এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,০১ মার্চ : আর বড়জোর মেরেকেটে একটা বছর । তারপরেই এরাজ্যের বিধানসভার নির্বাচন । এতদিন কংগ্রেস, বামফ্রন্ট ও তৃণমূল কংগ্রেস মূলত এরাজ্যের ৩০ শতাংশের অধিক মুসলিম ভোটব্যাংককে ধরে রাখতে ছক কষত । কিন্তু তাদের সেই ছক ভন্ডুল করে দিয়েছে শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশের হিন্দু নির্যাতনের ঘটনা । যা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে ব্যাপক প্রচার চালায় বিজেপি ও বিভিন্ন হিন্দু সংগঠনগুলি । যার কারনে পশ্চিমবঙ্গে ‘হিন্দু জাগছে’ বলে মনে করছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । তার আশা যে আর ৪ থেকে ৫ শতাংশ হিন্দু ভোটকে বিজেপির পক্ষে আনতে পারলে এরাজ্যে ১৫ বছরের তৃণমূলের শাসনের অবসান ঘটানো সম্ভব । আর শুভেন্দু এই সমীকরণই ভাবাচ্ছে তৃণমূল সুপ্রীমো মমতা ব্যানার্জিকে । মমতা ব্যানার্জি মুসলিম ভোটব্যাঙ্ক নিয়ে একপ্রকার নিশ্চিত । তাই ক্ষমতায় টিকে থাকতে গেলে হিন্দু ভোটব্যাঙ্ককে তাকে সুরক্ষিত রাখতেই হবে । মূলত এই লক্ষ্যে হিন্দুদের আকর্ষণ করতে ‘সনাতনীয় পথসভা’র আয়োজন করতে শুরু করেছে রাজ্যের শাসকদল ।
শুক্রবার(২৮ ফেব্রুয়ারী) বিকেল ৪ টা থেকে কলকাতা শহরতলি মেচেদার পাঁচ মাথার মোড়ে ‘সনাতনীয় পথসভা’র আয়োজন করা হয়েছিল । গলায় গেরুয়া উত্তরীয় ঝুলিয়ে মঞ্চে উপিস্থিত ছিলে তৃণমূলের মন্ত্রী থেকে তাবড় নেতারা । উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী রাজীব ব্যানার্জি, প্রবীর ঘোষাল প্রমুখ । তৃণমূল কংগ্রেসের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পেজে বলা হয়েছে যে পশ্চিমবঙ্গ ব্রাহ্মণ ট্রাস্টের উদ্যোগে এই পথসভা আয়োজিত হচ্ছে এবং মেচেদার পথসভায় সনাতনীয় ব্রাহ্মণ ট্রাস্টের রাজ্য সম্পাদক শ্রীধর মিশ্রও উপস্থিত ছিলেন । কিন্তু তৃণমূলের ‘সনাতনীয় পথসভা’কে ‘এক নির্লজ্জ ভণ্ডামির প্রদর্শনী’ বলে অবিহিত করেছেন রাজ্য বিজেপির যুব মোর্চার সহ সভাপতি তথা কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী তরুনজ্যোতি তিওয়ারি ।
তিনি আজ এনিয়ে এক্স-এ লিখেছেন,’তৃণমূলের ‘সনাতনীয় পথসভা’ – এক নির্লজ্জ ভণ্ডামির প্রদর্শনী! দিনরাত সনাতন ধর্মের অপমান, কটাক্ষ আর ভোট ব্যাংকের রাজনীতি করা তৃণমূল কংগ্রেসের হঠাৎ করে ‘সনাতনী পথসভা’ আয়োজন দেখে গোটা পশ্চিমবঙ্গের মানুষ হতবাক। এটা কি শুধুই নির্বাচনী মৌসুমের হঠাৎ হিন্দু সাজার নাটক, নাকি ভোটের সময় এসে সনাতনীদের বিভ্রান্ত করার Al-Taqiya রাজনীতি?’
তিনি লিখেছেন,’যে দল মহাকুম্ভ মেলার মতো পবিত্র সনাতন ধর্মীয় আয়োজনকে মৃত্যুকুম্ভ বলে অপমান করেছিল, যেই দলের নেত্রী সরাসরি দুর্গাপুজো, সরস্বতী পুজোর ওপরে একের পর এক বিধিনিষেধ আরোপ করেছে, সেই দল আজ সনাতনীদের পাশে থাকার নাটক করছে! রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘সনাতনী পথসভা’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ অনুগামী রাজীব ব্যানার্জিকে দিয়ে হিন্দু ভোট টানার এই ভণ্ডামি এবার আর কাজ করবে না। আজ যারা ‘সনাতনী পথসভা’ করছে, তারাই কাল বলত “রামনাম সত্য নয়”।’
তরুনজ্যোতি লিখেছেন,’যে তৃণমূল কংগ্রেস মসজিদে আজান বন্ধ করতে পারেনি, সেই দল মন্দিরে মাইক বন্ধ করেছিল। যারা পীর দরগার জন্য কোটি কোটি টাকা দান করে, সেই দল আজ ‘হিন্দু’ সাজতে মাঠে নেমেছে। হিন্দুরা সব মনে রেখেছে : দুর্গাপুজোর বিসর্জনের ওপরে বিধিনিষেধ । সরস্বতী পুজোর অনুমতি না দেওয়া । রামনবমী মিছিলে লাঠিচার্জ । মহাকুম্ভকে মৃত্যু কুম্ভ বলা । হিন্দু ধর্মকে অশালীন ভাষায় আক্রমণ ।’
সবশেষে বিজেপির যুবমোর্চার এই নেতা লেখেন, ‘তৃণমূলের এই Al-Taqiya নীতি এখন আর পশ্চিমবঙ্গের সনাতনীদের চোখে ধুলো দিতে পারবে না। সনাতনীরা জানে কারা তাদের পাশে ছিল, আর কারা শুধু ভোটের আগে তাদের ব্যবহার করতে আসে।ভোট এলে সনাতনী, ভোট গেলেই সংখ্যালঘু তোষণ — এই ভণ্ডামির দিন শেষ! বাংলা জানে… হিন্দুরা জেগেছে!’।