এইদিন ওয়েবডেস্ক,বীরভূম,০৩ আগস্ট : বিজেপি নেতার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার ঘিরে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়াল বীরভূম জেলার খয়রাশোল থানার হযরতপুর গ্রামে । নিহতের নাম ইন্দ্রজিৎ সূত্রধর । তিনি হজরতপুর পঞ্চায়েতের ৪৬ নম্বর বুথের বুথ সভাপতি ছিলেন । মঙ্গলবার গ্রামের একটি পরিত্যক্ত ঘর থেকে তাঁর হাত-পা বাঁধা ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় । মৃতের পরিবারের দাবি ইন্দ্রজিৎকে খুন করে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে । একই দাবি করেছে বিজেপি নেতৃত্বও । যদিও এদিন দুপুর পর্যন্ত এনিয়ে থানায় কোনও নির্দিষ্ট অভিযোগ দায়ের করা হয়নি বলে জানা গেছে । ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ ।
নিহতের স্ত্রী পূজা সূত্রধর বলেন, ‘আমার স্বামী কলকাতা যাবার নাম করে কয়েকদিন আগে বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন । তার ২-৩ দিন পরে শুনছি গ্রামের একটি মেয়েকে নিয়ে নাকি উনি কোথাও চলে গেছেন । তবে এটা সত্য নাকি মিথ্যা জানি না । তবে দিন দুয়ে আগে আমার স্বামী তাঁর পিসিমার বাড়ি গিয়েছিলেন । সেখানে একদিন কাটিয়ে বোনের বাড়ি যান । সোমবার রাতে সেখান থেকে বাড়ি ফেরার কথা । কিন্তু তারপর আর উনি বাড়ি ফেরেননি ।’ পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘সোমবার রাত থেকে আমার স্বামীর মোবাইলে বারবার ফোন করেছি । কিন্তু প্রতিবারই সুইচ অফ বলছিল । এদিন সকালে আমার স্বামীর এক বন্ধুর মায়ের কাছ থেকে ঘটনার কথা জানাতে পারি ।’
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে,এদিন সকালে গ্রামের একটি পরিত্যক্ত ঘরের কাঠের দরজার কাঠামো থেকে ইন্দ্রজিৎ সূত্রধরে গলায় গামছার ফাঁস দেওয়া দেহটি অবস্থায় ঝুলতে দেখা যায় । তাঁর দু’হাত ছিল সামনের দিকে বাঁধা । হাঁটু মোড়া দু’পা একটি জামা দিয়ে বাঁধা ছিল । একটি রুমাল দিয়ে বাঁধা ছিল তাঁর মুখ । বিষয়টি চাওড় হতেই গ্রাম জুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায় । খবর পেয়ে খয়রাশোল থানার পুলিশ গিয়ে দেহটি উদ্ধার করে ।
নিহতের স্ত্রী জানান,তাঁর স্বামীর গোটা মুখেই ছিল ক্ষতচিহ্ন । সেখান থেকে রক্তপাত হচ্ছিল । এছাড়া হাত-পা মেরে ভেঙে দেওয়া হয়েছে বলে মনে হচ্ছে । তাঁর দাবি, ‘এতেই প্রমান আমার স্বামীকে খুন করা হয়েছে । আমরা খুনির কঠোর শাস্তি চাই ।’
একইভাবে দলীয় নেতাকে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন দুবরাজপুর বিধানসভার বিজেপি বিধায়ক অনুপ সাহা । তিনি বলেন, ‘ইন্দ্রজিৎ সূত্রধরকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে । আমাদের দাবি দোষীদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তি দেওয়া হোক ।’ পাশাপাশি তিনি অভিযোগ করেন, ‘তৃণমূল ‘খেলা হবে’ বলে রাজ্য জুড়ে হত্যা লীলা চালাচ্ছে । আইন হাতে তুলে নেওয়া হচ্ছে ।’ দলীয় নেতার অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় কার্যত রাজ্যের শাসকদলকেই কাঠগড়ায় তোলেন বিজেপি বিধায়ক ।
যদিও স্থানীয় তৃণমূল নেতা স্বপন সেনের দাবি, ‘বিজেপি কি বলছে তা শুনে আমাদের লাভ নেই । এদিন যাকে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে সেই ইন্দ্রজিৎ সুত্রধরের বিরুদ্ধে গত ২৮ জুলাই থানায় একটি অভিযোগ হয় । তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল
বিজেপির এক পোলিং এজেন্টের স্ত্রীকে নিয়ে তিনি তারাপীঠে পালিয়ে গিয়েছিলেন । গত সোমবার ওই মহিলাকে উদ্ধার করে পুলিশ । ওই দিনই মহিলাকে তাঁর স্বামীর হাতে তুলে দেওয়া হয় । তারপরেই এদিন ইন্দ্রজিৎ সুত্রধরের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হল ।’ তবে এটা খুন না আত্মহত্যা এনিয়ে কিছু বলেননি স্বপনবাবু৷
জানা গেছে,দক্ষ সংগঠক হিসাবে দলের মধ্যে যথেষ্ট সুখ্যাতি ছিল হযরতপুর গ্রামের বাসিন্দা ইন্দ্রজিৎ সূত্রধর নামে ওই বিজেপি নেতার । এক সময়ে লালদূর্গ বলে পরিচিত হযরতপুর এলাকা ২০১১ সালের পর তৃণমূলের দখলে চলে যায় । মূলত ইন্দ্রজিৎবাবুর নেতৃত্ব গুণেই ওই এলাকায় বিজেপির সংগঠনের শ্রীবৃদ্ধি হয় । বিগত বিধানসভা নির্বাচনে ইন্দ্রজিৎবাবুর সাংগঠনিক দক্ষতার হাতেনাতে ফল পায় বিজেপি । এই এলাকায় তৃণমূলের থেকে এগিয়ে ছিলেন বিজেপি প্রার্থী । এই বিজেপি নেতার রহস্যজনকভাবে মৃত্যুর ঘটনায় ব্যাপক চ্যঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায় । পুলিশ এদিন মৃতদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে ।।