলাম । কিন্তু আমার কো-ইন্টার্ন পেশেন্ট দেখছিল না । আমি তাকে বারবার রিকোয়েস্ট করি যে তুই পেশেন্ট দেখ । অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করে । তারপরেও আমি শান্ত থাকি ।’ তরুণি চিকিৎসক জানিয়েছেন যে কোন কিছুতেই পেছনে যেতে রাজি করানো যায়নি মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে । এরপর দুজনাই “ইউনিটের দাদাদের” সঙ্গে কথা বলেন । তরুণী চিকিৎসকের অভিযোগ যে তিনি যখন ফোনে কথা বলছিলেন সেই সময় মিজানুর তার ফোনটি ছিনিয়ে নেয় । ফলে তার ডান দিকের মাথার চুল ছিঁড়ে যায় । রগে আঘাত লেগে লাল হয়ে যায় । তিনি গেলেন যে সমগ্র ঘটনাটি পেসেন্ট পার্টির সামনে ঘটেছিল এবং প্রচন্ডভাবে তিনি মানসিকভাবে আঘাত পান ।
তিনি আরো জানিয়েছেন যে ইউনাইটেড সিনিয়ররা বিষয়টি এড়িয়ে যায় । তখন একজন ব্যাচমেট তাকে সাহায্যর জন্য এগিয়ে আসে ৷এজন্য তার ব্যাচমেটকে মিজানুরের বাড়ির লোকেরা ফোন করে হুমকি দেয় এবং গালাগালি করে । ওরা ফোন করে জানায় যে ১০-১২ জন লোক এসে তাকে মারবে । তরুনী চিকিৎসক আর অভিযোগ করেছেন যে তাকে তার ব্যাচমেট এবং অধ্যক্ষ সহ চারজন ডাক্তারকে মিজানুরের বাড়ির লোকজন আরো কয়েকজন অধ্যক্ষের ঘরে দীর্ঘ 12 ঘন্টা ঘেরাও করে রেখে দেয় । তাদের মধ্যে কয়েকজনের নাম ও তিনি জানিয়েছেন । তরুণীর কথামতো তারা হলো : মোহাম্মদ ইশান শেখ, অন্তু নন্দী,হাফিজুল শেখ, কঙ্কিত সরকার, দেবস্মিতা রয় এবং পৃথা রয়৷ এরা ছাড়াও অন্তত ৩০ জন চিৎকার চেঁচামেচি করে তার বক্তব্য পেশ করতে দেয় না । তরুনী ডাক্তার কান্নাভেজা গলায় বলেন, ‘আমি খুব আতঙ্কিত হয়ে আছি । ভয়ে আমি ডিউটি পর্যন্ত করতে যেতে পারছি না ।’ তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘কর্তব্যরত একজন চিকিৎসকের গায়ে হাত তোলা কতটা ন্যায়সঙ্গত ? অন্যায়ের প্রতিবাদ করা আমার ব্যাচমেটকে মারধরের হুমকি দেওয়া কতটা ন্যায় সঙ্গত ?’
বিজেপি নেতৃত্বে লকেট চ্যাটার্জি এ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও পুলিশ মন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে কার্যত তুলোধুনা করেছেন৷ তুমি লিখেছেন, ‘আর জি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে উভয় ঘটনার এক বছরের মধ্যে, মালদা মেডিকেল কলেজে দায়িত্ব পালনকালে একজন মহিলা ইন্টার্ন ডাক্তার যে ভয়াবহ মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন সে সম্পর্কে তার নিজের বক্তব্য । হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কি ব্যবস্থা নেবে? নাকি অভিযুক্ত মীজানুর রহমান এর থেকে মুক্তি পাবে? এই ডাক্তার কি বাঙালি নয়? এই মেয়েটা কি বাঙালি নয়? যতদিন এই অকেজো স্বাস্থ্যমন্ত্রী/পুলিশমন্ত্রী/মুখ্যমন্ত্রী ক্ষমতায় থাকবেন, ততদিন পশ্চিমবঙ্গে মহিলাদের কোনও নিরাপত্তা থাকবে না।’।

