এইদিন ওয়েবডেস্ক,নয়াদিল্লি,০৪ জুন : অধিকাংশ বুথ ফেরত সমীক্ষায় বিজেপির নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে তৃতীয়বারের জন্য সরকার গঠবের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল । পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেছিলেন,’আমি এক্সিট পোল মানি না । তৃণমূল, অখিলেশ, স্ট্যালিনরা ভালো ফল করবে’ । কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধীও একই কথা বলেছিলেন । কংগ্রেস দাবি করেছিল ইন্ডি জোট ২৯৮ টা আসন পাবে । তবে অত আসন না পেলেও “আশ্চর্যজনকভাবে” মমতা ও সোনিয়ার দাবিই অবশেষে সত্যি প্রমান হতে চলেছে । বিজেপির ‘অবকি বার ৪০০ পার’-এর ডাক অধরাই থেকে গেল এবারের ভোটে । নির্বাচনী প্রবণতা এবং ফলাফল দেখে মনে হচ্ছে একক গরিষ্ঠ দল হিসাবে বিজেপি সরকার গঠন করলেও তাদের জোট সঙ্গীদের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে । সেক্ষেত্রে এজেন্ডায় থাকা ইউনিফর্ম সিভিল কোড (ইউসিসি), এনআরসি, ওয়ান নেশন ওয়ান ইলেকশন এবং পপুলেশন কন্ট্রোল অ্যাক্টের মতো বড় ইস্যুগুলো বাস্তবায়ন কার্যত অথৈ জলে পড়ে গেল বলে মনে করা হচ্ছে ।
এখনো পর্যন্ত লোকসভা ভোটের যে ফলাফল বেরিয়ে আসছে, তাকে বিরোধী দলগুলির ইন্ডি জোট এনডিএ-কে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে ফেলে দিয়েছে । পরিসংখ্যান এত দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে যে এখন পর্যন্ত নিশ্চিত নয় যে এনডিএ আবার সরকার গঠন করতে চলেছে । বিজেপিকে সবচেয়ে বেশি ধাক্কা দিয়েছে উত্তরপ্রদেশ । এখনও পর্যন্ত প্রবণতা অনুসারে, বিজেপি ২৫০-এর অঙ্কও স্পর্শ করতে পারেনি। যদি এই প্রবণতাগুলি ফলাফলে রূপান্তরিত হয়, তবে এবার বিজেপি প্রায় ৬০ টি আসন হারাবে বলে মনে হচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা অযোধ্যায় রাম মন্দিরের উদ্বোধন হলেও উত্তরপ্রদেশে বিজেপি ও এনডিএ বড় ক্ষতির মুখে পড়েছে। ইউপিতে ৮০ টি আসনের মধ্যে, বিজেপি প্রায় ৩৬ থেকে ৪০ আসনের মধ্যে সীমাবদ্ধ হতে চলেছে । যেখানে সমাজবাদী পার্টি এবং কংগ্রেসের জোট ৪০ টিরও বেশি আসন পেতে পারে। ইউপিতে বিজেপি অন্তত ৪০ টি আসন হারাতে চলেছে বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে । পশ্চিমবঙ্গে অন্তত ৮ টি আসন হারাতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলছে । বিজেপিকে আসন হারাতে হতে পারে রাজস্থান ও কর্ণাটকেও । অর্থাৎ বিজেপি একটি বড় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে এবং সংখ্যাগরিষ্ঠতা থেকে অন্তত ৪০ আসন দূরে তারা । এমন পরিস্থিতিতে এনডিএ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেরিয়ে গেলেও বিজেপি ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে অনেক বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে । কারন রাজনীতির ইতিহাস স্বাক্ষী যে জোটের শরিকরা হাওয়া বুঝে ভোল বদল করতে বেশি সময় নেয় না । কয়েক বছর আগে কংগ্রেসের ক্ষেত্রে ঠিক এমনটাই হয়েছিল। যদিও বিজেপির অবস্থা কংগ্রেসের মতো খারাপ নয়। এখন ‘দলবদলু’ বলে অবিহিত নীতিশ কুমার কি অবস্থান নেন সেটাই লক্ষ্যণীয় বিষয় । যদিও নীতিশ কুমারের দল বলে দিয়েছে যে তারা এনডিএতেই থাকবে । নীতীশের জেডিইউ ১৬ টি আসনের মধ্যে ১৫ টিতে এগিয়ে আছে ।
এদিকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ইউপির অখিলেশ যাদবসহ কয়েকজন জোটসঙ্গীর সঙ্গে ইতিমধ্যেই কথা বলেছেন বলে মিডিয়ার খবর । অন্ধ্র প্রদেশের তেলেগু দেশম পার্টি (টিডিপি) ভালো ফল করতে চলেছে । এখনো পর্যন্ত টিডিপি ১৬ টি আসনে এগিয়ে আছে । শোনা যাচ্ছে যে ইন্ডি জোটের পক্ষ থেকে চন্দ্রবাবু নাইডুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে । পাশাপাশি মমতা ব্যানার্জি ও সোনিয়া গান্ধীরা বিহারের জেডিইউ, অন্ধ্র প্রদেশের টিডিপিসহ অন্যান্য এনডিএ দলগুলিকেও ভেঙে জোট সরকার গঠনের চেষ্টা চালাবে বলে মনে করা হচ্ছে ।
অন্যদিকে এনডিএ সরকার গঠিত হলেও বিজেপিকে অনেক বড় মন্ত্রী পদে আপস করতে হতে পারে । কারণ কোনো জোট সঙ্গী সঙ্গ ত্যাগ করলেই সরকার পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যাবে । জোট সঙ্গীর বিজেপির সঙ্গে যে দর কষাকষি করবে তা এক প্রকার নিশ্চিত । সেক্ষেত্রে স্বাধীনভাবে আর্থিক সংস্কার ও বৈদেশিক নীতি নির্ধারন করা বিজেপির পক্ষে কতটা সম্ভব হবে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায় । বিজেপির ইস্তেহারে উল্লেখিত বহু প্রতিশ্রুতিও বাস্তবিক প্রয়োগ করা সম্ভব হবে না । কারন সংসদে বিজেপির আসন কমছে৷ যদিও ওড়িশায় সরকার গঠন করায় রাজ্যসভায় কিছুটা আসন বাড়বে বিজেপির ।।