শ্যামসুন্দর ঘোষ,কালনা(পূর্ব বর্ধমান),০৮ মার্চ : ২০২৬ সালে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভার নির্বাচনের আগে ‘ভুতুড়ে ভোটার’ একটা বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে ৷ একদিকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী যখন তৃণমূলের বিরুদ্ধে বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের ভোটার কার্ড করে দেওয়ার অভিযোগ তুলছেন,পাশাপাশি অন্যদিকে বিজেপির বিরুদ্ধে হিন্দিভাষী হিন্দু ভোটারের নাম ভোটার তালিকায় ঢুকিয়ে দেওয়ার অভিযোগে সরব হয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । এখন শাসক ও বিরোধী দু’দলই ‘ভুতুড়ে ভোটার’ খুঁজতে আসরে নেমে পড়েছে । ফলে এরাজ্যে ‘ভুতুড়ে ভোটার” নিয়ে খেল কার্যত জমে গেছে ।
শুক্রবার বিকেলে সাংবাদিক সম্মেলন করে পূর্ব বর্ধমান জেলার পূর্বস্থলী উত্তরের তৃণমূল বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায় অভিযোগ করেন যে বাংলাদেশের একটি স্কুলের শিক্ষকের নাম ভারতের ভোটার তালিকায় রয়েছে ৷ সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি রীতিমতো প্রমান স্বরূপ ভোটার লিস্টও সঙ্গে নিয়ে আসেন । বিধায়ক জানান, পূর্বস্থলী-২ ব্লকের কালেখাতলা-২ পঞ্চায়েতের নন্দীগ্রামে বসবাসকারী ভৃগুরাম দাস আদপে একজন বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী । তার স্ত্রী সুলেখা রানী দাস,এক ছেলে, পুত্রবধূ ও নাতনিকে নিয়ে এই ঠিকানাতেই থাকেন। মাঝেমধ্যেই তিনি এই বাড়িতেও আসা-যাওয়া করেন। বাংলাদেশেও রয়েছে তার ভোটার কার্ড। সেখানেও তিনি ভোট দেন, এমনকি তিনি সেখানে একটি স্কুলের শিক্ষক তিনি বলেও দাবি করেছেন বিধায়ক । পাশাপাশি বিধায়কের আরও দাবি যে তার বিধানসভা এলাকায় এখনো প্রায় ৪০০ এইরকম ভোটারের খোঁজ পাওয়া গেছে, যাদের কোন অস্তিত্বই নেই।
কিন্তু কে বা কারা তাদের নাম ভোটার তালিকায় ঢোকালো ?
এই বিষয়ে বিজেপির কাটোয়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি গোপাল চট্টোপাধ্যায় ও স্থানীয় বিজেপি নেত্রী সীমা ভট্টাচার্যের কথায়, ‘যদি বাংলাদেশির নাম ভোটার তালিকায় থেকে থাকে তাহলে সেটা তৃণমূলেরই কাজ । মমতা ব্যানার্জির কাছে “ভালো ভাই” সাজার জন্য পূর্বস্থলী উত্তরের বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায় ও কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়রা এখন চেষ্টা করছেন ।’ পাশাপাশি সীমাদেবী বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের জন্য এলাকায় জনবিন্যাসের পরিবর্তন ঘটানোর অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন রাজ্যের শাসকদলকে ।
প্রসঙ্গত, ভোটব্যাঙ্ক ভরাতে বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের ভোটার কার্ড করে দেওয়ার অভিযোগ রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে তুলে আসছে বিজেপি । দিন তিনেক আগে শুধু উত্তর মালদা লোকসভা কেন্দ্রেই প্রায় ৪০ হাজার বাংলাদেশি মুসলিম অনুপ্রবেশকারী ভূয়ো ভোটার রয়েছে বলে অভিযোগ তুলে তোলপাড় ফেলে দিয়েছিলেন দক্ষিণ মালদা কেন্দ্রের বিজেপির সহ-সভাপতি অজয় গাঙ্গুলী । এবারে পূর্বস্থলী উত্তরের তৃণমূল বিধায়ক বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায় বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী এক হিন্দু ভুয়ো ভোটারকে চিহ্নিত করায় রাজ্যে “ভুতুড়ে ভোটার” ইস্যুটি নতুন মাত্রা পেল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক অভিজ্ঞমহল ।
কারন বাংলাদেশে সংখ্যাগুরু মুসলিমদের অত্যাচারে ভারতে পালিয়ে আসা হিন্দুদের মূলত হিন্দুত্ববাদী দলকেই সমর্থন করার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায় । আর বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা মুসলিমদের ঝোঁক থাকে তৃণমূল-সিপিএম বা কংগ্রেসের দিকে । বিগত লোকসভা নির্বাচনে এরাজ্যের সিংহভাগ মুসলিমরা তৃণমুলকে ভোট দিয়েছিল বলে দাবি করেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী । আর সে তুলনায় হিন্দু ভোটের ভাগাভাগি হওয়ায় বিজেপিকে খারাপ ফলাফলের মুখোমুখি হতে হয় বলে দাবি ছিল তাঁর ৷ এখন দেখার বিষয় তৃণমূল-বিজেপির ‘ভুতুড়ে ভোটার’ খোঁজার অভিযানের মোড় শেষ পর্যন্ত কোন দিকে ঘোরে ।।