সঞ্জয় মণ্ডল,ভাতার(পূর্ব বর্ধমান),২৩ জুন : বিষধর না হলেও সাপকে প্রায়শই দেখামাত্রই মেরে ফেলার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায় মানুষের মধ্যে । কিন্তু বেশিরভাগ সাপ আক্রমনাত্মক প্রকৃতির হয় না । তারা প্রতিরক্ষায় কামড়ায় বা হুমকি বা উসকানি দিলে কামড়ায় । কামড়ের ভয়ে সাপকে হত্যা করার প্রবণতা বাস্তুতন্ত্র ও মানবজীবনের উপরে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাব ফেলে । তাই ভয় পেয়ে সাপ হত্যা না করে তাদের যাতে বাঁচার সুযোগ করে দেওয়া হয় সেই লক্ষ্যে আজ রবিবার পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতার স্টেট জেনারেল হাসপাতালের সহযোগিতায় “সাপ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও” রাজ্য সমন্বয় কমিটির উদ্যোগে একটি র্যালির আয়োজন করা হয় । র্যালির উদ্দেশ্য ছিল নির্বিচারে সাপ হত্যা রোধ, সাপের কামড়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের বিষয়ে মানুষকে সচেতন করা এবং বিভিন্ন বিষধর সাপ চিনিয়ে দেওয়া । র্যালিতে অংশগ্রহণকারী স্বাস্থ্যকর্মীদের হাতে বিভিন্ন সচেতনতামূলক বিভিন্ন পোস্টারও দেখা যায় ।
প্রসঙ্গত,সাপের সংখ্যা হ্রাস শুধুমাত্র পরিবেশের জন্যই নয়, মানুষের জন্যও ক্ষতিকর। সাপ শিকারী হিসাবে, শিকার হিসাবে, বাস্তুতন্ত্রের প্রকৌশলী হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং মানুষের অর্থনৈতিক ও থেরাপিউটিক সুবিধা প্রদান করে । শিকারী হিসাবে সাপ, ব্যাঙ, পোকামাকড়,ইঁদুর খেয়ে শিকারের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া সাপ অন্যান্য প্রজাতির দ্বারা খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয় – এইভাবে শিকার হিসাবে খাদ্য-শৃঙ্খলে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।
এছাড়াও সাপ রোগ প্রতিরোধেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং কৃষকদের সুবিধা প্রদান করে। ইঁদুর অনেক জুনোটিক রোগের বাহক (যেমন লাইম ডিজিজ, লেপটোস্পাইরোসিস, লেশম্যানিয়াসিস, হান্টাভাইরাস) যা মানুষ, কুকুর, গবাদি পশু, ভেড়া এবং অন্যান্য গৃহপালিত প্রাণীকে প্রভাবিত করে। ইঁদুর জনসংখ্যার আকস্মিক বৃদ্ধি জুনোটিক রোগের প্রাদুর্ভাব হতে পারে। ইঁদুরের জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে ফসল নষ্ট হয়। ইঁদুর খাওয়ার মাধ্যমে, সাপ ইঁদুরের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখে, এইভাবে জুনোটিক রোগ সংক্রমণ প্রতিরোধ করে এবং খাদ্য নিরাপত্তায় অবদান রাখে। এছাড়া সাপের বিষ অনেক ওষুধের উৎস হিসাবে ব্যবহৃত হয় । সাপের কামড়ের একমাত্র প্রমাণিত এবং কার্যকর থেরাপি – সাপ-বিরোধী বিষ,যা সাপের বিষ থেকেই উদ্ভূত হয় । কিন্তু নির্বিচারে সাপ হত্যায় বাস্তুতন্ত্রের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ে । যেকারণে সাপ হত্যা করে নিজেদের অজান্তেই মানুষ নিজেদের ক্ষতি করে ।।