এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২৭ মার্চ : প্রতিবেশী ৬ বছরের শিশুকে অপহরণ করে ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে তার উপর পাশবিক অত্যাচার চালিয়েছিল প্রতিবেশী যুবক । তারপর দুধের শিশুটিকে নৃশংসভাবে খুন করে বস্তায় ভরে রেখে দেয় ওই নরপশু । শিশুর বাবা বারবার স্থানীয় থানায় গিয়ে মেয়েকে উদ্ধারের জন্য পুলিশের কাছে অনুনয় বিনয় করে । কিন্তু শিশুটিকে উদ্ধারের চেষ্টা তো দুরের কথা পুলিশ উলটে নিহত শিশুর বাবাকে থাপ্পর মারার হুমকি দেয় বলে অভিযোগ । এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রবিবার প্রায় রাতভর কলকাতার তিলজলা থানায় রণক্ষেত্রের আকার নেয় ।
পুলিশের বিরুদ্ধে গাফলতির অভিযোগ তুলে শতাধিক মহিলা ও পুরুষ থানার সামনে জড়ো হয়ে তুমুল বিক্ষোভ দেখায় । ধর্ষক অলোক কুমারকে (৩২) জনতার হাতে তুলে দেওয়ার দাবি জানান তাঁরা । পুলিশকে লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি ইট ও পাথর ছোড়া হয় বলে অভিযোগ । এদিকে পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে থানার গেট লাগিয়ে দেয় পুলিশ । তা সত্ত্বেও ক্ষিপ্ত জনতা গেট ভেঙে ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করে । শেষে থানায় ঢুকতে না পেরে পুলিশের প্রিজন ভ্যান,মোটর সাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা । পরে অতিরিক্ত পুলিশবাহিনী আনিয়ে লাঠিচার্জ করে ক্ষিপ্ত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে দেয় তিলজলা থানার পুলিশ । জনতার ছোড়া ইঁটের আঘাতে ২ জন পুলিশকর্মী জখম হয়েছেন বলেও জানা গেছে ।
জানা গেছে,রবিবার সকাল ৮ টা নাগাদ দুধ আনতে গিয়েছিল ওই শিশুটি । তারপর থেকে তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি । সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি স্থানীয় তিলজলা থানায় জানান শিশুর বাবা । কিন্তু পুলিশের কোনো হেলদোল না দেখে দফায় দফায় থানায় গিয়ে মেয়েকে উদ্ধারের জন্য অনুনয় বিনয় করেন। তবুও মন গলেনি পুলিশের । উলটে পুলিশের বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ ওঠে । পরে সকাল ১১টা নাগাদ ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ । স্থানীয় বাসিন্দারা সিসিটিভি ফুটেজ দেখার জন্য পরামর্শ দেয় । কিন্তু পুলিশ তাতেও কোনো কর্নপাত করেনি বলে অভিযোগ । স্থানীয় বাসিন্দারা সন্দেহভাজন অলোক কুমারকে তার ফ্লাটের দরজা খোলানোর জন্য পুলিশকে বলতে বলে । কিন্তু পুলিশের অনুরোধেও দরজা খোলেনি ওই ব্যক্তি ।
জানা গেছে,এরপর পুলিশ ফিরে চলে যায় । এদিকে অলোক কুমারের আচরণে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে সন্দেহ তীব্র হয় । শেষে স্থানীয় লোকজন রবিবার সন্ধ্যা নাগাদ শিশুটির খবর পেয়ে ধর্ষক অলোক কুমারের ফ্লাটে যায় । তখন তারা ফ্লাটের রান্না ঘরের সিলিন্ডারের পাশে বস্তাবন্দি অবস্থায় শিশুর দেহটি দেখতে পায় তারা । স্থানীয় বাসিন্দারা জানতে পারে,রবিবার সকাল ৮ টার পর শিশুকে রাস্তা থেকে তুলে নিজের ফ্লাটে নিয়ে গিয়েছিল অলোক কুমার । সে দুধের শিশুটিকে রান্না ঘরের গ্যাস সিলিন্ডারের সঙ্গে বেঁধে ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে পাশবিক নির্যাতন চালায় । এমনকি শিশুটির মাথায় স্ক্রু জাতীয় কিছু দিয়ে ফুঁটো করে সে । এছাড়া শিশুটির হাতে, ঘাড়ে, কানের পাশ সহ সারা দেহে গভীর ক্ষত চিহ্ন দেখা যায় বলে জানান স্থানীয়রা । এদিকে ওই নরপশুর এই পাশবিক অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে ছোট্ট মেয়েটি ৷
জানা গেছে,শিশুটির উপর ঘটে যাওয়া পাশবিক অত্যাচারের কথা শুনে রাগে ফুঁসতে শুরু করে এলাকার বাসিন্দারা । ইতিমধ্যে পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে চলে এসে অভিযুক্তকে আটক করে থানার নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতেই ক্ষিপ্ত জনতা তাকে তাদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য বলে । যদিও পুলিশ কোনো রকমে ধর্ষককে জনতার হাত থেকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে । এরপর তিলজলা থানার সামনে শতাধিক মানুষ জড়ো হয়ে তুমুল বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে । থানায় হামলার অভিযোগে বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে বলে জানা গেছে । সোমবার সকালেও গোটা এলাকা ছিল থমথমে । এলাকার বাসিন্দারা ধর্ষকের ফাঁসির দাবিতে সরব হয়েছেন ।।