শ্যামসুন্দর ঘোষ,পূর্ব বর্ধমান,২৩ অক্টোবর : পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতারে প্রকাশ্যে এল শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব । বিজয়া সম্মিলনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ না জানানোর অভিযোগ তুলে তীব্র বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়ল তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর লোকেরা । মঙ্গলবার ভাতার বাজারের হাউজিং কমপ্লেক্সের মাঠে বেশ কিছুক্ষণের জন্য এনিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে । পরে বিধায়ক মঞ্চ থেকে নিচে নেমে এসে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন । তিনি ভিড়ের মধ্যে ঢুকে বোঝানোর চেষ্টা করেন । কিন্তু পরিস্থিতি উত্তপ্ত থাকায় বিধায়কের সমর্থকরা তাকে ফের মঞ্চে ফিরিয়ে নিয়ে আসে । তবে সূত্রের খবর, সম্মিলনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ না জানানোটা কোনো ইস্যু নয়, বরঞ্চ ঝামেলার সূত্রপাত মূলত ভাতার পঞ্চায়েত সমিতির কর্তৃত্ব নিয়ে ৷
জানা গেছে,ভাতারের শাসকদলের সংগঠন পরিচালনা করেন মূলত তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য যুব সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শান্তনু কোঁয়ার ও ভাতার ব্লক সহ সভাপতি তথা কোটিপতি ব্যবসায়ী অশোক হাজরা । তারা দু’জনের সাথেই বিধায়ক মানগোবিন্দ অধিকারীর আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে ৷ ২০২১ সালের নির্বাচনে মানগোবিন্দকে জেতাতে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নির্বাচনী ময়দানে খেটেছিলেন ওই দুই নেতা । আত্মীয় হওয়ার সুবাদে তাদের মধ্যে যথেষ্ট সুসম্পর্কও ছিল । কিন্তু যখন থেকে ভাতার পঞ্চায়েত সমিতির কর্তৃত্ব শান্তনু ও আর এক মুসলিম নেতার হাতে চলে যায় তখন থেকেই দু’জনের সম্পর্কে চিড় ধরে । জানা গেছে,ভাতার পঞ্চায়েত সমিতির যাবতীয় টেন্ডার দেওয়ার কাজ মূলত পরিচালনা করেন শান্তনু ও আর ওই মুসলিম নেতা ৷ ফলে সমিতিতে বিশেষ সুবিধা করতে পারছেন না অশোক হাজরা । আর এ থেকেই বিবাদের সূত্রপাত বলে সূত্রের দাবি ।
মঙ্গলবার বিকেলে ভাতার বাজার হাউজিং কমপ্লেক্সে বিধায়কের ডাকে বিজয়া সম্মিলনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল । মঞ্চে তখন উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক মানগোবিন্দ অধিকারী ও শান্তনু কোঁয়ার । সভা শুরুর অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই অশোক হাজরার গোষ্ঠীর লোকজন দলীয় পতাকা হাতে শ্লোগান দিতে দিতে মঞ্চের দিকে এগুতে শুরু করে । তারা মঞ্চের কাছে পৌঁছতেই দুই গোষ্ঠীর সমর্থকদের মধ্যে ঠেলাঠেলি শুরু হয় । এনিয়ে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে । শান্তনু কোঁয়ার তখন মঞ্চ থেকে নেমে কোথাও সরে যান । মঞ্চের সামনে ঝামেলার সময় অশোক হাজরাকে একটু দূরে দেখা গেলেও শান্তনু কোঁয়ারকে দেখা যায়নি৷ যদিও বিধায়কের কথায়, তেমন কিছু ঘটনা নয় । মঞ্চে বসার জায়গা না পাওয়ায় একটু সমস্যা হয়েছিল । পরে জায়গা করে দিলে সব ঠিকঠাক হয়ে যায় । অন্যদিকে অশোক হাজরার দাবি যে মঞ্চের কাছে কি হয়েছিল তার কিছু জানা নেই । তবে উত্তেজনার সময় অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তিনি এবং তার সমর্থকদের কাগজ দিয়ে তাকে বাতাস করতেও দেখা গেছে ।
প্রসঙ্গত,ভাতারে শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের পুরনো ইতিহাস আছে । ২০১১ সালে বনমালি হাজরা যখন বিধায়ক নির্বাচিত হন তখন থেকেই গোষ্ঠীদ্বনদ্বের সূচনা হয় । বনমালি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ তুলে সরব হত মানগোবিন্দ অধিকারী গোষ্ঠী । পরে ২০১৬ সালে দুই গোষ্ঠীর কাউকে টিকিট না দিয়ে আউশগ্রামের সুভাষ মণ্ডলকে টিকিট দিয়েছিল তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব । সুভাষ মণ্ডল জেতার পর তিনি নিজের সমান্তরাল সংগঠন তৈরি করতে শুরু করলে বনমালি-মানগোবিন্দ গোষ্ঠী একজোট হয়ে যায় । ফলে নতুন মাত্রা পায় ভাতারের শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ৷ এরপর ২০২১ সালে মানগোবিন্দ অধিকারীকে টিকিট দেন মমতা ব্যানার্জি । তিনি বিধায়ক নির্বাচিত হন । কালক্রমে বনমালি হাজরা ও সুভাষ মণ্ডলের গোষ্ঠী অস্তিত্ব হারায় । এখন ২০২৬ সালের বিধানসভার নির্বাচনের আগে ভাতারে ফের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মাথা চাড়া দেওয়ায় কিছুটা হলেও অস্বস্তিতে তৃণমূল নেতৃত্ব । দেখার বিষয় যে ভবিষ্যতে ওই দুই নেতার পারিবারিক সম্পর্ক স্বার্থের সংঘাতকে প্রশমিত করতে পারে কিনা । তবে এটা স্পষ্ট যে দুই আত্মীয়ের সংঘাতে বেজায় অস্বস্তিতে পড়েছেন ভাতারের বিধায়ক ।।