শেখ মিলন, ভাতার(পূর্ব বর্ধমান),০৮ ডিসেম্বর : বছর কয়েক আগেই মৃত্যু হয় স্বামীর । ৯ বছরের কিশোর পুত্রকে বুকে জড়িয়ে ধরে ভুলেছিলেন বৈধব্যের যন্ত্রণা । কিন্তু আজ সকালে নয়নের মণি একমাত্র সন্তানের দুর্ঘটনায় মৃত্যুর পর আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারছেন না পূর্ব বর্ধমানের ভাতার থানার সেলেণ্ডা গ্রামের বাসিন্দা মমতা টুডু । পুত্রের শোকে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন তিনি । সম্বিৎ ফিরতেই মর্মস্পর্শী আর্তনাদ করে কেঁদে উঠে ফের জ্ঞান হারাচ্ছেন বছর সাতাশের ওই মহিলা । তাঁর এই বুকফাটা আর্তনাদ দেখে চোখে জল আপামর গ্রামবাসীর ।
ভাতার থানার সেলেণ্ডা গ্রামের বাসিন্দা মমতা টুডু জনমজুরের কাজ করেন । বছর পাঁচেক আগে স্বামী নারায়ন টুডুর মৃত্যু হয় । তিনিও জনমজুরের কাজ করতেন । ৯ বছরের একমাত্র ছেলে সুনীল টুডু থাকায় স্বামীর শোক ভুলেছিলে৷ মমতা দেবী । ছেলেকে নিয়েই ‘অভাগিনীর স্বর্গ’ গড়েছিলেন তিনি । জনমজুরের কাজ করে কোনরকমে মা-ব্যাটার সংসার চালাতেন ।নছেলে সুনিল সেলেন্ডা ধুপড়িডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র। প্রতিবেশীদেরও নয়নের মণি ছিল সুনীল ।
জানা গেছে,রবিবার ভোরে উঠে, ছেলেকে খাওয়া- দাওয়া করিয়ে এক আত্মীয়ের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে ঝাড়খণ্ডের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন মমতা টুটু। মাঝপথে যেতেই একমাত্র ছেলের দুর্ঘটনার খবর পান। পড়িমরি করে ফিরে এসে ছেলের নিথর দেহ দেখে আর নিজেকে সামলাতে পারছেন তিনি । শিশুসন্তানের দেহটা বুকে জড়িয়ে ধরে বুকফাটা আর্তনাদ করে কেঁদে ওঠেন মমতাদেবী । তারপর থেকেই তিনি বারেবারে মূর্ছা যাচ্ছেন ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবেশী গৃহস্থ থাকহরি ঘোষের বাড়িতেই কাজ করতেন মমতা টুডু। রবিবার সকালে মা ঝাড়খণ্ডের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার পর ‘কাকু’ থাকহরি ঘোষের মোবাইল দেখার আবদার করে সুনীল। থাকহরিবাবু তাঁর মোবাইল ফোনটি ছোট্ট সুনীলের হাতে দিয়ে বাড়িতে টিফিন করতে যান। প্রতিবেশী কাকুর খামারে বসেই মোবাইল দেখছিলেন সুনীল। কিছুক্ষণ মোবাইল দেখার পর তাঁর এক বন্ধুর সাইকেল চড়ে মুদিখানা দোকানে কিছু কেনার জন্য যাচ্ছিলেন শিশুটি । গ্রামের রাস্তায় সেই সময় একটি ধান বোঝাই ট্রাক্টরকে পাশ কাটাতে গিয়ে ট্রাক্টরে চাপানো ধানের বোঝায় ধাক্কা লেগে সুনীল রাস্তার পাশে ছিটকে পড়ে । রাস্তার পাশে পাকা ড্রেনে তাঁর মাথায় গুরুতর আঘাত লাগে।
স্থানীয় মানুষজন তড়িঘড়ি তাঁকে উদ্ধার করে ভাতার হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। কিন্তু ভাতারের ভূমসোর সংলগ্ন এলাকা আসতেই সুনীলের দেহ নিস্তেজ হয়ে পড়ে। ভাতার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সুনীলকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। পুলিশ দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায়। এদিকে শিশুটির মৃত্যুর খবর ছড়াতেই শোকস্তব্ধ গোটা গ্রাম। পাড়া প্রতিবেশীরা ময়না তদন্তের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে ছুটে আসেন ভাতার থানায় । এদিকে শোকে বিহ্বল মা উচ্চশ্বরে কেঁদে ছেলের নাম ধরে ডাকছেন এবং ঘন ঘন মূর্ছা যাচ্ছেন ।।