প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,৩১ আগষ্ট : বিদেশের মাটিতে আবারও ভারতের তেরঙ্গা জয় ধ্বজা উড়ালেন বাংলার জলকন্যা সায়নী দাস । এবার তিনি জয় করলেন সপ্ত সিন্ধুর পঞ্চম সিন্ধু। সায়নী এশিয়া মহাদেশের প্রথম মহিলা সাঁতারু যিনি আয়ারল্যান্ডে গিয়ে ১৩ ঘন্টা ২২ মিনিটে ৪৮ কিলোমিটার পথ সাঁতারে পঞ্চম সিন্ধু জয়ের রেকর্ড গড়লেন। শনিবার ভোর ৩ টে নাগাদ মেয়ে সায়নীর সাফল্যের খবর পান বাবা রাধেশ্যাম দাস। তাঁর কথায় ,আর বাকি রইল সপ্ত সিন্ধুর ষষ্ঠ ও সপ্তম সিন্ধু সুগারু ও জিব্রালটার প্রণালী । এই দুই সিন্ধু জয় করতে পারলেই আমার মেয়ে সায়নীর মাথায় উঠবে ওশেন সেভেন মুকুট ।
রটনেষ্ট,ক্যাটালিনা,ইংলিশ চ্যানেল, মালোকাই চ্যানেল ও কুক স্ট্রেইট চ্যানেল জয় ইতিপূর্বেই সম্পন্ন করেছেন পূর্ব বর্ধমানের কালনা পৌর এলাকার বারুইপাড়ার মেয়ে সায়নী দাস। এবার তিনি সপ্ত সিন্ধুর পঞ্চম সিন্ধুও জয় করে ফেললেন। একের পর এক এই জয়ের কৃতিত্বে বাংলার মেয়ে সায়নী আজ ’বিশ্ববন্দিতা’ ।তাই তাঁর এই সাফল্যে খুশি গোটা বাংলা।একই ভাবে উল্লশিত সায়নীর বাবা মা এবং শুভানুধ্যায়ীরা।
সায়নী দাসের বাবা রাধেশ্যাম দাস অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক। মা রুপালীদেবী সাধারণ গৃহবধূ। বাবা রাধেশ্যাম দাসের হাত ধরে সায়নীর সাঁতারে হাতেখড়ি হয় । তার পরথেকে কঠিন অনুশীলনের মধ্যদিয়ে সায়নী নিজেকে কার্যত ’জলকন্যা’ বানিয়ে ফেলেন। হাওয়ার গতীবেগ ,জলের স্রোত এবং দীর্ঘ সময় সাঁতার কেটে এগিয়ে চলার যোগ্য হিসাবে নিজেকে তিনি তৈরি করেন । সেই যোগ্যতাকে কাজে লাগিয়ে বঙ্গতনয়া সায়নী রটনেষ্ট ও ক্যাটলিনা চ্যানেল জয়ের পর ২০১৭ ইংলিশ চ্যানেল জয়ের করেন।এরপর ২০২২ সালে তিনি মার্কিন মুলুকের মালোকাই চ্যানেল জয় করে ইতিহাস সৃষ্টি করেন।শুধু ভারত নয়,এশিয়া মহাদেশের মহিলা সাঁতারু হিসাবেও সায়নী প্রথম মালোকাই চ্যানেল জয়ের নজির সৃষ্টি করেন।আর চলতি বছরের এপ্রিল মাসে সপ্তসিন্ধুর এক সিন্ধু নিউজিল্যাণ্ডের কুক স্ট্রেইট চ্যানেল তিনি জয় করেধ। শনিবার ভোরে সায়নী নর্থ চ্যানেল জয় করে ফেললেন । বাকি আর রয়েছে সুগারু ও জিব্রাল্টার প্রণালী জয়। তাহলেই ইতিহাস সৃষ্টি করবেন বঙ্গ তনয়া সায়নী । তাঁর মাথায় উঠবে ওশেন সেভেন চ্যালেঞ্জের মুকুট।
রাধেশ্যাম দাস জানিয়েছেন,আয়ারল্যান্ডে পৌছে গিয়ে আমার মেয়ের সপ্ত সিন্ধুর পঞ্চম সিন্ধু অর্থাৎ নর্থ চ্যানেল জয় খুব একটা ছিল না।আগের চারটি চ্যানেল জয়ের থেকেও নর্থ চ্যানেল জয়ের জন্যে কঠিন লড়াই চালাতে হয়েছে সায়নীকে।পরিস্থিতির প্রতিকুলতার কারনে ছয় মাইলের ক্ষেত্রে সায়নীকে দীর্ঘক্ষণ এক জায়গায় থাকতে হয়েছে। কখনও সায়নী তিন ঘণ্টায় মাত্র ১ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে পেরেছে। এছাড়াও জলের টান ও জেলিফিসের জন্য কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়েছে সায়নীকে ।জলে এই ভাবে লড়াই চালিয়ে ১৩ ঘন্টা ২২ মিনিটে ৪৮ কিলোমিটার পথ সাঁতারে তবেই সায়নী পঞ্চম সিন্ধু জয়ের রেকর্ড গড়তে পেরেছে। এর আগে সব প্রতিকূলতাকে কাটিয়ে ১১ ঘন্টা ৫১ মিনিটে ২৯,৫ কিলোমিটার দুর্গম জলপথ অতিক্রম করে সায়নী কুক প্রণালী জয় করেছিলেন বলে রাধেশ্যামবাবু জানান ।
সায়নী বাড়ি ফিরলে তাকে নিয়ে জয় সেলিব্রেট করার প্রতুতি এদিন থেকে শুরু করে দিয়েছেন কালনার ক্রীড়া প্রেমীরা।তাঁরা জানান, পশ্চিমবঙ্গ সরকার আগেই ’খেলশ্রী’ সন্মানে ভূষিত করেছে সায়নীকে। এছাড়াও “মাদার টেরিজা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড“ সায়নী পেয়ে গিয়েছে। কালনার মেয়ে সায়নী আজ শুধু বাংলার গর্ব নয়,দেশের গর্ব । সায়নী আজ বিশ্ববন্দিতা । তাই সায়নী কালনার বাড়িতে ফিরলেই তাঁকে নিয়ে পঞ্চম সিন্ধু জয়ের সেলিব্রেশনে মাতার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন কালনাবাসী ।।