প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১৭ জুন : ‘মহামানব’ আখ্যা দিয়ে অনুব্রত মণ্ডলের ’পা ছুঁয়ে ‘প্রণাম করে আশীর্বাদ নিলেন স্বয়ং বিডিও সাহেব । পাল্টা বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলও বৃহস্পতিবার দরাজ সার্টিফিকেট দিলেন পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রাম-১ ব্লকের বিডিও অরিন্দম মুখোপাধ্যায়কে। খোদ বিডিওর প্রণাম পেয়ে আপ্লুত অনুব্রত মণ্ডল সুখ্যাতি করে বললেন,’ভালো বিডিও। ওনার নাম আছে’। রাজ্য সরকারের এক আধিকারিকের তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডলের ’পায়ে হাত ছুঁয়ে ’প্রণাম করার ঘটনা চাক্ষুষ করে এদিন কার্যতই চমৎকৃত হয়ে পড়েন আউশগ্রামের গুসকরার বাসিন্দারা ।
কোভিড আক্রান্তদের জন্যে আউশগ্রামের গুসকরায় এদিন একটি’সেফ হোমের’ উদ্বোধন অনুষ্ঠান হয় ।গুসকরা শহরের নদীপটি এলাকায় আউশগ্রাম-১ ব্লকের কিষাণ মাণ্ডির একটি ভবনে ২৫ বেডের এই ’সেফ হোমটি’ করা হয়েছে ।সেই সেফ হোমের উদ্বোধন করতেই এদিন এসেছিলেন বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি তথা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের গ্রামীণ উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান অনুব্রত মণ্ডল। তিনি ছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আউশগ্রামের বিধায়ক অভেদানন্দ থান্দার, আউশগ্রাম ১ ব্লকের বিডিও অরিন্দম মুখোপাধ্যায়, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মনোরঞ্জন মাজি প্রমুখ।প্রসঙ্গত অনুব্রত বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতির পাশাপাশি আউশগ্রামেরও শাসকদলের পর্যবেক্ষক। আউশগ্রামেও তাঁর দাপট ও প্রভাব যথেষ্টই রয়েছে।
অনুব্রত বন্দনার সূচনা ঘটে অনুষ্ঠানের শুরুতেই। অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিদের অভ্যর্থনা জানাতে গিয়ে আউশগ্রাম ১ ব্লকের বিডিও অরিন্দম মুখোপাধ্যায় একেবারে অনুব্রত মণ্ডলের পায়ে হাত ছুঁয়ে প্রণাম করে বসেন । এরপর অতিথিদের স্বাগত জানাবার সময় বিডিও তাঁর বক্তব্যে অনুব্রতকে ‘মহামানব’ বলে আখ্যায়িত করেন।তিনি বলেন ,এই সেফ হোম চালু করার ব্যাপারে ‘মহামানব ’ অনুব্রত মণ্ডল আগ্রহ দেখিয়েছেন। আমাদের মুখ্যমন্ত্রী যেমন উদ্যোগী মানুষ তেমনই অনুব্রত বাবুও ’মহামানব’ ।
পালটা সৌজন্য দেখাতে ভোলেন নি অনুব্রত মণ্ডলও। তিনি বলেন , বিডিও যখন ’সেফ হোম ’চালুর প্রস্তাব নিয়ে তাঁর কাছ আসেন, তখন তিনি রাজি হয়ে যান। এখন কোথাও না গেলেও এখানে তিনি এসেছেন বলে জানান। এই সেফ হোমটা গুসকরার মানুষের খুব কাজে লাগবে । এটা একটা বড় কাজ হল বলে অনুব্রত মন্তব্য করেন । এর পরেই বিডিওর সুখ্যাতি করে অনুব্রত বলেন; ‘সবচেয়ে বড় কথা আপনার ’ভালো বিডিও পেয়েছেন । যে বিডিওর মাধ্যমে আপনারা এগিয়ে যাবেন ।’
এই বিষয়ে জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক
শ্যামল রায় বলেন , ‘পশ্চিম বাংলায় গণতন্ত্র ও প্রশাসন দুটোই আজ বিপন্ন।প্রশাসনে রাজনীতিকরণ হয়েছে। তাই রাজ্যের এক তৃণমূল নেতার পায়ে হাত ছুঁয়ে প্রণাম করত হচ্ছে সরকারের এক বিডিওকে ।রাজ্য প্রশাসন যে কতটা বিপন্ন তা আউশগ্রামের ঘটনা আও একবার সামনে এনে দিল ।’
যদিও জেলা তৃণমূলের মুখপত্র প্রসেনজিৎ দাস বলেন , ‘বিষয়টি বিডিওর ব্যক্তিগত ব্যাপার । কোন ব্যক্তির কারুর প্রতি শ্রদ্ধা ভক্তি থাকতেই পারে । ঘৃণ্য রাজনীতি করার জন্যেই বিজেপি নেতারা এইসব অবান্তর মন্তব্য করছেন । আর বাংলায় গণতন্ত্র বিপন্ন হয়নি বলেই ভোটে গোহারা হারার পরেও এখনও বিজেপি নেতারা রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত মিথ্যাচার করে যাচ্ছেন ।
অথচ গুজরাট ,উত্তর প্রদেশে বিরোধীদের মত প্রকাশের অধীকারটাই কড়ে নিয়েছে সেখানকার বিজেপি সরকার।’।