এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২১ এপ্রিল : পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সৈকত নগরী দীঘায় ‘জগন্নাথ ধাম কালচারাল সেন্টার’ গড়ে তোলা হয়েছে । পুরীর জগন্নাথ ধামের আদলে নির্মিত হয়েছে একটি মন্দির । আগামী সপ্তাহে সেই মন্দিরের উদ্বোধন হবে । তার আগেই নাকি রবিবার দিঘার নবনির্মিত ঘাটে ভেসে এসেছে কাঠের জগন্নাথ মূর্তি। কালো,সাদা,খয়েরি, হলুদ রঙ করা ওই মূর্তিটি নিয়ে ব্যাপক প্রচার শুরু করেছে তৃণমূলের লোকজন । তারা বিষয়টি অলৌকিক ঘটনা হিসাবে দেখানোর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ । আর এনিয়েই তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছে বিজেপি৷ রাজ্য বিজেপির যুবনেতা ও কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী তরুনজ্যোতি তিওয়ারি মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বিরুদ্ধে ‘হিন্দু ধর্মীয় বিশ্বাসে নোংরা রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের‘ অভিযোগ তুলেছেন ।
তিনি ‘বাংলার গর্ব মমতা’ নামে একটা ফেসবুক পেজের পোস্টের স্ক্রীন শর্ট শেয়ার করেছে । যে পোস্টে ওই মুর্তির ছবিসহ লেখা হয়েছে,’মন্দিরের উদ্বোধনের আগেই দীঘায় আবির্ভাব জগন্নাথদেবের ! সমুদ্রপথে স্বয়ং এলেন প্রভু ।’ অর্থাৎ ওড়িশার পুরীর জগন্নাথ ধামে ভেসে আসা নিম কাঠের মুর্তি নির্মানের ঐতিহাসিক ঘটনার অনুকরণেই দিঘাতেও ‘গল্পের চিত্রনাট্য’ সাজানো হয়েছে বলে অভিযোগ । তরুনজ্যোতি তিওয়ারি লিখেছেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্রী জগন্নাথ নাটক: হিন্দু ধর্মীয় বিশ্বাসে নোংরা রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ । গতকাল দীঘা সমুদ্রসৈকতে একটি নতুন নাটকের জন্ম দিল তৃণমূল কংগ্রেস ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া পেজ ও সংবাদমাধ্যমে প্রচার করা হয়, “সমুদ্র থেকে ভেসে এসেছে জগন্নাথ দেবের মূর্তি”! প্রথম দর্শনেই বোঝা যায়—মূর্তিটি অত্যন্ত নিখুঁত, কারুকার্যময় এবং সদ্য প্রস্তুত। অথচ, দাবি করা হচ্ছে এটি নাকি ‘স্বয়ং ভেসে এসেছে’—হিন্দুদের গভীর ধর্মীয় বিশ্বাস ও কিংবদন্তির কল্পনাকে জোড় করে রাজনৈতিক নাটকে পরিণত করা হয়েছে।’
তিনি লিখেছেন, পুরীর বিশ্বাস ও ঐতিহ্যের সস্তা নকল?
হিন্দু ধর্ম অনুযায়ী, পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে মূর্তি নির্মাণের জন্য একটি বিশেষ নিম কাঠের গুঁড়ি সমুদ্রের তরঙ্গে ভেসে আসার কাহিনি বহু পুরনো এবং তা বিশ্বাসের শিকড়ে প্রোথিত। এই কিংবদন্তি অনুসারে, ইন্দ্রদ্যুম্ন রাজাকে স্বপ্নে নির্দেশ দেন জগন্নাথ স্বয়ং—সমুদ্রতটে ভেসে আসবে নির্দিষ্ট নিম কাঠ, সেটি দিয়েই নির্মাণ হবে তাঁর মূর্তি। এই ঘটনার প্রতিফলন বারেবারে হয় পুরীতে, এবং তা ধর্মীয় রীতি অনুসরণ করেই ঘটে।
কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই বিশ্বাসকেই তাঁর রাজনৈতিক নাটকের কেন্দ্রে বসিয়ে দিলেন। “শ্রী জগন্নাথ কালচারাল সেন্টার”-এর নামে দিঘায় গড়ে তোলা মন্দির প্রকল্পটি মূলত পুরীর ঐতিহ্যের সস্তা প্রতিলিপি। এবং “ভেসে আসা মূর্তি”-র স্ক্রিপ্টটি যেন ঠিক পূর্ব পরিকল্পিত, আইপ্যাক দ্বারা পরিচালিত নাটকের একটি অংশ। প্রশ্ন ওঠে—একটি কাঠের মূর্তি যদি সত্যিই দীর্ঘ সময় নোনা জলে ভেসে আসে, তবে সেটির রং, কাঠের রং বদল, জলজ ক্ষয় ইত্যাদি স্বাভাবিকভাবে দৃশ্যমান হবে। কিন্তু যে মূর্তিটি প্রদর্শিত হয়েছে তা দেখে বোঝা যায়—এটি সদ্য তৈরি, সমুদ্রের জল তো দূরের কথা, বালির ছোঁয়াও পায়নি।
তরুনজ্যোতির অভিযোগ, পুরীতে প্রবেশ না পেয়ে দিঘায় ‘প্রতিশোধ’?
প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য, একবার পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি, কারণ মন্দিরে ‘অহিন্দুদের প্রবেশ’ নিষেধ। সেই ব্যক্তিগত অভিমান থেকেই কি দিঘায় পুরীর নকল তৈরির সিদ্ধান্ত? প্রশ্ন উঠছে, কেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের টাকায় একটি ‘কালচারাল সেন্টার’-এর আড়ালে তৈরি হচ্ছে একটি বিকল্প পুরী? কেন হঠাৎ জগন্নাথ মূর্তি নিয়ে এই তামাশা? কেন হিন্দুদের আবেগকে এভাবে ব্যবহার করে নিজের রাজনীতির প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী?
ব্রহ্ম পদার্থ কোথায়?
পুরীর রথযাত্রার আরেকটি অত্যন্ত পবিত্র ও গোপনীয় দিক হল ‘ব্রহ্ম পদার্থ’। এটি স্থানান্তর হয় মূর্তি বদলের সময়ে, এবং তার আচার বহু শতাব্দী ধরে নির্দিষ্ট বিধি অনুসারে পরিচালিত হয়। এখন প্রশ্ন—মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর সরকার সেই ব্রহ্ম পদার্থ কোথা থেকে আনবেন? তাদের মঞ্চায়িত নাটক কি সেই গভীর আধ্যাত্মিক প্রক্রিয়াকে অনুসরণ করতে পারবে?
হিন্দু ধর্ম নিয়ে বারবার এই অপমান কেন?
এর আগে কালী পুজোর সময়েও দেখা গেছে কিভাবে কালী মূর্তি, বিসর্জন, এবং ধর্মীয় উৎসবকে রাজনৈতিক আঙ্গিকে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। এই বার জগন্নাথ। হিন্দু ধর্ম বারবার এই সরকারের ‘নাট্যনাটক’ ও রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার শিকার হচ্ছে। এটা শুধুমাত্র একধরনের অপমান নয়, বরং বিশ্বাসহীনতার গভীর চক্রান্ত, যা হিন্দুদের পবিত্র অনুভূতিকে রাজনৈতিক মঞ্চে পরিণত করছে।
সব শেষে তিনি লিখেছেন, হিন্দুদের সহ্যক্ষমতার পরীক্ষা চলছেই
এই নাটক হিন্দুদের ধর্মীয় বিশ্বাসকে হালকা করে দেখার প্রচেষ্টা মাত্র। তৃণমূল সরকারের এই আচরণ হিন্দু সমাজকে প্রশ্ন করতে বাধ্য করেছে—আমাদের ধর্ম কি শুধু রাজনৈতিক চালাকি ও মিডিয়া কনটেন্ট তৈরির জন্য ব্যবহৃত হবে? জগন্নাথ আমাদের প্রভু, তিনি রাজনীতির বিষয় নন। বিশ্বাস নিয়ে ছেলেখেলা বন্ধ হোক।
সংবাদমাধ্যম প্রতিদিনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘রাজ্য সরকারের প্রস্তাবিত পুরনো জগন্নাথ মন্দিরের কাছে একটি ঘাট তৈরি হচ্ছে। সেখানে গড়া হচ্ছে জগন্নাথদেবের মাসির বাড়ি। রবিবার সেই কাজই করছিলেন মিস্ত্রিরা। সমুদ্রপাড়ের বোল্ডারও সরাচ্ছিলেন কয়েকজন। তাঁদেরই একজন মঙ্গল রানা। প্রথম দেখতে পান সমুদ্রের ঢেউয়ে ভেসে আসছে একটি মূর্তি।’ কিন্তু সমুদ্রের নোনা জলে মুর্তির রঙ কিভাবে অবিকৃত থাকলো তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে । এই ঘটনাকে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের ‘বড় কাঁচা দাগের মার্কেটিং‘ বলে অবিহিত করেছেন প্রাক্তন সাংবাদিক সন্ময় ব্যানার্জি৷ তিনি এই বিষয়ে একটা পোর্টালের খবরের স্ক্রীন শর্ট সংযুক্ত করে ফেসবুকে লিখেছেন,’বড় কাঁচা দাগের মার্কেটিং । মিডিয়াগুলোও পা দিয়ে দিল মমতার এই বিপণনে।
সমুদ্রে কোথা থেকে ভাসানো হয়েছিল, স্রোতের অভিমুখ হিসেব করে, বেশ কঠিন কাজ, দুরুহ কাজ, কিন্তু কাঁচা মার্কেটিং, এইটুকুই বলব । বিশ্ব মজুমদার সেটা নিয়ে পড়বে,expected . tv 9ও ! আসলে কেলগের ক্যান্টিনের এপিসোডে টিভি নাইনের ভূমিকা সেদিন দেখেছিলাম, মেলাচ্ছিলাম মিলেও গেল আজ হিসেবটা । মার্কেটিংয়ে পুরীর মন্দির না ভেসে আসে । ভয় ওই একটাই । আর বাকি ভাঁড়ামি আমদের পাওনা । “ভাঁড় মহিলা আর দোসর ব্যাগ বওয়া মিডিয়া,” চিনে রাখুন । সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় ।’।