এইদিন ওয়েবডেস্ক,বাংলাদেশ,২৪ জুন : ইসলামি রাষ্ট্র বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের জীবন এখন চরম অনিশ্চয়তার মুখে । প্রতি দিন হিন্দু দেবদেবীদের নিয়ে কুকথা বলে ও মন্দির-মুর্তি ভাঙচুর করে পার পেয়ে যায় সেদেশের ইসলামি মৌলবাদীরা । কিন্তু ইসলামের নবী সম্পর্কে তাদের ধর্মপুস্তকের উদ্ধৃতি দিয়ে কোনো কথা বললেই মৌলবাদীদের রোষের মুখে পড়তে হচ্ছে হিন্দুদের । বাংলাদেশের লালমনিরহাট (Lalmonirhat) জেলার ঘোষালা বাজারের (Ghosala Bazar) পেশায় নরসুন্দর ৭০ বছরের বৃদ্ধ পরেশ শীলকে ইসলামের নবিকে নিয়ে কটুক্তির মিথ্যা অভিযোগে রবিবার নির্মমভাবে মারধর করেছে মুসলিম জনতা । বাবাকে বাঁচাতে গিয়ে ধর্মোন্মাদদের হাতে ব্যাপক মার খেতে হয়েছে বৃদ্ধের ৩৩ বছর বয়স্ক ছেলে বিষ্ণু শীলকেও । ওই হতভাগ্য পিতাপুত্র বিনা অপরাধে বর্তমানে বাংলাদেশের কারাগারে রয়েছেন । যদিও বৃদ্ধ পরেশ শীলের পরিবারের দাবি,মসজিদের ইমাম আব্দুল আজিজ চুলদাড়ি কাটার পর তার কাছে পারিশ্রমিকের মাত্র ১০ টাকা চেয়েছিলেন পরেশবাবু৷ আর তার এই অপরাধের জন্য ইমাম আব্দুল আজিজ এলাকায় রটিয়ে দেয় যে ওই হিন্দু বৃদ্ধ তাদের নবীকে অপমান করেছে ।
এদিকে লালমনিরহাট সদর থানার জিহাদি ওসি নুরনবী মিঁয়া ক্যামেরার সামনে ভাষণ প্রকাশ্যে এসেছে । রীতিমতো কট্টরপন্থী মৌলানার মত বক্তব্য রেখে সে তার সম্প্রদায়ের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছে যে বৃদ্ধ পরেশ শীল ও তার ছেলে বিষ্ণু শীলকে সে ফাঁসিতে ঝোলাবে।
জিহাদি ওসি নুরনবী মিঁয়ার ভিডিওটি এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে । ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা গেছে,’ওসি হিসেবে আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্ব আমার । কিন্তু যে ঘটনা ঘটেছে সেটা আমারও কলিজায় আগুন লেগেছে। আপনাদের মত শোকের পানি আমারও এসেছে । কিভাবে এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করে ? আমি আপনাদেরকে ওয়াদা দিলাম… আমি তাকে এরেস্ট করেছি… আমি তাকে এমন মামলা দেবো নিশ্চিত তার যেন যাবজ্জীবন অথবা ফাঁসি হয়।’
শুনুন ওসি নূরনবি মিঁয়া ও বৃদ্ধ পরেশ শীলের পরিবারের বক্তব্য 👇
প্রসঙ্গত,লালমনিরহাট জেলার ঘোষালা বাজারের হানিফ পাগলার মোড় এলাকায় পেশায় নরসুন্দর পরেশ শীলের একটি সেলুন রয়েছে । ঘটনাটি ঘটে গত শুক্রবার । পরেশ শীলের সেলুনে চুলদাড়ি কাটতে গিয়েছিল স্থানীয় নামাটারি আল-হেরা জামে মসজিদের ইমাম আব্দুল আজিজ । সে বৃদ্ধ পরেশ শীলকে ইসলামের দাওয়াত দিয়েছিল। কিন্তু পরেশবাবু বিনম্রভাবে তা প্রত্যাখ্যান করেন । তারপরেও নাছোড় আব্দুল আজিজ বৃদ্ধকে ধর্ম সম্পর্কে উসকানিমূলক বিভিন্ন প্রশ্ন করতে থাকে । বৃদ্ধ পরেশ চন্দ্র রায় আব্দুল আজিজের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন তার নিজের মত করে । যখন আব্দুল আজিজ দেখলো যে এই বৃদ্ধকে ইসলামে আনা সম্ভব নয়, তখন সে এলাকায় প্রচার করে দেয় যে বৃদ্ধ পরেশ শীল তাদের নবী মোহাম্মদকে “সাঃ” বলেনি । এই হিন্দু মুনাফেক ইসলামের অবমাননা করেছে ।
এরপর রবিবার সকালে নামাজের পর স্থানীয় মুসলিম ধর্মোন্মাদের দল পরেশবাবুর সেলুনে হামলা চালায় । তাকে সেলুন থেকে টেনে বের করে রাস্তায় এনে নির্মমভাবে লাথি-চড়-ঘুষি মারে । বাবাকে বাঁচাতে ছুটে আসেন বিষ্ণু শীল । তাকেও ব্যাপক মারধর করা হয় । এরপর পুলিশ এসে পিতাপুত্রকে থানায় নিয়ে যায় । সেখানেও পিছু ধাওয়া করে মুসলিম জনতা । কিন্তু থানাতেও জিহাদি পুলিশের হাত থেকে রেহাই পায়নি হিন্দু পিতাপুত্র । জিহাদি ওসি নুরনবী মিঁয়া দু’জনকে থানায় লাঠি দিয়ে নির্মমভাবে মারধর করে ।
পরে থানা চত্বরে উপস্থিত পরিবারের লোকজন ও হিন্দু প্রতিবেশীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে নূরনবী মিঁয়া বলে, ‘দাড়ি নিয়ে মন্তব্য করেছে, তাও ৯০% মুসলমানের দেশে । এত বড় সাহস ? এই দেশটা মুসলমানদের, কোনো হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানদের নয় । এই দেশে ইসলাম পরিপন্থী কোনো মন্তব্য বরদাস্ত করা যাবে না। এই কথা মাথায় রেখে বিধর্মীদের চলতে হবে ।’ এমতবস্থায় নিরীহ হিন্দু সন্নাসী চিন্ময় কৃষ্ণ ব্রহ্মচারীর মতই ওই হতভাগ্য হিন্দু পিতাপুত্রকে করুণ পরিণতির মুখে পড়তে হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে ।
পরেশ শীলের পুত্রবধূ দীপ্তিরানী রায় বলেন, আমার স্বামী এবং শ্বশুরের ঘোষালা বাজারে দোকান রয়েছে । আমি আজকে ননদকে সাথে নিয়ে স্বামী ও শ্বশুরকে দেখতে জেলে গিয়েছিলাম । আমি জেলে যাওয়ার পর জিজ্ঞেস করলাম আসল ঘটনাটা কি হয়েছে ? তখন আমার শ্বশুর উত্তর দিলেন যে “মা, কিছুই হয়নি সামান্য ১০ টাকার কারণে এত কিছু হয়ে গেছে” । আমি ওই ছেলেটার( ইমাম আব্দুল আজিজ) কাছে আমার পারিশ্রমিকের টাকা চেয়েছিলাম মাত্র । কিন্তু সে টাকা দিতে অস্বীকার করে । আর টাকা চাওয়ার অপরাধের কারণেই এতকিছু ঘটনা ঘটে গেল । শেষে সে দোকান থেকে যাওয়ার সময় আমাকে হুমকি দিয়ে যায় যে আপনাকে দেখে নেব” ।’
দীপ্তিরানী বলেন,’আমি কিছু আর বলতে চাই না । শুধু দর্শকদের কাছে একটাই অনুরোধ করে যাই আমার স্বামী এবং শ্বশুরের উপরে যে নির্যাতন হয়েছে তার সুষ্ঠু বিচার চাই৷’ এরপর তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন । পাশেই ছিলেন তার শাশুড়ি । তিনি ও কান্নায় ভেঙে পড়েন ।।

