১৯৭৭ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত একটানা তেইশ বছর জ্যোতি বসু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তিনিই ছিলেন ভারতের দীর্ঘতম মেয়াদের মুখ্যমন্ত্রী । তারপরে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ২০০০ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের সপ্তম মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু জ্যোতি বসুর আমলে পশ্চিমবঙ্গে শিল্পক্ষেত্রে যা সর্বনাশ করে দিয়ে গেছেন, ১০ বছরের মেয়াদে তার আর পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হননি বুদ্ধবাবু । এরপর ২০১১ সালে ৩৪ বছরের বামফ্রন্টের শাসনের অবসান ঘটিয়ে ক্ষমতায় আসেন তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জি । কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে শিল্পেক্ষেত্রে উন্নয়ন তো হয়নি, উলটে অবনতি হয়ে চলেছে ! নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠা তো দুরের কথা বন্ধ হয়ে যাওয়া পুরনো শিল্পের পুনরুজ্জীবন পর্যন্ত হয়নি । বামফ্রন্ট ও তৃণমূল জমানা মিলে দীর্ঘ প্রায় ৫ দশকে পশ্চিমবঙ্গের অর্জনের ঝুলতে কি জমা পড়েছে জানুন :-
১. টাটা গ্রুপ (সদর দপ্তর মুম্বাইতে স্থানান্তরিত)
২. বিড়লা গ্রুপ (সদর দপ্তর মুম্বাইতে স্থানান্তরিত)
৩. হিন্দুস্তান ইউনিলিভার লিমিটেড (সদর দপ্তর মুম্বাইতে স্থানান্তরিত)
৪. আইটিসি লিমিটেড (সদর দপ্তর দিল্লিতে স্থানান্তরিত)
৫.কোল ইন্ডিয়া লিমিটেড (সদর দপ্তর দিল্লিতে স্থানান্তরিত)
৬. স্টিল অথরিটি অফ ইন্ডিয়া লিমিটেড (সদর দপ্তর দিল্লিতে স্থানান্তরিত)
৭. ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন লিমিটেড (সদর দপ্তর দিল্লিতে স্থানান্তরিত)
৮. হিন্ডালকো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (সদর দপ্তর মুম্বাইতে স্থানান্তরিত)
৯. ব্রিটানিয়া ইন্ডাস্ট্রিজ (সদর দপ্তর বেঙ্গালুরুতে স্থানান্তরিত)
১০. বাটা ইন্ডিয়া (সদর দপ্তর দিল্লিতে স্থানান্তরিত)
১১. বার্জার পেইন্টস (সদর দপ্তর দিল্লিতে স্থানান্তরিত)
১২. এক্সাইড ইন্ডাস্ট্রিজ (সদর দপ্তর মুম্বাইতে স্থানান্তরিত)
১৩.এভারেডি ইন্ডাস্ট্রিজ (সদর দপ্তর মুম্বাইতে স্থানান্তরিত)
১৪. সিইএসসি লিমিটেড (সদর দপ্তর মুম্বাইতে স্থানান্তরিত)
১৫. আরপিজি গ্রুপ (সদর দপ্তর মুম্বাইতে স্থানান্তরিত)
১৬.ডানলপ ইন্ডিয়া (কলকাতায় কার্যক্রম বন্ধ)
১৭.জেসপ অ্যান্ড কোং (কলকাতায় বন্ধ কার্যক্রম)
১৮. হিন্দুস্তান মোটরস (কলকাতার কার্যক্রম বন্ধ)
১৯. সেন-র্যালে (কলকাতায় কার্যক্রম বন্ধ)
২০. ইন্ডিয়ান টেলিফোন ইন্ডাস্ট্রিজ (কলকাতায় কার্যক্রম বন্ধ)
২১.ওয়েবেল ইলেকট্রনিক্স (উৎপাদন অন্যান্য রাজ্যে স্থানান্তরিত)
২২. নিক্কো কর্পোরেশন (উৎপাদন অন্যান্য রাজ্যে স্থানান্তরিত)
২৩. টেক্সম্যাকো রেল ও ইঞ্জিনিয়ারিং (উৎপাদন অন্যান্য রাজ্যে স্থানান্তরিত)
২৪.ব্রেথওয়েট অ্যান্ড কোং (উৎপাদন অন্যান্য রাজ্যে স্থানান্তরিত)
২৫.বার্ন স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড কোং (উৎপাদন অন্যান্য রাজ্যে স্থানান্তরিত)
২৬.শ ওয়ালেস (সদর দপ্তর মুম্বাইতে স্থানান্তরিত)
২৭. ম্যাকডোয়েল অ্যান্ড কোং (সদর দপ্তর মুম্বাইতে স্থানান্তরিত)
২৮. ইউনাইটেড ব্রিউয়ারিজ (সদর দপ্তর বেঙ্গালুরুতে স্থানান্তরিত)
২৯. উইপ্রো লিমিটেড (উৎপাদন অন্যান্য রাজ্যে স্থানান্তরিত)
৩০.ক্রম্পটন গ্রিভস (উৎপাদন অন্যান্য রাজ্যে স্থানান্তরিত)
৩১. লারসেন অ্যান্ড টুব্রো (উৎপাদন অন্যান্য রাজ্যে স্থানান্তরিত)
৩২. অপিজয় সুরেন্দ্র গ্রুপ (সদর দপ্তর মুম্বাইতে স্থানান্তরিত)
৩৩.ইমামি গ্রুপ (সদর দপ্তর মুম্বাইতে স্থানান্তরিত)
৩৪. খৈতান ইলেকট্রিক্যালস (উৎপাদন অন্যান্য রাজ্যে স্থানান্তরিত)
৩৫.কিরলোস্কর ব্রাদার্স (উৎপাদন অন্যান্য রাজ্যে স্থানান্তরিত)
৩৬.আইবিএম, মাইক্রোসফ্ট এবং অ্যাকসেনচারের মতো বহুজাতিক কোম্পানি (অন্যান্য রাজ্যে কার্যক্রম স্থানান্তরিত)
৩৭.টিসিএস, ইনফোসিস এবং উইপ্রোর মতো আইটি কোম্পানি (অন্যান্য রাজ্যে কার্যক্রম স্থানান্তরিত)
৩৮. সিপলা এবং ডক্টর রেড্ডি’স-এর মতো ওষুধ কোম্পানি (কারখানা অন্যান্য রাজ্যে স্থানান্তরিত)
৩৯. নেসলে এবং প্রক্টর অ্যান্ড গ্যাম্বলের মতো এফএমসিজি কোম্পানি (কারখানা অন্যান্য রাজ্যে স্থানান্তরিত)
৪০. অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ (SMEs) এবং স্টার্টআপ (অন্যান্য রাজ্যে স্থানান্তরিত)
৪১.টাটা ন্যানো কারখানা শুরুর আগে শেষের ট্রাজেডি । হুগলির সিঙ্গুর থেকে স্থানান্তরিত গুজরাটে ।
পশ্চিমবঙ্গে শিল্প ধ্বংসের পিছনে সিপিএমের ট্রেড ইউনিয়ন বাজি ও বনধের সংস্কৃতিকে অনেকাংশে দায়ি করা হয় । যেটা তৃণমূল কংগ্রেসের জমানাতেও অব্যাহত । পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৯৮০ থেকে ১৯৯০ সালের মধ্যে, পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ১৫০-২০০টি ধর্মঘট হয়েছিল ছিল। ১৯৯১ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে, ধর্মঘটের সংখ্যা বেড়ে প্রায় ২৫০-৩০০ হয়ে যায়। ২০০১ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে, প্রায় ৩০০-৩৫০টি বনধ হয়েছিল । ২০১১ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে, শাটডাউনের সংখ্যা বেশি ছিল, প্রায় ২৫০-৩০০টি ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। সামগ্রিকভাবে, অনুমান করা হয় যে গত ৪০ বছরে পশ্চিমবঙ্গে ১,২০০-১,৫০০টিরও বেশি বনধ হয়েছে। এটি প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৩০-৩৭ টি । তার মানে, ৪০ বছরে, শাটডাউনের কারণে প্রায় ৪ বছর কাজকর্ম শিকেয় ওঠে ! যা শিল্পোৎপাদনের সর্বনাশ করার জন্য যথেষ্ট বলে মনে করা হয় ।।