এইদিন ওয়েবডেস্ক,বাংলাদেশ,১২ নভেম্বর : লক্ষ্য পূর্ণ ইসলামি রাষ্ট্র ! যেভাবে এক সময়ের কুখ্যাত সন্ত্রাসবাদী সংগঠন তালিবানরা ক্ষমতায় এসে অমুসলিমদের দেশ ছাড়া করেছিল,ঠিক একই কায়দায় বাংলাদেশ থেকে হিন্দুদের নির্মুল করতে সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে জঙ্গি সংগঠন জামাত ইসলামি ও বিএনপি । সেই ষড়যন্ত্রের অন্যতম একটা প্রধান অঙ্গ হল “লাভ জিহাদ” । ভারতে এই বিশেষ ‘জিহাদ’ খুব সন্তর্পণে চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠলেও বাংলাদেশে তা প্রকাশ্যে চলছে । প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছাড়া হওয়ার পর থেকে কার্যত মহামারীর আকার নিয়েছে বাংলাদেশের “লাভ জিহাদ” । সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসছে হিন্দু তরুণীর প্রেমের ফাঁদে পড়ে ধর্মান্তরিত হওয়ার ঘটনা ।
‘বাংলাদেশ হিন্দু জাগরণ মঞ্চ’ নামে একটা সংগঠনের ফেসবুক পেজে এমন বহু লাভ জিহাদের ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে । পেজটির অন্যতম অ্যাডমিন আকাশ দীপ বাংলাদেশের কালীগঞ্জ জেলার গাজীপুরে চাঁদনী সাহা নামে এক তরুনীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলার অভিযোগ তুলেছেন মারুফ নামে এক মুসলিম যুবকের বিরুদ্ধে । তিনি জানিয়েছেন,চাঁদনী সাহা কালীগঞ্জ সরকারি কলেজের ছাত্রী । মুসলিম যুবক মারুফের সাথে অনেক দিন ধরে প্রেম করছে। এমনকি কিছুদিনের ভিতর ধর্মান্তরিত করার পরিকল্পনা ও করছে । তিনি আরও লিখেছেন,এই মেয়ের সকল অপকর্মের প্রমাণ আমাদের হাতে এসেছে ।
মনীষা চৌধুরী নামে এক ব্যবহারকারী জানিয়েছেন, সিলেটের দিরাই,সামারচরের বাসিন্দা অনুরাধা অনু নামে একজন হিন্দু তরুনী মোহাম্মদ মুন্না নামে এক মুসলিম যুবকের সাথে প্রেম করছে । এমনকি মেয়েটি টিকটকে নিজের নাম রেখেছে ফাতেমা । মেয়েটি দিরাই সরকারি কলেজে পপড়াশোনা করে । গলায় তুলসীর মালা দেয়, কপালে তিলক লাগায় দেখতে পুরো ধার্মিক। কিন্তু প্রেম করে একটা মুসলিম ছেলের সাথে । তিনি আরও লিখেছেন,মেয়েটাকে এই মুসলিম ছেলে এমন ভাবে ব্রেন ওয়াশ করেছে যে মেয়ে এখন নিজের ধর্ম ভুলে গিয়ে নামাজ পড়া শুরু করে দিছে। সে যেকোনো সময় পালাবে ওই ছেলের সাথে।
মেয়েটিকে লাভ জিহাদের হাত থেকে বাঁচাতে তিনি আবেদন জানিয়েছেন,তাই সিলেটের যারা আছেন তারা একটু ওর পরিবারের খোঁজ নিন, আর আমাদের তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দিন। তার বাবা মায়ের ছবি দেওয়া আছে।
পূজন ঘোষ নামে এক ব্যবহারকারী এক হিন্দু তরুনীর ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলিম প্রেমিককে নিকাহ করার খবর জানিয়ে লিখেছেন,সুস্মিতা দেব নামক এই মেয়েটির বিরুদ্ধে তার পিতা মাতা প্রতারণা মামলা তো করতেই পারে। আইন বিশেষজ্ঞ দের মতামত জানতে চাই। ছোট বেলা থেকে কষ্ট করে বড় করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত এনেছে এখন তার মা বাবার কোন অধিকার নেই? ভালো কথা মেয়েটির বিরুদ্ধে আর্থিক ক্ষতিপূরণ এর মামলা করে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করা উচিৎ দেখি বিষয় টি কোন পর্যন্ত যায়। মেয়েটির পরিবারের সাথে যোগাযোগ করা দরকার।’ ওই তরুনীর পোস্ট করা একটা ভিডিও শেয়ার করেছেন পূজন ঘোষ । ভিডিওতে তরুনীকে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলতে শোনা গেছে । তরুনীকে বলতে শোনা যায়,’আমি সাবালিকা এবং নিজের জীবন নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার আছে । আমি নিকাহ করেছি । কিন্তু আমায় বিরক্ত করছে হিন্দুরা । দয়া করে আমাকে আমার মত থাকতে দিন । সহযোগিতা করুন ।’
শ্রী হিমেল মিস্ত্রি নামে একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘লাভ জিহাদ’, মেয়েটির নাম বিন্টি মিত্র(Binti Mitro) । বাড়ি স্বরূপকাঠি । বর্তমানে বরিশাল থাকে। বরিশাল পলিটেকনিকে পড়াশোনা করে। প্রেমিকের নাম মহম্মদ জালিস মেহমুদ(md jalish Mahmud ) । দু’জনে ক্লাসমেট । তাদের রিলেশন অনেক গভীরে চলে গেছে । তারা সপ্তাহে ২ বার করে রুমডেট করে ৷ আর মেয়েটি খুব দ্রুত মুসলিম হতে চলেছে। তার রুমডেটের ভিডিও রেখে ছেলেটি মেয়েটিকে মুসলিম বানানোর জন্য ব্লাকমেলিং করছে অনেক দিন ধরে৷’ তিনি মেয়েটির ফেসবুক আইডিও শেয়ার করেছেন ।
‘ধর্ম ব্যঞ্জন’ নামে এক ব্যবহারকারীর খেদোক্তি, ‘৫ আগস্টের পর ধর্মান্তরকরণ ব্যাপক ভাবে বেড়েছে৷ এটা ভান্ডারিয়া পৌরসভার ঘটনা ৷ তিন শ্রেণিকে টার্গেট করা হয়েছে৷ একদিকে তরুণী মেয়ে, অন্যদিকে নাবালক ও তরুণ ছেলে এবং এদের মাধ্যমে বা স্বতন্ত্র ভাবে দরিদ্র ও অল্প শিক্ষিত মানুষকে, একদিকে মগজ ধোলাই অন্যদিকে টাকাপয়সার লোভ দেখিয়ে। আগে যেটা রয়েসয়ে হত৷ এখন সেগুলো প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে করছে৷ এই তিন শ্রেণির হিন্দুদের প্রতি লক্ষ্য রাখুন, তাদের খোঁজখবর নিন। তাদের আশেপাশে দাওয়াতি ফেউ ঘোরাঘুরি করছে কি না দেখুন৷’
প্রসঙ্গত,বাংলাদেশে অচলাবস্থার জেরে সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত সেখানকার হিন্দুরা। মন্দিরে হামলা, বাড়িতে ভাঙচুর,খুন,মেয়েদের অপহরণ-ধর্মান্তরিত করার পর মুসলিম ব্যক্তির সাথে নিকাহ করতে বাধ্য করার অগনিত ঘটনা ঘটে চলেছে । যেকারণে বহু হিন্দু ভারতে পালিয়ে আসতে চাইছে । কিন্তু সীমান্তে কড়াকড়ির কারনে তারা আসতে পারছে না ।
বাংলাদেশে হিন্দুদের সংখ্যা কত? ১৯৭১ সাল থেকে কত হিন্দু দেশছাড়া হয়েছেন? সেই পরিসংখ্যান দেখলে বোঝা যাবে হিন্দুরা কত বেশি মুসলিমদের দ্বারা অত্যাচারিত ।
শেখ হাসিনার সময়কালে সর্বশেষ জনগননা অনুযায়ী বাংলাদেশে হিন্দুদের বর্তমান মোট জনসংখ্যা প্রায় ৭.৯৭ শতাংশ। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি। অর্থাৎ হিন্দু বসবাস করেন ১.৩৫ কোটি।তবে ক্রমাগত জিহাদি হামলার ফলে হিন্দুদের জনসংখ্যার উপর প্রভাব পড়ছে। গত কয়েক বছরে জিহাদি হামলা বেড়েছে। তথ্য অনুযায়ী, ১৯৫১ সালে বাংলাদেশে হিন্দুদের জনসংখ্যা ছিল প্রায় ২২ শতাংশ। তারপর থেকে হিন্দুদের জনসংখ্যা কমতে থাকে। জামাত ইসলামির মতো জঙ্গি সংগঠনগুলো হিন্দুদের উপর নির্মম অত্যাচার করেছে। হিন্দুরা অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় স্তরে হয়রানির শিকার হয়েছে, যার কারণে বিপুল সংখ্যক মানুষ বাংলাদেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। কয়েকটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, আগামী তিন দশকের মধ্যে বাংলাদেশে হিন্দুদের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হবে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে তৈরি হওয়া বাংলাদেশ ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর নিজেকে ধর্মনিরপেক্ষ, সমাজতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে ঘোষণা করে। কিন্তু বেশিদিন ধর্মনিরপেক্ষ থাকতে পারেনি। ১৯৮৮ সালে সেই ইসলামিক দেশ হিসেবে ঘোষণা করে বাংলাদেশ। ফলে বহু হিন্দু সেই সময় বাংলাদেশ ছাড়়তে বাধ্য হয়।
আবার ২০১১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে ভেস্টেড প্রপার্টি অ্যাক্ট চালু ছিল। এর অর্থ শত্রুর সম্পত্তি দখল করার অধিকার ছিল সরকারের। এই আইনের খেসারত মূলত হিন্দুদের দিতে হয়। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি হিন্দু পরিবার এই আইনের জন্য সঙ্কটে পড়েছিল। এই আইনে বর্তমানে কিছু সংশোধন করা হয়। তবে হিন্দুরা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে নিশ্চিত হতে পারেনি।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ থেকে ভারতে লাখ লাখ শরণার্থী এসেছিলেন। তারপর থেকে ভারতে বাংলাদেশি শরণার্থীদের নিয়ে বিভিন্ন দাবি উঠেছে। ২০০৪ সালে ইউপিএ সরকার দাবি করে, প্রায় ১২ লক্ষ বাংলাদেশের নাগরিক অবৈধভাবে ভারতে বসবাস করছে। ২০১৬ সালে সেই সংখ্যা বলা হয় ১৬ থেকে ২০ লক্ষ। ২০১৮ সালে প্রায় ৪০ লাখ বলে সরকারের তরফে দাবি করা হয়। এখন বাংলাদেশ ইসলামি জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির হাতে চলে যাওয়ার পর ফের হিন্দুরা সেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে আসতে চাইছেন।।