জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জি ও দিব্যেন্দু রায়,ভাতার(পূর্ব বর্ধমান),২৫ ডিসেম্বর : প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা বা আবাস প্লাস যোজনা নিয়ে বিতর্ক কিছুতেই থামছে না এরাজ্যে । এবার তালিকা থেকে নাম বাদ যাওয়ায় পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতারের সাহেবগঞ্জ-২ পঞ্চায়েতের প্রধান ও আশাকর্মীদের দায়ি করে পোস্টার সাঁটানো হল ওড়গ্রামের বিভিন্ন এলাকায় । বারবার আবাস যোজনার তালিকা নিয়ে অসন্তোষের সৃষ্টি হওয়ায় শাসকদলের নেতাদের ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে বিরোধী দলগুলো । সিপিএমের ভাতার-২ এরিয়া কমিটির সদস্য সুধাময় মালিকের অভিযোগ,আশাকর্মীদের ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের দিয়ে সার্ভে করানো হলেও পিছনে থেকে কলকাঠি নাড়ছেন শাসকদলের নেতারা ।’ তিনি বলেন,’আশাকর্মী ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের সার্ভের কাজে লাগানোর প্রতিবাদ আমরা আগেই করেছিলাম,এখনো করছি । কারন আশাকর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা শাসকদলের নেতাদের ভয়ে তাদের কথা শুনতে বাধ্য হচ্ছেন ।’
অন্যদিকে পঞ্চায়েত প্রধান বিনয়কৃষ্ণ ঘোষ দাবি করেছেন, ‘তালিকা থেকে নাম বাদ যাওয়ায় প্রধানের কোনো ভূমিকা নেই । আশাকর্মী ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা সার্ভের পর যে রিপোর্ট ব্লক অফিসে জমা দিয়েছেন তার ভিত্তিতেই নাম এসেছে । কেন নাম বাদ গেল তা ব্লক ও জেলা প্রশাসন জানে।’ সেই সঙ্গে পোস্টার সাঁটানোর পিছনে নিজের দলের বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীকেই দায়ি করেছেন প্রধান । তিনি বলেন,’এটা রাজনৈতিক চক্রান্ত । রাজ্য জুড়েই তো দলের মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আছে । সেকারনেও পোস্টার সাঁটানো হতে পারে । তবে আমি নির্দিষ্ট করে কারোর নাম বলতে পারবো না ।’ পাশাপাশি আবাস যোজনার তালিকা থেকে নাম বাদ যাওয়া ব্যক্তিদের বিডিও অফিসে আবাদেন জানানোর জন্য বলেছেন বলে জানিয়েছেন বিনয়কৃষ্ণবাবু ।
দেখুন ভিডিও
রবিবার সকালে ওড়গ্রামের হাটতলা ও স্কুল সংলগ্ন এলাকায় বেশকিছু পোষ্টার নজরে পড়ে গ্রামবাসীদের । পোস্টারে লেখা আছে,’আবাস প্লাস যোজনায় ১ ও ২ নম্বর তালিকায় নাম থাকা সত্বেও নাম বাদ গেল কেন ? সাহেবগঞ্জ-২ প্রধান ও আশাকর্মীদের জবাব চাই ।’ ঘটনার কথা জানাজানি হতে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে এলাকায় । জানা গেছে,আবাস প্লাস যোজনার মাদার লিস্ট আসার পর সেই তালিকা ধরে বাড়ি বাড়ি সার্ভে করার দায়িত্ব বর্তায় আশা ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের উপর । তাঁদের সার্ভের পর বাড়িতে মোটরসাইকেল থাকা কিছু ব্যক্তির নাম বাদ চলে যায় দ্বিতীয় দফার তালিকা থেকে । যদিও তৃতীয় দফার তালিকায় তাদের নাম ফের সংযোজন করা হয় । তাসত্ত্বেও বেশ কিছু যোগ্য মানুষের নাম বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ ।
ওড়গ্রামের বাসিন্দা ঝিদ্দা নামে এক গৃহবধু বলেন, ‘আমাদের মাটির বাড়ি । বৃষ্টি হলেই মাটি গলে গলে পড়ছে । তবুও অসুবিধা করেও দুই প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে ওই অবস্থায় থাকতে বাধ্য হচ্ছি । পাকা বাড়ির জন্য প্রধানকে বলেছি,ভাতার বিডিও অফিসে গিয়েছি । কিন্তু কেউ কোনো গুরুত্ব দিচ্ছে না ।’ অন্য এক গ্রামবাসী শেখ আবু কালাম বলেন, ‘আমি ৮০ শতাংশ প্রতিবন্ধী । আবাস যোজনার প্রথম তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও দ্বিতীয় তালিকায় আমার নাম বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে । আমার পাকা বাড়ি, জমি বা মোটরসাইকেল কিছুই নেই । আমি আবাস যোজনার ঘরের জন্য বিডিও অফিসে লিখিতভাবে জানিয়েছিলাম । বলেছিল সার্ভে হবে । কিন্তু কিছুই হয়নি ।’ তাঁর অভিযোগ, প্রশাসন মনগড়া তালিকা তৈরি করায় যোগ্যরা আবাস যোজনা প্রকল্প থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ।।