দিব্যেন্দু রায়,ভাতার(পূর্ব বর্ধমান),০১ জানুয়ারী : রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের দ্বিতীয় দফার রাজত্বকালে পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতারে একটি স্টেডিয়ামের নির্মান করা হয়েছিল । কিন্তু ভাতার ও মন্তেশ্বর বিধানসভার সীমান্তবর্তী ভাতার থানার নাসিগ্রাম এলাকার মাঠের মাঝে ওই স্টেডিয়ামটি নির্মান করার কারনে খেলাধুলার পরিবর্তে সেটি কার্যত গোচারণ ভূমিতে পরিণত হয় । এমনকি অভিযোগ ওঠে যে স্টেডিয়ামটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকার কারনে এলাকায় অসামাজিক কার্যকালাপ বেড়ে গেছে । আজ সোমবার ভাতার হাইস্কুল মাঠে ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলার অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে স্টেডিয়ামের জায়গা নির্বাচনের নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে আলিনগরের ধ্বংসপ্রাপ্ত স্টেডিয়াম পুনঃনির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিলেন ভাতারের বর্তমান বিধায়ক মানগোবিন্দ অধিকারী । তিনি বলেন,’ভাতার ব্লকের কোথাও ১১ সাইড ফুটবল খেলার মাঠ নেই । একটাই ছিল,সেটা আলিনগর স্টেডিয়াম । তবে আলিনগর স্টেডিয়ামের পুনঃনির্মাণে বহু টাকা খরচ হবে । স্টেডিয়ামটি পুনঃনির্মাণের জন্য আমি বহুবার নবান্নে তদবির করেছি । কিন্তু আমাকে বলা হয় যে ভাতারে তো একটা স্টেডিয়াম রয়েছে । উত্তরে আমি বলেছিলাম যে ওটা ভাতারে নয়, ভাতার ও মন্তেশ্বরের মাঝ মাঠে রয়েছে ।’
বিধায়ক বলেন,’ভোলানাথ সেনের জমানায় আলিনগরের স্টেডিয়াম নির্মান হয়েছিল । দেখি, আমার দু’বছর সময়কালে সেটি পুনঃনির্মাণ করতে পারি কিনা । আমি আপ্রাণ চেষ্টা করব ।’ পাশাপাশি তিনি বলেন,’ভাতার বাজারের অডিটোরিয়াম ও অডিটোরিয়াম এবং সংলগ্ন শিশুদের পার্ক সংস্কারের অর্থ বরাদ্দ করার জন্যেও আমি সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছি ।’ যদিও জেলা পরিষদের শিক্ষা ও ক্রীড়া কর্মাধক্ষ্য শান্তনু কোঁয়ার ভাতার বাজারের অডিটোরিয়াম হল ও অডিটোরিয়াম সংলগ্ন শিশুদের পার্ক সংস্কারের জন্য পূর্ত বিভাগ থেকে পরিদর্শনে এসেছিল এবং সংস্কারের কাজে জন্য প্রচুর অর্থ বরাদ্দও হয়েছে বলে জানিয়েছেন ।
প্রসঙ্গত,১৯৭২ ও ১৯৭৭ সালের দু’দফার বিধানসভার নির্বাচনে ইন্ডিয়ান ন্যাশানাল কংগ্রেসের টিকিটে ভাতার আসনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে জয়ী হয়েছিলেন স্বর্গীয় ভোলানাথ সেন । তিনি তৎকালীন কংগ্রেস সরকারের ক্যাবিনেটে পূর্তমন্ত্রীও হন । মন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই নিজের নির্বাচনী এলাকাকে ডেলে সাজাতে উদ্যোগী হন ভোলানাথবাবু । আলিনগরে স্টেডিয়াম,হাউজিং কমপ্লেক্স, অডিটোরিয়াম হল, শিশু উদ্যান, দমকল অফিসসহ প্রভূত উন্নয়নমূলক কাজ করেন তিনি । একারনে আজও তাঁকে ‘ভাতারের রূপকার’ বলে অবিহিত করা হয় ৷ কিন্তু ভোলানাথ সেন ১৯৮২ সালে সিপিএমের প্রার্থী সৈয়দ মহম্মদ মসীর কাছে পরাজিত হওয়ার পর থেকেই সংস্কারের অভাবে তাঁর সৃষ্ট স্টেডিয়াম,হাউজিং কমপ্লেক্স, অডিটোরিয়াম হল একে একে ধ্বংস হতে শুরু করে । ২০১১ সালের পর রাজ্যের পাশাপাশি ভাতারেও ক্ষমতার বদল হয় । কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন দুই বিধায়ক বনমালী হাজরা ও সুভাষ মণ্ডলকেও ওই সমস্ত নির্মানগুলি সংস্কারে উদ্যোগী হতে দেখা যায়নি । ২০১৬ সালে ভাতারে তৃণমূল প্রার্থী নির্বাচিত হওয়ার পরেই নাসিগ্রামে ওই স্টেডিয়াম নির্মান করা হয়েছিল । যদিও অবস্থানগত কারনে স্টেডিয়ামটি কোনো কাজেই লাগেনা বলে অভিযোগ । এনিয়ে একাধিক বার অসন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা গেছে খোদ ভাতারের বর্তমান বিধায়ককে ।।