প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১০ জুলাই : মদ খেয়ে মৃত্যুর ঘটনা শহর বর্ধমান ছাড়িয়ে এবার কি গ্রামীন এলাকাতেও ঘটতে শুরু করলো? পূর্ব বর্ধমানের মেমারির রসুলপুর নিবাসী ভূতনাথ সাউ (৪৫) এর মৃত্যু পরবর্তিতে এই প্রশ্নই বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।মৃতর পরিবার ষ্পষ্ট অভিযোগ করেছে ,’শনিবার মৃতদেহ সৎকার করতে গিয়ে বাংলা মদ খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন ভূতনাথ। আর তার পরেই তাঁর মৃত্যু হয়’। যদিও মেমারি থানার পুলিশ এই মৃত্যুর ঘটনায় অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে। রবিবার মৃত ব্যক্তির দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ মর্গে।তবে এই ঘটনা নিয়ে রসুলপুরের বাসিন্দা মহলে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে ,ভূতনাথ সাউ এর বাড়ি মেমারির রসুলপুরের নতুন রাস্তা এলাকায়।তাঁর ভাগ্নে ভোলা দেবনাথ ও শ্যালক সুজন মিস্ত্রি রবিবার বর্ধমান হাসপাতাল পুলিশ মর্গে হাজির ছিলেন। ভোলা দেবনাথ জানান,তাঁর মামা ভূতনাথ সাউ শনিবার বেলায় রসুলপুর বিনয়পল্লী এলাকার শ্মশানে মৃতদেহ সৎকার করতে গিয়েছিলেন । সেখানে তিনি বাংলা মদ খান । মদ খেয়ে শারীরিক অসুস্থতা বোধ করায় তিনি বাড়ি ফিরে এসে বিছানায় শুয়ে পড়েন । তার পর থেকে বাড়ির কেউ আর ভূতনাথ সাউয়ের সাড়া পান না। তিনি ঘুমাচ্ছেন বলেই বাড়ির সবাই মনে করেছিলেন।ভোলা দেবনাথ আরো জানান ,রাতের খাবার খাওয়ার জন্য পরিবারের সবাই তাঁর মামা ভূতনাথকে অনেক ডাকা ডাকি করেও সাড়া পান না ।এর পর পরিবারের লোকজন দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকে দেখেন বমি করে তাঁর মামা বিছানা ভাসিয়ে দিয়েছে । তাঁর শরীরেও কোন সাড় নেই । এমনটা দেখেই পরিবারের সবাই তাঁর মামাকে দ্রুত মেমারি গ্রামীন হাসপাতালে নিয়ে যান । সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁর মামা ভূতনাথ সাউকে মৃত বলে ঘোষণা করেন । মদ খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়াতেই তাঁর মামার মৃত্যু হয়েছে বলে ভাগ্নে ভোলা দেবনাথ এদিন দাবি করেন । একই দাবি করেছেন মৃত ভূতনাথের শ্যালক সুমন মিস্ত্রিও ।
এসডিপিও (বর্ধমান দক্ষিন ) সুপ্রভাত চক্রবর্তী
জানিয়েছেন ,“ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে আসলেই ভূতনাথ সাউ এর মৃত্যুর সঠিক কারণ জানাযাবে ।তার ভিত্তিতেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে ।’
এদিকে বর্ধমানের লক্ষ্মীপুর মাঠ এলাকায় থাকা হোটেল থেকে মদ কিনে খাওয়ার পর আট জনের মারা যাওয়ার প্রকৃত কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা রবিবারও কাটলো না। তারই মধ্যে ওই হোটেল মালিকের বিরুদ্ধে ’ষড়যন্ত্র করে বিষক্রিয়ার মাধ্যমে খুনে’র ধারায় মামলা রুজু করলেও যথেষ্ট প্রমাণের অভাবে বর্ধমান থানা অভিযুক্তকে এখনও গ্রেফতার করতে পারে নি।প্রমান জোগাড়ের জন্য পুলিশ ওই হোটেলের দেওয়াল ও মেঝেতে থাকা লালারস সহ অন্য নমুনা ও মদের বোতল সংগ্রহ করে রাজ্য ফরেন্সিক ল্যাবরেটরিতে পাঠিয়েছে।পুলিশের দাবি ফরেন্সিক রিপোর্ট আসার পরেই প্রকৃত মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট হয়ে যাবে । হোটেল থেকে যে সব নমুনা সংগ্রহ করে বৈজ্ঞানিক রিপোর্টের জন্যে পাঠানো হয়েছিল, তাতে কোনও ‘অসঙ্গতি’ মেলেনি।
আবগারি দফতরের সুপার এনায়েত রাব্বি এদিন বলেন, “হোটেল থেকে যে সব নমুনা সংগ্রহ করে বৈজ্ঞানিক রিপোর্টের জন্যে পাঠানো হয়েছিল, তার প্রাথমিক রিপোর্টে কোনও অসঙ্গতি মেলেনি। বাইরে থেকে কিছু মিশিয়েছিল কি না, তা তদন্ত সাপেক্ষ।“ বর্ধমান মেডিক্যালও মৃত্যুর কারণ নিয়ে এখনও স্পষ্ট কিছু জানাতে পারেনি। সুপার তাপস ঘোষ বলেন, “ভিসেরা রিপোর্ট আসার পরেই প্রকৃত কারণ জানা যাবে।’ বিষক্রিয়া না থাকলে এতগুলো মানুষের মৃত্যু তাহলে কি কারণে হল! এই বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে বিশেষ ভাবে ভাবিয়ে তুলেছে ।।