এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,৩০ সেপ্টেম্বর : “মুর্শিদাবাদ জেলার ফরাক্কায় বাংলাদেশের মুহাম্মদ ইউনূস মডেল” কার্যকর করা হয়েছে বলে বিস্ফোরক অভিযোগ তুললেন রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । এর আগে গত পরশু তিনি জলপাইগুড়ি জেলার নাগরাকাটা বিধানসভায় মেটেলী ব্লকের কিলকোট চা বাগানে দুর্গাপূজার বোনাসের দাবিতে আন্দোলনকারী শ্রমিকদের পুলিশের লাঠি নিয়ে তাড়া করা ও অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি করার ভিডিও পোস্ট করেছিলেন । গতকাল তিনি মেটিয়াবুরুজ বিধানসভার রবীন্দ্রনগর থানার আইসির গালাগালির ভিডিও প্রকাশ করেন । আজ এক্স-এ একটি ভিডিও পোস্ট করে তিনি অভিযোগ করেছেন যে মুর্শিদাবাদ জেলার ফরাক্কার একটি মন্ডপে আযানের সূচি টাঙাতে বাধ্য করা হয়েছে । এর বিরোধিতা করে এই ঘটনার জন্য “পশ্চিমবঙ্গের তোষণবাজ সরকার”কে দায়ি করে শুভেন্দু অধিকারী একে “মুর্শিদাবাদ জেলার ফরাক্কায় বাংলাদেশের মুহাম্মদ ইউনূস মডেল” বলে আখ্যা দিয়েছেন ।
শুভেন্দু অধিকারী নিজের এক্স হ্যান্ডেলে কয়েকটি ছবি ও ভিডিও পোস্ট করেছেন । তাতে দেখা যায় “পূর্ব শিবতলা সার্বজনীন দুর্গা উৎসব কমিটি” র প্যান্ডেলের ভিতরে “আযানের সময়সূচি” টাঙানো হয়েছে । যাতে ভোরে ৪:১৫ থেকে আধ ঘন্টা, দুপুরে ১২:৩০ থেকে আধ ঘন্টা,বিকেলে ৩টে থেকে আধ ঘন্টা, সন্ধ্যা ৫:৪০ থেকে আধ ঘন্টা এবং রাত্রি ৯ টা থেকে আধ ঘন্টার নামাজের কথা উল্লেখ করা আছে। তবে আযানের সূচির তালিকা পূজো কমিটি নিজেই ছাপিয়ে টাঙিয়েছে, নাকি তাদের টাঙাতে বাধ্য করা হয়েছে, এটা স্পষ্ট নয় ।
শুভেন্দু অধিকারী লিখেছেন,’মুর্শিদাবাদ জেলার ফরাক্কায় বাংলাদেশের মুহাম্মদ ইউনূস মডেল !!! ধর্ম যার যার উৎসব সবার, কিন্তু সংখ্যায় কম হলে হিন্দুদেরই করতে হবে আপোষ-সমঝোতা, নয়তো ভাগ্যে রয়েছে অত্যাচার… ফরাক্কার মহেশপুর পঞ্চায়েত এলাকার পূর্ব শিবতলায় দুর্গা পুজোর মণ্ডপে আজানের সময় সূচি প্রদর্শন করা হয়েছে। এই দৃশ্য ব্রিটিশ আমলেও দেখা যায় নি। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে এই দৃশ্য দেখতেও আমরা বাধ্য হলাম।
মূল বিষয়টির সাথে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কোনো সম্পর্ক নেই, ব্যপার হলো হিন্দুরা এখানে সংখ্যালঘু আর বাংলাদেশের মতো এখানেও নানাবিধ নিয়ম কানুন আরোপ করা হয়েছে যে সুষ্ঠু ভাবে পুজো সম্পন্ন করতে হলে তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে, নয়তো পুজো মণ্ডপে আক্রমন ও প্রতিমা ভাংচুরের নিদর্শন পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের আমলে ভুরি ভুরি রয়েছে। এর জন্যে দায়ী হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ তোষণবাজ সরকার, যারা এই অন্যায় কে বছরের পর বছর ধরে প্রশ্রয় দিয়ে মৌলবাদীদের হৃষ্ট পুষ্ট বলিষ্ঠ করে তুলেছে।
তিনি আরও লিখেছেন,’এই সরকারের মূল উদ্দেশ্য হলো ক্ষমতায় টিকে থাকা ও হিন্দুদের উপর নির্যাতনের মাত্রা বৃদ্ধি করে নিজের আখের গোছানো, কারণ সনাতনীদের আস্থা এই সরকারের ওপর থেকে উঠে গেছে। তাই হিন্দুদের বেকায়দায় ফেলে ভোট ব্যাংক কে মজিয়ে রাখা যাতে মূল বিষয় গুলি যেমন শিক্ষা স্বাস্থ্য কর্মসংস্থান নিয়ে কেউ ভাবার সময় না পায়।
২০২৬ সালে এই হিন্দু বিরোধী মমতা সরকার কে না ক্ষমতাচ্যুত করতে পারলে হিন্দুদের এই সব নিয়ম কানুনে অভ্যস্ত হয়ে যেতে হবে এবং আজ ফরাক্কায় যে দৃশ্য দেখতে আমরা বাধ্য হলাম কাল সারা পশ্চিমবঙ্গের দিকে দিকে দেখতে হবে। হয়তো এমন দিন আসবে যখন মূর্তি পুজোয় আপত্তি জানানো হবে ! ভুলে গেলে চলবে না এই দেশেই একসময় হিন্দুদের ‘জিজিয়া কর’ দিতে হতো।
প্রসঙ্গত,বাংলাদেশে দুর্গাপূজার সময় আজান বা নামাজের সময় মণ্ডপে ঢাক,কাঁসর বা ঘন্টা বাজানোর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে । নির্দেশ অনুযায়ী, আজান শুরুর পাঁচ মিনিট আগে থেকে বাদ্যযন্ত্র বন্ধ রাখতে হবে। নামাজ চলাকালীন সময়েও বাদ্যযন্ত্র বাজানো বন্ধ রাখতে হবে।কারন আজান ও নামাজের সময় কোনো প্রকার “ধর্মীয় বাদ্যযন্ত্র” ব্যবহার করলে নাকি নামাজিদের অসুবিধা হবে । তবে শেখ হাসিনার সময় থেকেই মুসলিম সম্প্রদায়ের দাবি মেনে এই নির্দেশিকা জারি করেছিল বাংলাদেশ সরকার ।।