এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১০ অক্টোবর : প্রখ্যাত শিল্পপতি তথা টাটা গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান রতন টাটা বুধবার রাতে মুম্বাইয়ের একটা বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন । তাঁর মৃত্যুতে শুধু শিল্পজগত নয়,আমজনতাও শোকস্তব্ধ । ভারত মাতার এই সুযোগ্য সন্তানকে শেষ শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন দেশ বিদেশের সর্বস্তরের মানুষ । পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বুধবার(১০ অক্টোবর ২০২৪) রাত ১২:০১ নাগাদ টাটা সন্সের চেয়ারম্যান রতন টাটাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে এক্স-এ একটা পোস্ট করেছেন । মমতা ব্যানার্জি লিখেছেন,’রতন টাটার মৃত্যুতে শোকাহত, টাটা সন্সের চেয়ারম্যান এমেরিটাস। টাটা গ্রুপের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ছিলেন ভারতীয় শিল্পের একজন অগ্রণী নেতা এবং একজন জন-উৎসাহী জনহিতৈষী। তাঁর মৃত্যু ভারতীয় ব্যবসায়িক বিশ্ব এবং সমাজের জন্য একটি অপূরণীয় ক্ষতি হবে৷ তাঁর পরিবারের সকল সদস্য এবং সহকর্মীদের প্রতি আমার সমবেদনা৷’ কিন্তু তিনি শিল্পপতির কোনো ছবি পোস্ট করেননি।
এদিকে মাত্র ঘন্টা খানেকের ব্যবধানে আরও একটি পোস্ট করেছেন মমতা । আর সেটা হল প্রখ্যাত সরোদ বাদক আমজাদ আলি খানের জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে ফেসবুক পেজের পোস্ট । তাতে তিনি ওই যন্ত্রশিল্পির ছবি পোস্ট করেছেন । তবে ফেসবুক পেজে রতন টাটার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে কোনো পোস্ট করেননি মুখ্যমন্ত্রী ।
প্রসঙ্গত,সিঙ্গুরে টাটা গোষ্ঠীর ন্যানো গাড়ি কারখানার জন্য জমি অধিগ্রহণকে কেন্দ্র করে মমতা ব্যানার্জির রাজনৈতিক উত্থান বলে মনে করা হয় । হুগলি জেলার সিঙ্গুরে একটি প্রস্তাবিত টাটা মোটরস অটোমোবাইল কারখানার জন্য জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছিলেন মমতা ব্যানার্জি । যাকে ফলে তৈরি নিয়ে একটি বিতর্ক । কারখানাটি ব্যবহার করা হতো কমপ্যাক্ট গাড়ি টাটা ন্যানো তৈরিতে । ওই ছোট গাড়িগুলি ২০০৮ সালের মধ্যে কারখানা থেকে বেরিয়ে আসার কথা ছিল । কিন্তু আন্দোলনের জেরে ন্যানো গাড়ির কারখানা তৈরির পরিকল্পনা বাতিল করে দিতে হয় রতন টাটাকে । তিনি গুজরাটে ওই কারখানাটি স্থাপন করেন । কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ থেকে ফিরে যাওয়ার আগে রতন টাটা বলে গিয়েছিলেন, “গুড নাইট বেঙ্গল” । অর্থাৎ তিনি পশ্চিমবঙ্গে অন্ধাকার সময়ের শুরু হল বলে কার্যত ইঙ্গিত করে গিয়েছিলেন । তারপর আর পশ্চিমবঙ্গ মুখি হননি তিনি ।
যদিও সিঙ্গুরে টাটাদের জমি অধিগ্রহণ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির লাগাতার আন্দোলন পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক নয়া মাইল ফলক হয়ে যায় । ২০০৮ -এর পঞ্চায়েত নির্বাচন ও ২০০৯-এর লোকসভা নির্বাচনে ভূমিকা নিয়েছিল সিঙ্গুর আন্দোলন । ২০১১ সালের নির্বাচনে সিপিএমের ৩৪ বছরের শাসনকালে ইতি টানাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল সিঙ্গুরের কৃষিজমি বাঁচাও আন্দোলন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল বলে মনে করা হয় । কিন্তু টাটা জমি ফিরিয়ে দিলেও সিঙ্গুরের কৃষকদের আখেরে কিছুই লাভ হয়নি।
সিঙ্গুর আন্দোলন শুরু হয়েছিল ২০০৬ সালে। তখন সিঙ্গুরে টাটার গাড়ি কারখানার জন্য জমি অধিগ্রহণকে কেন্দ্র করে ঝড় উঠেছিল। নিজেদের জমি বাঁচাতে কৃষিজমি বাঁচাও আন্দোলন শুরু হয়। সিঙ্গুরের বেড়াবেড়ি, বাজেমেলিয়া, খাসেরভেড়ি, সিংহের ভেড়ি, গোপালনগর—পাঁচটি মৌজার হাজার হাজার কৃষক আন্দোলনে যুক্ত হয়ে জমি অধিগ্রহণের বিরোধিতা করেন। এই আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন মমতা ব্যানার্জি । আজ তিনি এরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। ২০১৬ সালে সুপ্রিম কোর্ট সিঙ্গুরের জমি অধিগ্রহণ অবৈধ ঘোষণা করে। আর প্রায় ১০০০ একর জমি চাষযোগ্য করে তিন মাসের মধ্যে কৃষকদের ফিরিয়ে দিতে নির্দেশ দেয় । আর তা নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয় । কারন তৃণমূল কংগ্রেস সিঙ্গুরের জমি কৃষকদের ফিরিয়ে দিলেও অধিকাংশ জমি চাষযোগ্য করে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ । এবারে জমি চাষযোগ্য করে দেওয়া নিয়ে সিঙ্গুর আন্দোলনের অভিমুখ বদলে গেছে খোদ মমতা ব্যানার্জির দিকে । কৃষকদের দাবি যে হয় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী জমি চাষযোগ্য করে দিক, তা না হলে সেখানে শিল্প স্থাপন করুক রাজ্য সরকার ।।