প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১ জানুয়ারী : সপ্তসিন্ধুর পঞ্চম সিন্ধু জয়ের ইতিহাস তৈরি করে এখন ’বিশ্ববন্দিতা’ বঙ্গ কন্যা সায়নী দাস। বঙ্গের এই ’জলকন্যা’ শুক্রবার দিল্লিতে ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর হাত থেকে গ্রহন করলেন তেনজিং নোরগে ন্যাশনাল অ্যাডভেঞ্চার অ্যাওয়ার্ড।দেশের সর্বোচ্চ এডভেঞ্চার স্পোর্টস সন্মান পেয়ে উচ্ছশিত সায়নী এদিন বলেন,’এই পুরস্কার ও সন্মাননা আমাকে আরও বেশী দৃঢ়প্রতিজ্ঞ করালো।আমাকে সপ্তসিন্ধু জয় করতেই হবে ।’
সায়নী দাসের বাড়ি পূর্ব বর্ধমান জেলার কালনা পুরসভার অন্তর্গত বারুইপাড়ায়।রটনেষ্ট,ক্যাটালিনা ,ইংলিশ চ্যানেল,মালোকাই চ্যানেল ও কুক স্ট্রেইট চ্যানেল জয়ের পর সায়নী দাস ইতিমধ্যেই সপ্ত সিন্ধুর পঞ্চম সিন্ধু জর করে ফেলেছেন।গত বছরের আগষ্ট মাসের শেষের দিকে সপ্তসিন্ধুর পঞ্চম সিন্ধু জয় করে সায়নী গোটা বিশ্বের সাঁতারু মহলে তাক লাগিয়ে দেন।তার পর থেকেই বঙ্গতনয়া সায়নী দাস কার্যত ’বিশ্ববন্দিতা’ বনে যান সায়নী দাসের বাবা রাধেশ্যাম দাস অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক।মা রুপালীদেবী সাধারণ গৃহবধূ। বাবা রাধেশ্যাম দাসের হাত ধরে সায়নীর সাঁতারে হাতেখড়ি হয়।তার পরথেকে কঠিন অনুশীলনের মধ্যদিয়ে সায়নী নিজেকে কার্যত ’জলকন্যা’ বানিয়ে ফেলেন। হাওয়ার গতীবেগ ,জলের স্রোত এবং দীর্ঘ সময় সাঁতার কেটে এগিয়ে চলার যোগ্য হিসাবে নিজেকে তিনি তৈরি করেন।সেই যোগ্যতা কে কাজে লাগিয়ে বঙ্গতনয়া সায়নী রটনেষ্ট ও ক্যাটলিনা চ্যানেল জয়ের পর ২০১৭ ইংলিশ চ্যানেল জয় করেন।এরপর ২০২২ সালে তিনি মার্কিন মুলুকের মালোকাই চ্যানেল জয় করে ইতিহাস সৃষ্টি করেন।শুধু ভারত নয়,এশিয়া মহাদেশের মহিলা সাঁতারু হিসাবেও সায়নী প্রথম মালোকাই চ্যানেল জয়ের নজির সৃষ্টি করেন। গত বছরের এপ্রিল মাসে সায়নী জয় করেন সপ্তসিন্ধুর এক সিন্ধু নিউজিল্যাণ্ডের কুক স্ট্রেইট চ্যানেল।এরপর ওই বছরেই সায়নী নর্থ চ্যানেল জয় করে ফেলেন। বাকি আর রয়েছে সুগারু ও জিব্রাল্টার প্রণালী জয়। তাহলেই ইতিহাস সৃষ্টি করে ফেলবেন বঙ্গ তনয়া সায়নী।তাঁর মাথায় উঠবে ’ওশেন সেভেন’ চ্যালেঞ্জের মুকুট।
আয়ারল্যান্ডে গিয়ে সায়নীর সপ্ত সিন্ধুর পঞ্চম সিন্ধু জয় করাটা কিন্তু খুব একটা সহজ ছিল না।সায়নীর কথা অনুযায়ী ,“আগের চারটি চ্যানেল জয়ের থেকেও নর্থ চ্যানেল জয়ের জন্যে তাঁকে কঠিন লড়াই চালাতে হয়েছিল।পরিস্থিতির প্রতিকুলতার কারনে ছয় মাইলের ক্ষেত্রে তাঁকে দীর্ঘক্ষণ এক জায়গায় থাকতে হয়েছে।কখনও তিন ঘণ্টায় মাত্র ১ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে পেরেছেন।আবার জলের টান ও জেলিফিসের জন্যেও কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়েছে ।জলে এই ভাবে লড়াই চালিয়ে ১৩ ঘন্টা ২২মিনিটে ৪৮কিলোমিটার পথ সাঁতারে তবেই তিনি পঞ্চম সিন্ধু জয়ের রেকর্ড গড়তে পারেন। এর আগে সব প্রতিকূলতাকে কাটিয়ে ১১ ঘন্টা ৫১ মিনিটে ২৯,৫ কিলোমিটার দুর্গম জলপথ অতিক্রম করে কুক প্রণালী জয় করেন।“ বাকি আর রয়েছে সপ্ত সিন্ধুর ষষ্ঠ ও সপ্তম সিন্ধু সুগারু ও জিব্রালটার প্রণালী বলে সায়নী দাস জানিয়েছেন।
পশ্চিমবঙ্গ সরকার আগেই ’খেলশ্রী’ সন্মানে ভূষিত করেছে সায়নীকে। এছাড়াও “মাদার টেরিজা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড“ সায়নী পেয়ে গিয়েছেনপঞ্চমসিন্ধু জয়ের কৃতিত্ব স্বরুপ সায়নী দাস এবার পেলেন ভারতের সর্বোচ্চ অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস সন্মান ।ভারত সরকারের ’যুব বিষয়ক বিভাগ ও ক্রীড়া মন্ত্রক এই সন্মাননার জন্য সায়নী দাসকে কে নির্বাচিত করে’।২০০২ সালে বাংলার সাঁতারু বুলা চৌধুরী পেয়েছিলেন তেনজিং নোরগে ন্যাশনাল অ্যাডভেঞ্চার অ্যাওয়ার্ড। এর ২২ বছর বাদে বঙ্গের জলকন্যা সায়নী দাস এই অ্যাওয়ার্ড পেলেন। পুরস্কার হিসাবে বিভিন্ন উপহার ও স্মারকের সঙ্গে ১৫ লক্ষ টাকা আর্থিক সহায়তা।
পুরস্কার গ্রহনের জন্য এদিন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে
বাবা রাধেশ্যাম দাস ও মা রুপালীদেবীকে সঙ্গে নিয়ে সায়নী পৌছে গিয়েছিলেন দিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবন লাগোয়া গণতন্ত্র ভবনে।লাল শাড়ি পরিহিত হয়ে একেবারে ষোল আনা বাঙালি সাজে সজ্জিত সায়নী গণতন্ত্র ভবনে প্রবেশ করে ছিলেন।রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর হাত থেকে পুরস্কার ও সন্মাননা গ্রহন করে সায়নী অত্যন্ত খুশি। সায়নী জানান ,’এই পুরস্কার পেয়ে আমি অনুপ্রাণিত। পুরস্কার অর্থ আমার প্রভূত উপকারে লাগবে ।আর এক সিন্ধু জয়ের জন্য স্পেনে যেতে অর্থ আর আমার বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। রাধেশ্যাম বাবু ও রুপালীদেবী বলেন ,আমাদের মেয়ে সায়নীর সাফল্যে শুধু পূর্ব বর্ধমান জেলার বাসিন্দারাই গর্বিত নয়, সায়নী গোটা বাংলাকে গর্বিত করেছে।।