জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,বেলুড়,০৮ জুলাই : প্রায় সমস্ত বাঙালি সহ সমগ্র ভারতবাসী ও সমগ্র বিশ্বের ক্রিকেট প্রেমী মানুষ, এমনকি তার বাইরেও, ‘দাদা’ বলতে একজনকেই চেনে । তিনি হলেন সবার প্রিয় সৌরভ গাঙ্গুলি। তাঁর হাত ধরে বেটিং জর্জরিত ভারতীয় ক্রিকেটের আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। ভারতীয় ক্রিকেটাররা বিদেশীদের চোখে চোখ রেখে কথা বলতে শিখেছে, বিদেশের মাটিতে জিততে শিখেছে। তার জন্যই আবেগে ভেসেছে সমস্ত বাঙালি। অবসরের দীর্ঘদিন পরেও তার জনপ্রিয়তা এতটুকু কমেনি। তার উপর নির্ভর করে জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে একটি টিভির রিয়েলিটি শো । তার রাজনীতিতে যোগদানের কথা উঠলেই হৃদস্পন্দন বেড়ে যায় রাজনৈতিক দলগুলোর। তিনি নিজেই হয়ে উঠেছেন একটা প্রতিষ্ঠান। তাঁকে কেন্দ্র করে গড়ে দেশ বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ফ্যান ক্লাব বা গ্রুপ।
এইরকম একটি গ্রুপের নাম হলো ‘সৌরভ গাঙ্গুলী, বস অফ ইন্ডিয়া’ । মনোজ মিশ্রের হাত ধরে রাজু, সিঞ্জিনী, মৈনাক, মুনমুন, সোমা, সুমন, শুভঙ্কর, প্রসেনজিৎ, অপর্ণার মত দশ জন ‘দাদা’ ভক্ত পাগল ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এই গ্রুপটি তৈরি করে। বর্তমানে সদস্য সংখ্যা প্রায় ছয় হাজার। ‘দাদা’-র নাম ব্যবহার করে নিছক সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জন নয়, মূল উদ্দেশ্য হলো নিজেদের সীমিত সামর্থ্য নিয়ে অসহায় দুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ানো। এর আগে ব্যক্তিগত ভাবে ছোটখাটো দু’একটা সেবামূলক কাজ করলেও ‘দাদা’-র পঞ্চাশ তম জন্মদিন অর্থাৎ ৮ ই জুলাই থেকেই মিলিত ভাবে তারা তাদের অভিযান শুরু করে। গন্তব্যস্থল বেলুড়ের লালবাবা আশ্রম।
প্রসঙ্গত বেলুড় মঠের কাছে গঙ্গার তীরে ১৯১৭ সালে ভগতরাম বাবাজী এই আশ্রম তৈরি করেন। ভক্তদের কাছে তিনি লালবাবা নামে পরিচিত। আশ্রমে আগত অনাথ শিশুদের জন্য খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা দান করা হলো আশ্রমের মুখ্য উদ্দেশ্য। ১৯৩৪ সালে ছাত্রাবাস গড়ে ওঠে। বাবাজীর উদ্যোগে লালবাবা স্কুল, কলেজ তৈরি হয়। আশ্রমটি মূলত দান-ধ্যানের উপর নির্ভরশীল। বিভিন্ন কারণে আশ্রমটি আর্থিক সমস্যায় জর্জরিত। খাবারের জন্য আশ্রমে গড়ে পঞ্চাশ জনের মত অসহায় মানুষ আসে। ‘দাদা’-র জন্মদিনে এইসব অসহায় মানুষের হাতে খাবার তুলে দিতে আসে দাদার নামাঙ্কিত সংস্থাটি ।
নির্দিষ্ট সময়েই সংস্থার সদস্যরা লালবাবা আশ্রমে হাজির হয়। অসহায় মানুষগুলির জন্য নিয়ে আসে পাউরুটি, বিস্কুট, কলা, আপেল, পেয়ারা, কোল্ড ড্রিংকস, ক্যাডবেরি, মিষ্টি এবং দাদার জন্মদিন উপলক্ষ্যে একটা বড় কেক। শুধু তাই নয়, আশ্রমের মহারাজের জন্য ধুতি ও মিষ্টি নিয়ে আসা হয়। তারপর সেগুলো একে একে অসহায় মানুষগুলির হাতে তুলে দেওয়া হয়। তারা তো এগুলি পেয়ে খুব খুশি। সবশেষে মহারাজের হাতে ধুতি ও মিষ্টি তুলে দিয়ে তার আশীর্বাদ চেয়ে নেওয়া হয়। শেষে গ্রুপের সদস্যরা কেক কেটে প্রিয় ‘দাদা’-র জন্মদিন পালন করে ।
সংস্থার অন্যতম সদস্য সোমা দাস বললেন, ‘বাঙালিদের মধ্যে দাদার ভক্ত প্রচুর। তাদের কয়েকজন মিলেই আমরা এই সংস্থা গড়ে তুলেছি । আমাদের গ্রুপের সদস্যরা রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে আছে। সীমিত সামর্থ্য নিয়ে আমরা যতটা সম্ভব অসহায় মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করব। আশাকরি আগামী দিনে সহৃদয় মানুষেরা আমাদের পাশে এসে দাঁড়াবেন।’।