এইদিন ওয়েবডেস্ক,ভাতার(পূর্ব বর্ধমান),১৬ নভেম্বর : ওদের মনের অভিব্যক্তি প্রকাশের ভাষা আলাদা । খাদ্যাভ্যাস আলাদা…একজন বিশুদ্ধ শাকাশী এবং অন্যজন মাংসাশী । অথচ দু’জনের মধ্যে গভীর সখ্যতা । এই দুই ভিন্ন প্রজাতির প্রাণী দুটি হল একটা স্ত্রী ছাগল এবং একটা পুরুষ বিড়াল । সদ্য কৈশোরে পদার্পন করা প্রায় সমবয়স্ক ওই দুই প্রাণীর সখ্যতায় হতবাক পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতার বাজারের সুকান্তপল্লির বাসিন্দারা ।
জানা গেছে,ছাগলটির মালিক সুকান্তপল্লির বাসিন্দা জনৈক সুপ্রভাত দত্ত নামে এক ব্যক্তি । তিনি জানান, ছাগলটির বয়স মাস তিনেক । প্রায় একই সময়ে জন্ম ওই বিড়ালটির । বিড়ালের মা মোট ৬ টি শাবকের জন্ম দিয়েছিল । মাসহ বাকি শাবকরা কোথাও চলে গেছে । একটি বিড়াল শাবক তাদের বাড়িতে স্থায়ীভাবে থেকে যায় । অবশ্য বিড়াল মা তার এই সন্তানের খোঁজখবর নিতে তাদের বাড়িতে মাঝেমধ্যে আসে বলে জানিয়েছেন তিনি৷
জানা যায়,সুপ্রভাত দত্তর চায়ের দোকান রয়েছে । বাড়ির অদূরে পুরনো বিডিও অফিসের বিপরীতে ভাতার-কামারাড়া সড়কের ঠিক পাশেই তার দোকান । চায়ের ব্যবসার পাশাপাশি তিনি ছাগল প্রতিপালনও করেন তিনি । বেশ কিছু পোষ্য ছাগল রয়েছে তার । প্রতিদিন সকালে তিনি ছাগলগুলি ছেড়ে দেন । সারাদিন তারা আশেপাশে ঘোরাঘুরি করে খাস ও গাছের পাতা কুড়িয়ে খেয়ে পেট ভরিয়ে ফের সন্ধ্যায় গোয়ালে ফিরে আসে । আজ শনিবার সকালে দেখা গেল সুপ্রভাত দত্তদের বাড়ির সদর দরজার পাশে ঘাস খুঁটে খাচ্ছিল একটা কালো রঙের ছাগল । তার ঠিক মুখের কাছে বসে আছে ধুসর রঙের বিড়ালটি । অল্প কিছু সময় পরেই বেড়ালটি ছাগলটির চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে তাকে লেজের ঝাপটা মেরে কিছু যেন বলার চেষ্টা করে । ছাগলটির মুখে মুখ ও গায়ে গা ঘষতে থাকে বিড়ালটি । ছাগলটি সেখান থেকে সরে গেলে বিড়ালটিও তার পিছু নেয় ।
দেখুন ভিডিও 👇
সুকান্তপল্লির বাসিন্দা একাদশ শ্রেণীর পড়ুয়া চন্দ্রিল রায় বলেন,’সারাদিন খাওয়া দাওয়া ভুলে ছাগলটির পিছু পিছু ঘুরে বেড়ায় ওই বিড়ালটি । প্রথমদিকে বিড়ালটার এই প্রচার আচরণ পছন্দ করত না ছাগলটা, তাকে ঘুঁততে যেত । পরে ছাগলটা বিষয়টি মেনে নিয়েছে এবং সে আর বিড়ালটিকে ঘুঁতোয় না ।’
প্রসঙ্গত,প্রাণীদের আন্তঃপ্রজাতির বন্ধুত্ব বিরল ঘটনা নয় । এর আগে কুকুর-বিড়ালের মধ্যেও বন্ধুত্বের অসংখ্য নজির পাওয়া গেছে । একটি আন্তঃপ্রজাতির বন্ধুত্ব হল একটি অযৌন বন্ধন যা বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীদের মধ্যে গঠিত হয়। বন্য এবং গৃহপালিত প্রাণীদের মধ্যে আন্তঃপ্রজাতির বন্ধুত্বের অসংখ্য ঘটনার নজির পাওয়া যায় । প্রাণীদের গৃহপালিত প্রজাতির মধ্যে আন্তঃপ্রজাতির বন্ধুত্বের দিকে পরিচালিত করেছে যেগুলি প্রাকৃতিকভাবে একসাথে থাকবে না। আন্তঃপ্রজাতির বন্ধুত্বের অনেক ক্ষেত্রে, প্রজাতিগুলিকে সাধারণত একসাথে দেখা যায় না এবং কখনও কখনও, একটি এমন একটি প্রজাতির যা সাধারণত প্রকৃতিতে অন্যটিকে শিকার করে।
প্রাণী বিশেষজ্ঞদের মতে, আসলে একটা জীব যখন অন্য জীবের দ্বারা উপকৃত হয় তখন আন্তঃপ্রজাতির বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে । এর পিছনে সামাজিক বন্ধনের আকাঙ্ক্ষা, সুরক্ষা বা অনান্য অনেক অজানা কারন রয়েছে । ভাতার বাজারের সুকান্তপল্লির ছাগল ও বিড়ালের গভীর বন্ধুত্বের ঘটনার পিছনে একই কারন রয়েছে বলে মনে করছেন তারা । আসলে মা ও ভাইবোন থেকে বিচ্ছিন্ন বিড়ালটি এখন ওই ছাগলটিকেই নিজের অবলম্বন ভাবছে বলে মনে করছেন তারা । তারা বলেছেন,গৃহপালিত প্রাণীদের উপর মানুষের আচরণের প্রভাব অনেক প্রজাতি সহাবস্থান করতে শিখেছে – কখনও কখনও একটি আন্তঃপ্রজাতির বন্ধুত্ব গঠনের দিকে পরিচালিত করে।।