দিব্যেন্দু রায়,ভাতার(পূর্ব বর্ধমান),০৫ ফেব্রুয়ারী : রাজ্যের যেকোনো পড়ুয়ার জীবনে প্রথম সবচেয়ে বড় পরীক্ষা হল মাধ্যমিক পরীক্ষা । তাই এই পরীক্ষাকে ঘিরে পরীক্ষার্থীদের মধ্যে প্রচুর স্নায়ূর চাপ থাকে । আর একারণে পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে অনেককে অসুস্থ হয়ে পড়তেও দেখা যায় । কিন্তু পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতার থানার বেলেণ্ডা গ্রামের বাসিন্দা অর্জুন মাজি নামে এক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী নজির সৃষ্টি করল । আসলে, রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় তাকে সাপে কামড়ে ছিল । আজ ইতিহাস পরীক্ষার দিন সকালে পরীক্ষাকেন্দ্রের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার আগেই সে অসুস্থতা বোধ করতে শুরু করে । তাকে ভাতার গ্রামীন হাসপাতালে ভর্তিও করা হয় । কিন্তু জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষাতে ছেদ পড়ুক এটা চায়নি অর্জুন । মূলত তারই জেদাজেদিতে হাসপাতালেই তার পরীক্ষার ব্যবস্থা করল স্কুল কর্তপক্ষ । অর্জুন মাজির অদম্য ইচ্ছাশক্তির তারিফ করেছেন সকলে,পাশাপাশি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তার স্বাস্থ্য নিয়েও । যদিও ভাতার হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ওই পড়ুয়ার অবস্থা স্থিতিশীল । তবে আপাতত তাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
জানা গেছে,বেলেণ্ডা গ্রামের বাসিন্দা পেশায় কৃষক উৎপল মাজির দুই ছেলের মধ্যে বড় অর্জুন। ছোট ছেলে সৌভিক সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র । অর্জুন ভাতার মাধব পাবলিক হাইস্কুলের ছাত্র । এবারে সে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে । তার পরীক্ষাকেন্দ্র হল বাড়ি থেকে প্রায় দশ কিমি দূরে ভাতারের বড়বেলুন হাইস্কুলে । সাইকেলে চড়েই সে পরীক্ষা কেন্দ্রে যাতায়ত করে । অর্জুনের মা মনিদেবী জানান,আজ তার বড় ছেলের ইতিহাস পরীক্ষা ছিল । সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর ছেলে পরীক্ষাকেন্দ্রে যাওয়ার প্রস্তুতিও নিচ্ছিল । কিন্তু ছেলে স্নান করতে যাওয়ার সময়েই অসুস্থ বোধ করতে শুরু করে । জিজ্ঞেস করলে ছেলে জানায় যে রবিবার রাতে বিছানায় তার পায়ে কিছু একটা কামড়ে দিয়েছিল । কামড়ের জায়গায় পাশাপাশি দুটো ক্ষতচিহ্ন দেখে বোঝা যায় যে ছেলেকে সাপেই কামড়েছে । তিনি বলেন,’অর্জুনের বাবা তখন মাঠে ছিল । তাকে দ্রুত ডেকে পাঠানো হয় ।’
জানা গেছে,খবর পেয়ে উৎপল মাজি দ্রুত মাঠ থেকে বাড়ি ফিরে আসেন । তারপর তিনি তার ছেলেকে তড়িঘড়ি ভাতার হাসপাতালে ভর্তি করেন । এদিকে অর্জুন ইতিহাস পরীক্ষা দেবে বলে তার বাবাকে চেপে ধরে । তখন উৎপলবাবু বাধ্য হয়ে ভাতার মাধব পাবলিক হাইস্কুল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানান । একথা শোনার পর ভাতার হাইস্কুল থেকে যোগাযোগ করা হয় বড়বেলুন হাইস্কুল কর্তৃপক্ষের সাথে । শেষে অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে ভাতার হাসপাতালে অর্জুনের পরীক্ষার ব্যবস্থা করে অর্জুনের পরীক্ষাকেন্দ্রের কর্তৃপক্ষ ।
এদিকে ওই পড়ুয়ার অদম্য ইচ্ছাশক্তির তারিফ করেছেন ভাতার মাধব পাবলিক হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সচ্চিদানন্দ হাঁসদা । তিনি বলেন,’একে তো পরীক্ষার জন্য স্নায়ূর চাপ,তার উপর সাপে কামড়ানোর জন্য উদ্বেগ,এত কিছুর মাঝে ওই পড়ুয়ার পরীক্ষা দেওয়ায় নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য । একটা নজির সৃষ্টি করল আমার স্কুলের ওই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ।’।